আগাম এ পার্লামেন্ট নির্বাচনকে স্বাধীনতার প্রশ্নে 'ছায়া গণভোট' হিসেবে দেখা হচ্ছে

স্পেনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শিল্পাঞ্চল কাতালোনিয়ায় আজ রবিবার পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। তবে আগাম এ নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য নতুন আঞ্চলিক সরকার কাঠামো নির্ধারণ নয়। বরং পৃথক স্বাধীন কাতালোনিয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ক্ষেত্র তৈরিই এর লক্ষ্য।
ক্ষমতাসীন দল জিতলে এ নির্বাচনের পরই স্পেন থেকে স্বাধীন হওয়ার প্রশ্নে গণভোট হবে। বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট আর্তুর মাসের নেতৃত্বাধীন জোটই নির্বাচনে এগিয়ে থাকবে।
যদিও কাতালোনিয়ার এ উদ্যোগ মোটেই পছন্দ নয় কেন্দ্রীয় সরকারের। এ ধরনের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে তারা। কাতালোনিয়ার আলাদা হয়ে যাওয়ার হুমকি কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয়কে গুরুতর সমস্যায় ফেলবে। এমনিতেই মন্দায় জর্জরিত স্পেনের অর্থনীতিকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। সেখানে বেকারত্বের হার এখন ২৫ শতাংশ।
৭৫ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত কাতালোনিয়ায় পার্লামেন্টের আসন সংখ্যা ১৩৫টি। স্প্যানিশ দৈনিক এল পাইস পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, মাসের জাতীয়তাবাদী জোট ৬০ থেকে ৬৪টি আসন পেতে পারে। অর্থাৎ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী রাহয়ের দল ও বিরোধী সমাজাবাদী পার্টি দ্বিতীয় অবস্থানের জন্য লড়বে।
নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক পার্লামেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল আরো দুই বছর পরে। কিন্তু স্বাধীনতার দাবি জোরালো করতেই আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন মাস। কাতালোনিয়ার প্রধান শহর বার্সেলোনায় গতকাল শনিবার আয়োজিত শেষ নির্বাচনী জনসভায় মাস সমর্থকদের প্রতি 'স্বাধীনতার নির্মাতা' হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'ইউরোপের প্রাচীনতম জাতিগুলোর একটি কাতালোনিয়া। ইতিহাস বলছে, আমরা বহুবার সেনাবাহিনী-স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়েছি, কখনো হারিনি। আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি শেষ হয়ে যায়নি।'
এর আগে মাস দাবি করেন, কাতালানরা প্রতিবছর কেন্দ্রকে বিপুল পরিমাণ কর দেয়। সে তুলনায় এ স্বায়ত্তশাসিত এলাকা পরিচালনার জন্য মাদ্রিদের (স্পেনের রাজধানী) কাছ থেকে পর্যাপ্ত অর্থ পায় না তারা। তাঁর হিসাবে প্রতিবছর এক হাজার ৬০০ কোটি ইউরো তারা মাদ্রিদে পাঠায়। কাতালোনিয়ার জাতীয় দিবসে গত ১১ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রের কাছ থেকে মাস কর ব্যবস্থাপনার আরো ব্যাপকতর ক্ষমতার দাবি জানান। তবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দাবি নাকচ করে দেন। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই আগাম নির্বাচনের ডাক দেন মাস।
কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার দাবি অবশ্য আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। এ অঞ্চল স্পেনের অংশ পনের দশক থেকে। নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে গর্বিত কাতালানরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ঊনবিংশ শতাব্দিতে। ১৯৩১ সালে স্পেন প্রজাতন্ত্র হওয়ার পরপরই তাদের স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়। তবে স্বৈরাচারি ও কট্টরপন্থী ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো ক্ষমতা নেওয়ার পর বড় ধাক্কা খায় কাতালানরা। তাদের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেওয়া হয়। শুরু হয় তাদের জাতীয়তাবাদ দমনের চেষ্টা, কাতালান ভাষার ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়। ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর পর পরিস্থিতি ফের পূর্বাবস্থায় ফেরে। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.