ওবামার পক্ষে কেটি পেরি, স্কারলেট জোহানসন রমনির সমর্থনে জেনা জেমসন

আর বাকি আজকের দিন। এরপরেই আগামীকাল  যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এরই মধ্যে গতকালই বারাক ওবামা ও মিট রমনির প্রচারণায় ইতি টানার কথা। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ওবামার ডেমোক্রেট শিবির এবং মিট রমনির রিপাবলিকান শিবিরে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আর বাকি বিশ্ব সেদিকে তাকিয়ে আছে কে হন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। বারাক ওবামা ও মিট রমনি দু’প্রার্থীই বিভিন্ন জনমত জরিপে জনপ্রিয়তায় খুব কাছাকাছি অবস্থান করছেন। তবে যেসব সুইং রাজ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলোর বেশির ভাগে আগাম ভোটে দৃশ্যত এগিয়ে আছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ৩৪টি রাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় এরই মধ্যে ২ কোটি ৭০ লাখের বেশি ভোটার তাদের ভোট দিয়েছেন। তবে নির্বাচনের দিনের আগে সে ভোট গণনা করা হবে না। নির্বাচনী প্রচারণায় শেষ মুহূর্তে ওবামার পক্ষে মাঠে নেমেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। তিনি ভার্জিনিয়াতে ওবামার সঙ্গে প্রচারণায় যোগ দেন। এ সময় তাকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। তিনি বললেন, আমি আমার প্রেসিডেন্টের পক্ষে কথা বলতে এসেছি। ওবামাকে সমর্থন করে সমাবেশে সংগীত পরিবেশন করেছেন জনপ্রিয় পপ তারকা কেটি পেরি। ওবামাকে সমর্থন করেছেন আবেদনময়ী স্কারলেট জোহানসন, জাজ-বিয়োন্সে নোয়েলস, জর্জ ক্লুনি, সামুয়েলস এল জ্যাকসন প্রমুখ তারকা। অন্যদিকে মিট রমনিকে সমর্থন জানিয়েছেন মিট লোফ, পর্নো তারকা জেনা জেমসন, কিড রক, রবার্ট ডুভাল প্রমুখ তারকা। যে যত সমর্থনই দিন এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন মার্কিন জনগণ। তা জানার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে অন্তত দুটি দিন। অনলাইন বিবিসি জানিয়েছে, দু’প্রার্থী নির্বাচনী দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া শেষ করার পর এখন সেই চূড়ান্ত রায় জানতে অপেক্ষায় আছেন। গতকাল শেষ বারের জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর কথা নিউ হ্যাম্পশায়ার, ফ্লোরিডা, ওহাইও ও কলোরাডোতে। আর মিট রমনির প্রচারণা চালানোর কথা আইওয়া, ওহাইও, পেনসিলভানিয়া ও ভার্জিনিয়ায়। শনিবার তারা দু’জনেই সুইং রাজ্যগুলোতে প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে এবিসি/ওয়াশিংটন পোস্টের জনমত জরিপে দেখা গেছে দু’প্রার্থীই শতকরা ৪৮ ভাগ জনসমর্থন পেয়েছেন। সময় যত ফুরিয়ে আসছে ওবামা ও রমনি দু’জনকেই তত ক্লান্ত দেখাচ্ছে। কারণ, দীর্ঘ এই প্রচারণায় তাদের কোন বিরতি ছিল না। এক রাজ্য থেকে ছুটে যেতে হয়েছে আরেক রাজ্যে। তারা শেষ মুহূর্তে ছুটে গেছেন সেই সিদ্ধান্ত নির্ধারণী সুইং রাজ্যগুলোতে। ভার্জিনিয়ার যে জনসমাবেশে ওবামার প্রচারণায় বিল ক্লিনটন গিয়েছিলেন সেখানে ওবামা প্রায় ২৪ হাজার ভোটারের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, আমার কাছে কোন ক্ষমতা নেই। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আপনাদের কাছে। স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে। এখন ক্ষমতার মালিক আপনারা। গণতন্ত্র এমনই হয়। এই রাজ্যের মিলওয়াউকির র‌্যালিতে অংশ নেন পপ তারকা কেটি পেরি। এ সময় তিনি বিশেষ ধরনের একটি পোশাক পরেন। তাতে ডেমোক্রেটদের স্লোগান ‘ফরওয়ার্ড’ লেখা ছিল। তাকে নিয়ে জমে ওঠে ২০ হাজার মানুষের উল্লসিত প্রচারণা। শনিবার নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রচারণা চালিয়ে মিট রমনি কড়া সমালোচনা করেন প্রেসিডেন্ট ওবামার। তিনি বলেন, দেশকে ভালবেসে ভোট দিন। এখন সময় এসেছে আমেরিকাকে উন্নততর অবস্থানে নিয়ে যেতে আমাদের নেতৃত্ব দেয়ার। ওদিকে, ২০০৮ সালের মার্কিন নির্বাচনে বারাক ওবামাকে হোয়াইট হাউসে পৌঁছে দিতে নারী ভোটাররা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে সমপ্রতি বিভিন্ন জরিপে তাদের নিরুৎসাহ মনোভাব আগামীকালের নির্বাচনে কাকে জয়ী হতে নারীদের ভোট বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে সেটা নিয়ে এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। চার বছর আগে প্রতিপক্ষ জন ম্যাককেইনের বিরুদ্ধে ওবামাকে জয়ী হতে ৫৬ ভাগ নারী সমর্থন দিয়েছিলেন। আর ৪৩ ভাগ নারীর সমর্থন ছিল রিপাবলিকান জন ম্যাককেইনের প্রতি। পুরুষদের ক্ষেত্রে ওবামার সমর্থন ছিল ৪৯ ভাগ আর ম্যাককেইনের সমর্থন ছিল ৪৮ ভাগ। কিন্তু এবার ওবামার জন্য নারীদের উৎসাহে ভাটা লক্ষ্য করা গেছে। এতে তার পুনঃনির্বাচিত হওয়ার নির্বাচনী বৈতরণী কিছুটা বন্ধুর হয়ে উঠেছে। নারী ভোটারদের কাছে বারাক ওবামার জনপ্রিয়তা এবার গতবারের তুলনায় কিছুটা কম। তবে অনেক জাতীয় জরিপেই রিপাবলিকান মিট রমনির চেয়ে এগিয়ে আছেন বারাক ওবামা। গত ৩রা অক্টোবর প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে ওবামার শক্ত অবস্থানের পর নারীদের সমর্থন রিপাবলিকান রমনির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ফ্লোরিডার মার্গারেট হানসিঙ্গার এখনও কাকে ভোট দেবেন সে সিদ্ধান্ত নেননি। তবে তিনি বলেছেন, ওই বিতর্কের পর তিনি রমনির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। ৫৯ বছরের আত্মস্বীকৃত হোমমেকার মার্গারেট বলেছেন, আমি রমনির ব্যাপারে বেশ সন্দিহান ছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল তিনি বেশ প্রেসিডেন্টসুলভ আচরণ করছেন এবং তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য। তিনি যেসব জবাব দিয়েছেন তার সঙ্গে আমি একমত। আর ওবামার সম্পর্কে তিনি বলেছেন, বিতর্কের সময় মনে হচ্ছিল তিনি যেন ঘুমাচ্ছেন। সেখানে যেন উপস্থিতই ছিলেন না। রমনি পক্ষ ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলছে, জন্ম বিরতিকরণের মতো বিভিন্ন ইস্যুতে জোর দিয়ে তারা নারীদের মন জয়ের চেষ্টা করছে। 
 তবে জরিপে দেখা যাচ্ছে, ভোটাররা এবার সবাই কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতির ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন। ডেমোক্রেটরা অবশ্য দাবি করছেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেটগুলোতে নারী ভোটারদের ক্ষেত্রে ওবামা এখনও এগিয়ে আছেন। নারীদের ভোটই ওবামার জয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করবে বলে তারা মনে করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইলেক্ট্রোরেটদের মধ্যে অর্ধেক হচ্ছেন নারী। আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুরুষদের চেয়ে ৭ ভাগ বেশি নারী ভোট দিয়ে থাকেন। ডেমোক্রেটরা জোর দিয়ে বলছেন, নারী ভোটারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইস্যুতেই জোর দেয়ার প্রশ্নে ওবামা রমনিকে ছাড়িয়ে গেছেন। এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে শিক্ষা, সমমজুরি এবং যৌক্তিক কর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ফ্লোরিডার ইভলিন মিরান্ডা (৪৭) বলেছেন, তিনি এখনও কাকে ভোট দেবেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেননি। তবে তিনি সমপ্রতি ওবামার প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি ওবামার সামাজিক ইস্যু এবং সম্পদশালীদের বেশি কর দেয়ার পক্ষে অনড় অবস্থানের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন তিনি (ওবামা) চাইছেন যারা বেশি অর্থ উপার্জন করছেন তারা বেশি কর দিক। এ জন্য আমি তাকে সমর্থন করছি। পেশায় চিত্রশিল্পী এবং শিক্ষক মিরান্ডা বলেছেন, রিপাবলিকানরা হয়তো গর্ভপাত নিষিদ্ধ করতে পারে। এ নিয়ে তিনি বেশ শঙ্কায় আছেন। নারীদের মধ্যে ওবামার সমর্থনের সংখ্যা যে ২০০৮ সালের তার নিজের অবস্থানের চেয়ে নিচে নেমে গেছে কেবল তাই নয়, ২০০০ সালে আল গোরের প্রতি নারীদের সমর্থনের অবস্থার চেয়েও নেমে গেছে। তৎকালীন ডেমোক্রেটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর পপুলার ভোটে সামান্য ব্যবধানে জিতে গেলেও ইলেক্ট্রোরাল কলেজে রিপাবলিকান জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এ বছরের নির্বাচনে নারী-পুরুষের সমর্থনের তফাতের প্রতি নজর রাখা টাফটস ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রিচার্ড এইচেনবার্গ বলেছেন- ওবামা পক্ষ জাতীয় ভাবে নারী ভোটারদের সমর্থন প্রত্যাশা করবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি মনে করছেন জাতীয় ভাবে ওবামা নারী ভোটারদের সমর্থনের প্রশ্নে ৮ ভাগ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। এছাড়া, ইলেক্ট্রোরাল ভোট পেতে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত স্টেটগুলোতে ওবামার প্রতি নারীদের সমর্থন এখনও জোরালো রয়েছে। এইচেনবার্গ বলেন- সবগুলো সুইং স্টেটেই ওবামা ভার্চুয়ালি বেশ ভালো ব্যবধানে নারীদের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছেন। উদাহরণ হিসেবে এইচেনবার্গ বলেন- ওহাইওতে অক্টোবরের জরিপে নারীদের সমর্থনে ওবামা ১২ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন। ডেনভারে প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের পর রমনির প্রতি সমর্থন বেশ জোরালো হয়ে উঠে। দুজনের মধ্যে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কের পূর্বে ওবামা বেশ এগিয়েছিলেন। কিন্তু বিতর্কের পর বিভিন্ন জরিপে রমনি এগিয়ে গেছেন। ওই বিতর্কের ঠিক আগে শেষ হওয়া ৩০ সেপ্টেম্বরের রয়টার্স/ইপসস জরিপে দেখা গিয়েছিল রমনির (৪১ শতাংশ) চেয়ে ওবামা (৫২ শতাংশ) এগিয়ে ছিলেন। পুরুষ ভোটারদের জরিপেও তিনি ৪৭/৪৪ শতাংশে এগিয়ে ছিলেন। গত সপ্তাহের রয়টার্স/ইপসস জরিপের তথ্যে দেখা গেছে, নারীদের সমর্থনের ক্ষেত্রে ওবামা (৪৮ শতাংশ) রমনির (৪৪ শতাংশ) থেকে এগিয়ে রয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.