পাঠকের মন্তব্য: অনলাইন থেকে- বাংলাদেশ আরও মনোযোগ দাবি করে

অনলাইনে প্রথম আলো (prothom-alo.com) পড়া হয় ১৯০টি দেশ থেকে। পড়ার পাশাপাশি পাঠকেরা প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত দেন। তাঁদের এ মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের।


গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।

পদ্মা সেতু নিয়ে নতুন জটিলতা
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে নতুন করে যে জটিলতা শুরু হয়েছে, তারই বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। এ সম্পর্কে পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় মিশে ছিল হতাশা। পাঠক মঞ্জুর এলাহি লিখেছেন: পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের সদিচ্ছা আসলেই এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। এভাবে কথা দিয়ে কথা না রেখে বিশ্বব্যাংকের আস্থা হারালে শুধু পদ্মা সেতু কেন, ভবিষ্যতে অন্য কোনো প্রকল্পেও ঋণসুবিধা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে।
পলাশ গোলদার: সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের গণমানুষের দাবি, পদ্মা সেতু চাই। অনেক আশায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ তাকিয়ে ছিল হয়তো বা একদিন পদ্মা সেতু হবে। কিন্তু কোনো সরকারই এই জনগুরুত্বপূর্ণ সেতু নিয়ে কাজ করেনি।
কামাল: আমি খেয়াল করেছি, প্রধানমন্ত্রী দেশে না থাকলেই একটা না একটা বিষয় নিয়ে পরিস্থিতি জটিল করা হয়। দুই দিন আগেও দেখলাম, মসিউর রহমানকে কী কী কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হলো। আবার এই লোককে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংক ও সরকারের কাছে ১৬ কোটি মানুষ বড়, না মসিউর বড়—তাই বুঝি না। ১২০ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে ভাবটা নিচ্ছে তাতে মনে হয়, সারা দুনিয়ার নীতি-নৈতিকতা শুধু তারাই জানে। অথচ মিয়ানমারে যখন অসহায় লোকদের ওপর অবিচার হচ্ছে, তখন তারা নতুনভাবে তাদের ঋণ দিচ্ছে। আবার শোনা যায়, মসিউর রহমানও ছুটি নিয়ে আমেরিকা গিয়ে বসে ছিলেন। এঁরা আমাদের দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে আসলে কী করতে চান?

অকার্যকর রাজনীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ উন্নতি করছে
অকার্যকর রাজনীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে বলে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ১৯৯০-পরবর্তী বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে দ্য ইকোনমিস্ট-এর এই প্রতিবেদন নিয়ে পাঠকের প্রতিক্রিয়াও ছিল মিশ্র। মিলন লিখেছেন: ১৯৯০ সালের কথা, আমার ছোট ভাই পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে। আমরা সবাই খুব খুশি। পেপারে ছবি ছাপা হলো। সে এক মহা হুলুস্থুল কাণ্ড। আমার সেই ছোট ভাই মহানন্দে লেখাপড়া শিকোয় তুলে ঘুরে বেড়াতে লাগল। আমরা সবাই বললাম, সামনে তোমার জিলা স্কুলে (জিলা স্কুলে তখন এক সিটের বিপরীতে ১০ জন পরীক্ষা দিত) ষষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা, ভালো করে পড়ো। তার এক কথা, যে প্রথম হয় তার পড়তে হয় না। ব্যস হয়ে গেল, জিলা স্কুলে চান্স পেল না। আমরা পাড়ার মানুষের কাছে জবাব দিতে পারি না, কারণ কী? সবাই ভাবছেন, এই খবরের সঙ্গে গল্পের কী সম্পর্ক? আমার ছোট ভাইয়ের চরিত্রের সঙ্গে সরকারের মিল খুব শিগগির খুঁজে পাবেন।
মো. হাসান খান: বাংলাদেশকে নিয়ে দ্য ইকোনমিস্ট-এর অবস্থান পরিবর্তনকে আমি স্বাগত জানাই। আর আমার সঙ্গে দেখা হওয়া হাজারো বিদেশিকে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ আরও মনোযোগ দাবি করে।
ইসহাক: ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দল গঠনের সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াকে প্রতিবেদনে ‘সোনার ডিম দেওয়া হাঁসকে হত্যা’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। শতভাগ সত্য। এ ঘটনার জন্য আমরা সাধারণ জনগণ অনেক দায়ী। আমরা যদি ওই সময় ড. ইউনূসকে সমর্থন দিতাম, তা হলে আজ এসব নেতা-নেত্রীর গলাবাজি আর দুর্নীতি সহ্য করতে হতো না।

খালেদার অবস্থান পরিবর্তনে দিল্লির ‘সতর্ক’ আশাবাদ
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থানের পরিবর্তন সম্পর্কে দিল্লির অবস্থানের বিস্তারিত বিবরণ নিয়েই এ খবর। এ সম্পর্কে পাঠকের মন্তব্যও ছিল দ্বিমুখী। পাঠক মাহতাব হোসেন লিখেছেন: বাংলাদেশ আর ভারত দুই দেশ একসময় একই ভারতবর্ষের অংশ ছিল। উভয় দেশের মানুষ মোটামুটি একই নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর। আর এ দেশ-ও দেশের বহু মানুষ রক্ত-সম্পর্ক ও আত্মীয়তার সূত্রে বাঁধা। স্বাধীনতার সময় যে কারণেই হোক, ভারত বাংলাদেশকে যুদ্ধে সরাসরি সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তার পরও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের টেকসই ও বিশ্বাসনির্ভর বন্ধুত্ব কেন গড়ে উঠছে না, তা উভয় দেশেরই ভেবে দেখা দরকার। বাংলাদেশ হয়তো একসময় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থাটা আর নেই। তা ছাড়া ভারতের আবদার ‘ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্ট’ ও বন্দর ব্যবহারের সুবিধা বাংলাদেশ কমবেশি দিচ্ছে। কিন্তু ভারতের তরফ থেকে তো বাংলাদেশ তার ‘অধিকার’ অভিন্ন নদ-নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না, সীমান্ত চিহ্নিতকরণ ও ছিটমহল বিনিময়ের মতো মানবিক কার্যক্রমে ভারতের তেমন একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। বারবার কথা দেওয়ার পরও বিএসএফ বাংলাদেশি লোকজন হত্যা করেই যাচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ভারসাম্য সৃষ্টির উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ ভারতের দিক থেকে নেই। এ ছাড়া আরও বহু সমস্যা ভারতের দিক থেকেই জিইয়ে রাখা হচ্ছে, যার কারণেই মূলত যৌক্তিকতা ও সম্ভাবনা থাকার পরও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থায়ী টেকসই বন্ধুত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। আমরা আমজনতা আশা করব, ভারতের দাবি অনুযায়ী বিরোধীদলীয় নেতা ওই দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেওয়ার যে কথা দিয়েছেন, তা-ও যেমন ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে এখনকার তাঁর মত বহাল রাখবেন, তেমনি ভারতের তরফেও খোলা মন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অভিন্ন সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে, তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং যেহেতু এখনকার অবস্থায় যেসব সমস্যা বিরাজমান, তা শুধু ভারতের দিক থেকেই; তাই ওই সব সমস্যা সমাধানের আশু উদ্যোগ নিয়ে ভারতকেই স্থায়ী এবং কার্যকর সু-প্রতিবেশী ও বন্ধুত্বের বন্ধন সৃষ্টির বিষয়ে পথচলার সূত্রপাত করতে হবে।
মোহাম্মদ হোসেন: আমাদের এ মুহূর্তে প্রয়োজন একটি সুষম পররাষ্ট্রনীতি, যেটি সরকার পরিবর্তনের ওপর পরিবর্তিত হতে থাকবে না; বরং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতের মতো উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর আদলে টেকসই পেশাদারিনির্ভর হবে।

প্রশাসনের আপস প্রস্তাবে রাজি নয় লিমন
র্যা বের গুলিতে পা হারানো কলেজছাত্র লিমন হোসেনের কাছে আপসের প্রস্তাব দিয়েছে জেলা প্রশাসক। লিমন এ প্রস্তাবে রাজি না হয়ে দোষী র্যা ব সদস্যের বিচারের দাবি আবারও তুলে ধরেছে। এ সম্পর্কে মনিরুজ্জামান লিখেছেন: শাবাশ! সরকার তোমার পাশে দাঁড়ায়নি, বিরোধী দল এড়িয়ে গেছে, সাধারণ মানুষ আর তোমার মনোবলই একসময় জয় পাবে। এ দেশে বন্ধ হবে এসব রাষ্ট্রীয় অপকর্ম।
সালেহ আরেফিন: আমি প্রথমেই লিমনকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। সরকার বা র্যা ব তোমার পাশে থাকল কি না, সেটা বড় বিষয় নয়। কারণ, এরা জনগণের দয়ায় টিকে থাকে আবার বিতাড়িতও হয়। এ দেশের মালিক জনগণ। বড় বিষয় হলো, সেই দেশের মালিক জনগণ তোমার পাশে আছে। আশা করব কোনো প্রলোভনই তোমাকে অন্ধকারের কীটদের সঙ্গে আপসে উৎসাহিত করবে না।
নিজাম উদ্দিন: সরকারি বাহিনীর গুটি কয়েক নীতিবর্জিত, অর্থলোভী ব্যক্তির দ্বারা হাজারো নিরীহ নির্যাতিত ব্যক্তির একমাত্র প্রতীক লিমন। লিমনের পা হারানোর বিচার না হওয়া মানেই শুধু লিমনের পঙ্গুত্বকেই বরণ করা নয়; বরং জাতীয় বিচার বিভাগের পঙ্গুত্বকেই বরণ করা। আমাদের দেশে বিবেকবান মানুষের সংখ্যা কম নয়। তাঁদের অনেকেই বলে থাকেন, ‘দেখি না কী হয়! কোথার ঘটনা কোথায় দাঁড়ায়!’ এই দেখতে দেখতে পুরো দেশটা দুষ্টচক্রের করায়ত্তে চলে যায়। তখন আমরা ঘটনার পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছুই দেখতে পাই না। দেশের বিবেকবান মানুষ এগিয়ে না এলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাবে কোথায়। সবাইকে মনে রাখতে হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মে কিন্তু সবার উত্তরসূরি রয়েছে। মনে করতে হবে আজকের ছড়িয়ে দেওয়া বিষ আমাদের উত্তরসূরিদের গলাধঃকরণ করতে হবে। কেউ রেহাই পাবে না। কেউ আগে আর কেউ বা পরে।

এভাবে প্রশাসক বসানোর পরিণতি ভয়ানক হবে
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক বসানোর জন্য সরকার কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সংশোধনী ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভায় পাস হয়েছে। এ বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী এম জহির এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে উপরিউক্ত কথাগুলো বলেছেন। এ সম্পর্কে ফারহান ফারদিন লিখেছেন: এসব প্রশাসক বসানো হলো একটি চালবাজি, সরকারদলীয় লোকগুলোকে টাকা কামানোর সুবিধার জন্যই এসব করছে—যেমনটা করেছিল সোনালী ব্যাংকে! আমি এখন রক্ত পানি করে কোম্পানি করব, তারপর অদক্ষ দলীয় লোকগুলো লুটেপুটে খাবে, তা মোটেই মানা যায় না।
মনির: আমলারাই দেশটাকে পিছিয়ে দিচ্ছেন। বর্তমান সরকারের সময় কিছু সাবেক আমলাকেই উপদেষ্টা হিসেবে অসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই উপদেষ্টারা বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। আমলাদের পরামর্শে এই জাতীয় নিপীড়নমূলক আইন তৈরি করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনেই ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে। ব্রিটিশ যুগে ইংরেজ শাসকদের পরেই আমলারা নিজেদের দেশের মালিক মনে করতেন। পাকিস্তান আমলে পাঞ্জাবিরা ছিল দেশের মালিক। স্বাধীন বাংলাদেশে অযোগ্য আমলারা জাতীয়করণ করা শিল্পগুলোকে ডুবিয়ে নিজের পকেট ভারী করেছেন। জিয়া-এরশাদের সামরিক শাসনের লম্বা সময়টায় এঁদেরই রাজত্ব ছিল। যেসব রাজনীতিবিদ তখন এঁদের স্যার বলতেন, তাঁরা মন্ত্রী হওয়ার পরও পুরোনো ধারাই বজায় রেখেছেন।
মো. গিয়াসউদ্দিন: পরিবারতন্ত্র আর আমলাতন্ত্র বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে গ্রাস করেছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ আইন হলে আমলারা ব্যবসা-বাণিজ্যকেও গ্রাস করবেন। তার চেয়ে আমলা নিয়ন্ত্রণ আইন করা দরকার। সাবেক আমলারা যাতে রাজনীতিতে ঢুকতে না পারেন।
(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.