‘আলোর মুখ দেখলাম’

‘আগে মুঠোফোনে শুধু ফেসবুক ব্যবহার করতাম এবং গেমস খেলতাম। মাঝেমধ্যে ডাউনলোড দিয়ে গান শুনতাম। কিন্তু এ উৎসবে এসে মনে হচ্ছে আমরা কিছুই জানি না। আজ অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখলাম।’


গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসবে যোগ দিয়ে গতকাল বুধবার এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানায় বগুড়ার দুপচাঁচিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী মিথিলা মেরিন।
‘এসো পৃথিবীর পাঠশালায়...’ এই আহ্বান জানিয়ে গতকাল উৎসব হয় দুপচাঁচিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে। উৎসবে ১০টি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। যোগ দেয় মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরাও।
উৎসবে অংশ নিতে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই বিদ্যালয়ের মাঠে ভিড় জমায়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অংশগ্রহণকারী শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করান দুপচাঁচিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক সুদেব কুমার কুণ্ডু। তিনি বলেন, মেধাবী মুখ খুঁজে বের করতে হলে গ্রামগঞ্জের তরুণদের ইন্টারনেটের ব্যবহার শেখাতে হবে।
গ্রামীণফোনের বগুড়া অঞ্চলের ব্যবস্থাপক আশফাকুজ্জামান চৌধুরী বক্তৃতায় বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের ব্যবহার শেখানোর দায়িত্ব নিলে এ দেশ সত্যি সত্যি একদিন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।’
আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর দুপচাঁচিয়া প্রতিনিধি আনিছুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন গ্রামীণফোনের কর্মকর্তা সামিউল হক ও ঢাকা বন্ধুসভার ওমর ফারুক।
উৎসবে অংশ নেয় দুপচাঁচিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, দুপচাঁচিয়া পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, শাপলা নিম্নমাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয়, বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল, তালোড়া আলতাফ আলী উচ্চবিদ্যালয়, তালোড়া সরকারি শাহ এয়তেবারিয়া কলেজ, দুপচাঁচিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ, দুপচাঁচিয়া জেকে কলেজ, আছির উদ্দিন চিশতি মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আলতাফনগর শহীদ এম মনসুর আলী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
নিবন্ধন করা ১৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫০ জনকে বাছাই করা হয়। তাদের নিয়ে শুরু হয় আই-জিনিয়াস প্রতিযোগিতা। আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হওয়ার পর দুপচাঁচিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র সালেহ আহমেদের চোখে পানি চলে আসে। প্রতিক্রিয়ায় সে জানায়, ‘মোবাইল ফোন ব্যবহারের জন্য স্যার ও বাবা-মায়ের বকা খেতাম। ভাবতেই পারিনি আই-জিনিয়াস হব। আমি খুব খুশি।’
যেসব শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেনি, তাদের জন্য ছিল মজার মজার উপকরণ। এর মধ্যে হ্যাপিনেস মেশিন ও ম্যাজিক মিরর সবচেয়ে বেশি উপভোগ করে শিক্ষার্থীরা।
এ বছর সারা দেশে ১২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসব করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গ্রামীণফোন ও প্রথম আলোর যৌথ আয়োজনে এই উৎসবের সহযোগী হিসেবে রয়েছে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি। সহায়তা দিচ্ছে গুগল, অপেরা, নকিয়া, ফেসবুক, চ্যানেল আই ও রেডিও ফুর্তি। উৎসবের ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করছে এশিয়াটিক ইভেন্ট মার্কেটিং লিমিটেড।
আজ উৎসব হবে বান্দরবান সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, বরগুনা সরকারি কলেজ, নওগাঁর কেডি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার আফজি পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জের ভৈরব রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজ ও সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার তয়রুননেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে।

No comments

Powered by Blogger.