পূজা উপলক্ষে কলকাতা সেজেছে বর্ণিল সাজে by পরিতোষ পাল

কোথাও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে আইফেল টাওয়ার, কোথাও স্যাটেলাইটে চড়ে মা দুর্গা এসেছেন মর্ত্যে। আবার কোথাও প্রজাপতি রঙিন ডানা মেলে আবাহন করছেন দেবীকে। ফাইবার গ্লাস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দেবীর মূর্তি। সেখানেও শিল্পীর মনে ছোঁয়া লেগেছে অন্যভাবে।

কোথাও কাচের শিশি-বোতলের সাহায্যে পানির সঙ্গে মনের সম্পর্ক তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। কোথাও ব্যবহৃত হয়েছে শামুকের খোলস ও ঝিনুক। লোহা থেকে বাঁশ কিছুই বাদ যায়নি মণ্ডপ তৈরির কাজে। আবার দক্ষিণের একটি পূজা মণ্ডপে বিশাল একটি গাছে ঝুলছে এক বিরাট মৌচাক। তার নিচে পদ্মফুলে আসীনা দেবী। মানুষের ক্লোন তৈরির বিরোধীতাকে থিম করে পূজামণ্ডপ সাজিয়েছেন জিনের মতো গঠনের নানা কারুকাজ দিয়ে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সৌরবিদ্যুতে গোটা পূজামণ্ডপকে আলোকিত করারও ব্যবস্থা করেছে কয়েকটি পূজা কমিটি। থিম যুদ্ধে এবার যুক্ত হয়েছে সুরও। অনেক বড় পূজা কমিটি এবার থিম সঙের আমদানি করেছে। খ্যাতনামা সুরকারদের দিয়ে তৈরি হয়েছে এই থিম সং। জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, স্রেয়া ঘোষাল, সোনু নিগম কে-নেই এই তালিকায়। সেই সঙ্গে মোবাইলে কলার টিউন করার আবেদনও পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। কলকাতার চারদিকে এমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মণ্ডপ-সজ্জা ও অন্যান্য আয়োজন  নিয়ে ১২৮০টি কমিউনিটি পূজা শুরু হয়েছে। এছাড়া সারা রাজ্যে কয়েক হাজার পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কলকাতার মত জেলা শহরেও থিম পূজার প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে। চতুর্থীর দিন থেকে চলছে এই পূজার উদ্বোধন। গোটা কলকাতা আলোর ঝরণাধারায় ভেসে চলেছে। সেই সঙ্গে পঞ্চমী থেকেই শুরু হয়েছে মানুষের ঢল। আর এই মানুষের ঢলে বিদেশী পর্যটকদেরও উপস্থিতি চোখে পড়ছে।  থিম পূজার বাহারে এবারের সংযোজন বিদ্যা বালান, দিয়া মির্জা কিংবা ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষ্মণের মতো সেলিব্রিটিরা। যারা একাধিক পূজার উদ্বোধন করেছেন। অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যপালের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালও একাধিক পূজার উদ্বোধন সেরে ফেলেছেন। তবে সবাইকে টেক্কা দিয়ে শতাধিক পূজার উদ্বোধনে শামিল হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার দপ্তরে পূজার উদ্বোধনের জন্য প্রায় হাজার খানেক আবেদন এসেছিল। তবে সবাইকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে তিনি দায়িত্ব সারলেও কলকাতা ও শহরতলীর পূজা সংগঠকদের আবদার তাকে মেটাতেই হয়েছে। বিশেষ করে তার দলের মন্ত্রী ও বিধায়করা যেখানে অনেক পূজা কমিটির শীর্ষে রয়েছেন। একজন মন্ত্রী তো পূজার আগেই ঘোষণা দিয়েছেন তার পূজার বাজেট এবার কোটি রুপি। তবে কলকাতার অনেক পূজা কমিটিরই বাজেট কোটি রুপির কাছাকাছি। কোন পূজা কমিটিই তাদের বাজেট বলতে নারাজ। তবে আয়কর বিভাগের কর্তাদের মতে, কয়েকশ’ কোটি রুপি খরচ হচ্ছে এই পূজার আয়োজনে। আর এই পূজা কমিটিগুলোতে মদত দিয়ে চলেছে করপোরেট হাউজগুলো।
তাদের পণ্যের প্রচারের পাশাপাশি তারাই অনেক ক্ষেত্রে ঠিক করে দিচ্ছেন কিভাবে হবে মণ্ডপসজ্জা বা কে তৈরি করবেন প্রতিমা। এবারও কলকাতার অনেক খ্যাতনামা আর্টিস্ট প্রতিমা তৈরির কাজ করেছেন। পূজা কমিটিগুলোর মধ্যে চমক সৃষ্টির প্রতিযোগিতায় মদত দিয়ে শুরু হয়েছে অনেক সেরা পূজা বাছাই করার আয়োজন। আর এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন বিচারক হিসেবে প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বরা। পূজা কর্তারাও রীতিমতো তৈরি- কখন বিচারকরা এসে হাজির হবেন সেজন্য। তৈরি স্বেচ্ছাসেবকরাও। তবে পূজা উপলক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনীকে মাঠে নামানো হয়েছে। পথের মোড়ে মোড়ে এবং বড় বড় পূজামণ্ডপগুলোতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি বা নজরদারি ব্যবস্থা। উৎসবের আমেজকে যাতে কেউ নষ্ট করতে না পারে সেজন্য এবার অনেক সতর্ক পুলিশ। সঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রীদের প্রতিদিন মহাকরণে থেকে নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে পশ্চিমবঙ্গকে তুলে ধরতে পূজামণ্ডপের শিল্পশৈলীকে কাজে লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চমীর সন্ধ্যায় একটি পূজার উদ্বোধনে এসে বলেছেন, সুন্দর সুন্দর থিমের মণ্ডপসজ্জা নিয়ে মেলার আয়োজন করা হলে ভাল হয়। আর মণ্ডপসজ্জার জন্য যে সব শিল্প সামগ্রী তৈরি হয় সেগুলোকে বিক্রির কথাও ভাবছেন মুখ্যমন্ত্রী।

No comments

Powered by Blogger.