মসলার চড়া দাম-ব্যবসায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত হোক

ঈদ ও পূজার মতো উৎসব এলে সাধারণ মানুষ বাঁধভাঙা আনন্দে উদ্বেলিত হতে চায়। কিন্তু বাজারমূল্যের অবস্থান মানুষের মনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্বস্তি ও শান্তি জোগাতে পারে না। বরং পণ্যমূল্যের গতি অধিকাংশ সময় উৎসবের মেজাজের বিপরীতেই ধায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎসব এলে বিশেষ মূল্যছাড়ের হিড়িক পড়ে যায়।


যে পণ্য সাধারণ সময়ে ক্রেতাদের নাগালের বাইরে থাকে, তাও উৎসব এলে ক্রেতাদের আয়ত্তে চলে আসে। কিন্তু আমাদের দেশে উৎসবগুলো ব্যবসায়ীদের বাড়তি মুনাফার উপায়ে পরিণত হয়। বড় কোনো ধর্মীয় উৎসব হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তো বাড়েই, সঙ্গে উৎসবের অবশ্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গগুলোর মূল্যও ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যায়। প্রবণতাটি নেতিবাচক হলেও বছরের পর বছর এরই পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। আসন্ন ঈদ ও চলমান পূজাতেও এর ব্যতিক্রম নেই। শারদীয় দুর্গাপূজা ও ঈদুল আজহা দেশের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব। এ দুটি আয়োজনে রান্নাবান্নার আবশ্যিক উপাদান মসলা। অতিথি আপ্যায়নের জন্য বাহারি রান্নায় মসলা অতিপ্রয়োজনীয় উপাদান। কিন্তু মসলার দাম এখন আকাশছোঁয়া। বাজারে মসলার সরবরাহে কমতি নেই। আমদানিও ঠিকঠাক হয়েছে, দেশীয় মসলার সরবরাহও সন্তোষজনক। সাধারণ নিয়মে এ মসলা বর্তমান মূল্যের চেয়ে অনেক কমে বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু প্রয়োজনীয় সব মসলার দাম বেড়েছে বাজারের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মসলার বাজারদর নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে যে চিঠি দিয়েছে_ তাতে দেখা যাচ্ছে, বাজারমূল্যের দেড়গুণ, দুইগুণ এমনকি তিনগুণ বেশি দরে মসলা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজ, রসুন, জিরা, এলাচ, দারুচিনি, মরিচ, আদাসহ বিভিন্ন মসলার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটছে। ভোজ্যতেলের বাজারেও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ_ বাজারের সরবরাহ এমনকি ব্যবসায়ীদের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, অতিরিক্ত দামের কোনো ন্যায্য যুক্তি নেই। ব্যবসায়ীরা অন্যায়ভাবে বাড়তি মুনাফা অর্জন করতেই মসলার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাজারে এ প্রবণতার পুনরাবৃত্তি ঘটছে নিয়মিতভাবে। প্রবণতাটি ক্রেতাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, বাজারের স্থিতিশীলতাও নষ্ট করছে। বিভিন্ন মহল এ জন্য প্রধানত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন। তাদের যুক্তি হলো, বিশেষ পণ্য আমদানি ও বাজারজাত করার দায়িত্ব যদি নির্দিষ্ট কতিপয় ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে, তবে তাদের মর্জির ওপর বাজারদর ওঠানামা করতে বাধ্য। বাজারের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখতে হলে এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি। বাজার যদি বাজারের নিয়মে চলে তবে সরকারি উদ্যোগের দাবি কেউ তুলত না। কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে নিয়মের বাইরে গিয়ে বাজার যদি কতিপয় ব্যবসায়ীর খেয়ালখুশি মাফিক মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়, তবে সরকারকে অবশ্যই তার কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ হতে হবে। প্রথমত, সরকারকে সিন্ডিকেট ভেঙে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। সিন্ডিকেটের বাইরের ব্যবসায়ীদের আমদানি ও বাজারজাতকরণে উৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারি উদ্যোগে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু টিসিবি বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে
আনতে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা আবার জোরদার করা দরকার। পাশাপাশি, বাজারকে নিয়মিত তদারকির মধ্যে রাখা দরকার। আন্তর্জাতিক মূল্যসাপেক্ষে পণ্যের বাজারদর কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে নিয়মিতভাবে ক্রেতাদের
সচেতন করার প্রয়োজন রয়েছে। বাড়তি মূল্য ঠেকাতে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে হবে। কিছু দৃষ্টান্ত তৈরি করতে না পারলে অসাধু ব্যবসায়ীদের অন্যায় লোভের শিকার হওয়া থেকে ক্রেতাদের রক্ষা করা যাবে না। সর্বজনীন উৎসবগুলোকে সাবলীল ও আনন্দময় করে তুলতে হলে উৎসবের আগে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি সক্রিয়তার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেরও করণীয় আছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সরকারের পাশে দাঁড়ালে এ কাজ সহজে করা সম্ভব। সেদিকে সবার মনোযোগ আসুক, সেটিই কাম্য।
 

No comments

Powered by Blogger.