পবিত্র কোরআনের আলো-অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ না করার হুঁশিয়ারি

১৮৮। ওয়ালা-তা'কুলূ আমওয়া-লাকুম বাইনাকুম বিলবা-তি্বলি ওয়া তুদলূ বিহা-ইলাল হুক্কা-মি লিতা'কুলূ ফারীক্বাম্ মিন আমওয়া-লিন্না-ছি বিলইছমি ওয়াআনতুম তা'লামূন। ১৮৯। ইয়াছআলূনাকা আ'নিল আহিল্লা; ক্বুল হিয়া মাওয়া-


ক্বীতু লিন্না-ছি ওয়ালহাজ্জি; ওয়া লাইছাল বির্রু বিআন তা'তুল বুইউ-তা মিন জুহূরিহা- ওয়ালা-কিন্নাল বির্রা মানিত্তাক্বা; ওয়া'তুল বুইউ-তা মিন আবওয়া-বিহা; ওয়াত্তাক্বুল্লা-হা লা'আল্লাকুম তুফলিহূন। [সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৮-১৮৯]

অনুবাদ
১৮৮। তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায় ও অবৈধভাবে আত্মসাৎ কোরো না; জেনেশুনে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদের কোনো অংশ ঘুষ বা উপঢৌকনের মাধ্যমে ভোগ করার জন্য বিচারক বা প্রশাসকের সামনে পেশ কোরো না।
১৮৯। (হে নবী) লোকেরা আপনার কাছে চন্দ্রকলা (চাঁদের ক্ষয় ও বৃদ্ধি) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, আপনি তাদের বলে দিন, এগুলো হচ্ছে মানবজাতির জন্য সময় নির্ধারক নির্ঘণ্ট (অর্থাৎ এর মাধ্যমে মানুষ দিন-তারিখ নির্ধারণ করতে পারে)। তা ছাড়া এর মাধ্যমে হজের সময়সূচিও জেনে নিতে পারে। এহরাম বাঁধার পর পেছন দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করার মধ্যে কোনো সওয়াব নেই, বরং সওয়াব নিহিত রয়েছে কে আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ আর কে দায়িত্বনিষ্ঠ নয়, এর ওপর। এখন থেকে তোমরা ঘরের সামনের দরজা দিয়েই আসা-যাওয়া করবে, তোমরা আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ থাকবে, হয়তো তোমরা সফলকাম হবে।

ব্যাখ্যা
১৮৮ নম্বর আয়াতে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ না করার কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে এবং আত্মসাতের নানা কলাকৌশলের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ করা বা আত্মসাতের চেষ্টা করাও অন্যের সম্পদ আত্মসাতের পর্যায়েই পড়ে। অন্যের সম্পদ আত্মসাতের জন্য অসৎ লোকরা সাধারণত যা করে এর অন্যতম হলো মিথ্যা মামলা করা। মিথ্যা মামলায় খোদ বিচারককে সরাসরি ঘুষ দেওয়ার ঘটনা কখনো ঘটে, তবে সেটা বিরল। সাধারণত যা ঘটে তা হলো সংশ্লিষ্ট নানা মহলকে ঘুষ বা উৎকোচ দিয়ে মামলার রায় নিজের পক্ষে ছিনিয়ে নেওয়া। এ ধরনের যেকোনো কৌশলে বিচার বিভাগ বা প্রশাসনের রায়ের মাধ্যমে হস্তগত করা সম্পদও অন্যায়ভাবে হস্তগত করা সম্পদ হিসেবেই বিবেচিত হবে। এভাবে অন্যের সম্পদ হস্তগত না করার জন্য এই আয়াতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
১৮৯ নম্বর আয়াতে দৃশ্যত তিনটি বিষয় এসেছে। চন্দ্রকলা প্রসঙ্গ, হজ প্রসঙ্গ এবং হজসংশ্লিষ্ট একটি কুসংস্কার দূরীকরণ প্রসঙ্গ। চাঁদ কী, তা আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই জানেন। চাঁদ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ। এর কত দূরত্ব, সেখানে কী আছে ইত্যাদি অনেক কথাই আল্লাহ জানাতে পারতেন চাঁদসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে। কিন্তু এখানে বলা হয়েছে, চাঁদ হচ্ছে সময় নির্ধারক বস্তু। অর্থাৎ চাঁদের সাহায্যে মানুষ হিসাব রাখতে পারে, চান্দ্রমাস, চান্দ্রবর্ষ ইত্যাদির। আসলে ধর্মীয় আচার-আচরণ ইত্যাদির অনেক কিছুই গড়ে উঠেছে চান্দ্রবর্ষ, চান্দ্রমাসে। এ আয়াতের মধ্যেই প্রসঙ্গক্রমে নিয়ে আসা হয়েছে হজের কথা। হজ, ঈদ, রোজা ইত্যাদি সব কিছুই পালিত হয় চাঁদের হিসাব অনুযায়ী।
হজের প্রসঙ্গ ধরে এখানে একটি প্রচলিত কুসংস্কার অপনোদন করা হয়েছে। মক্কার লোকরা হজের এহরাম বাঁধার পর কোনো কারণে ঘরে ফিরে যেতে হলে ঘরের পেছন দিয়ে কোনো বিশেষ উপায়ে প্রবেশ করত। এই আয়াতে এমন আচরণকে কুসংস্কার হিসেবে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.