চীন থেকে ফিরেছেন খালেদা, ভারত যাচ্ছেন ২৮ অক্টোবর

চীন সফর শেষে দেশে ফিরে এসেছেন জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। শনিবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে খালেদা জিয়া ও তাঁর সফরসঙ্গীরা থাই এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।


বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। থাই এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে চীন থেকে ব্যাঙ্ককে যান খালেদা জিয়া। সেখানে রাতে অবস্থান শেষে একই ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় আসেন।
এদিকে চীন থেকে ফেরার আট দিনের মাথায় ভারত সফরে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। ঈদ-উল-আযহার পরদিন ২৮ অক্টোবর তিনি তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে দিল্লীর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। ২০০৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা ছাড়ার পর বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে এটাই খালেদা জিয়ার প্রথম ভারত সফর।
শনিবার বিকেলে গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল জানান, ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ২৮ অক্টোবর এক সপ্তাহের সফরে সেদেশে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সফরকালে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করবেন। এছাড়া আজমীর শরিফেও যেতে পারেন তিনি।
বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এজেডএম জাহিদ হোসেন, মোসাদ্দেক আলী ফালু, ফজলুর রহমান পটল, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বরকত উল্লাহ বুলু প্রমুখ। এছাড়াও যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে যান।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে গত ১৪ অক্টোবর বিএনপির একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে ব্যাঙ্কক হয়ে ১৫ অক্টোবর বেজিং যান। চীন সফরকালে দেশটির উপ-রাষ্ট্রপতি জি জিংপিনসহ সরকার ও সিপিসির উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ সময় তিনি দেশ ও দলের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে চীন সরকারের প্রতিনিধি ও সিপিসির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন।
চীনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সফরসঙ্গী ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও একান্ত সচিব সালেহ আহমেদ। এর আগে ২০১০ সালের ১৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া চীন সফর করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তিনি একাধিকবার চীন সফর করেছেন।
বিএনপি নালিশের নীতিতে বিশ্বাস করে না- ড. মোশাররফ : রামুর ঘটনার নালিশ করতে খালেদা জিয়া চীন সফরে গেছেন বলে সরকারী দলের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। শনিবার বিকেলে খালেদা জিয়ার চীন সফর নিয়ে তথ্য জানাতে চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের কোন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারও কাছে নালিশ করার নীতিতে বিশ্বাস করে না বিএনপি। আর খালেদা জিয়ার চীন সফরকালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও রামুর ঘটনা নিয়ে কারও সঙ্গে কোন আলোচনা হয়নি। যাঁরা বলছেন বিএনপি চীনের কাছে নালিশ করতে গেছে তাঁদের বক্তব্য অপপ্রচার ছাড়া কিছুই নয়।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি প্রতিনিধি দলের চীন সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে দাবি করে ড. মোশাররফ বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিএনপি চেয়ারপার্সন উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল নিয়ে সেদেশ সফর করেন। চীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। সফরকালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল চীনের উপরাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও খোলামেলা পরিবেশে দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খালেদা জিয়ার এ সফরের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আগামী দিনে আরও সুদৃঢ় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ড. মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে চীন। এছাড়া চীন সরকার বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চট্টগ্রাম থেকে কুনমিং পর্যন্ত সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনেও চীন সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
ড. মোশাররফ বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও বিএনপির মধ্যে আন্তঃদলীয় যোগাযোগ ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সফর বিনিময়ের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। চীনা নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিকাশ, সহযোগিতা ও উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সমিতির সভাপতি হিসেবে চায়নিজ পিপলস ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি ফর ফরেন কান্ট্রির প্রধান লি শাওলির সঙ্গে বৈঠক করেছি। এ সময় দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে চীনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে আমি চীনের গণমুক্তি ফৌজের উপপ্রধান রিয়ার এডমিরাল পিওজিয়ানের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করেছি। আমাদের সামরিক বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি, নৌবাহিনী ত্রি-মাত্রিক করতে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।
ইসির সঙ্গে আলোচনায় বসবে না বিএনপি মওদুদ : বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপি কোন ধরনের আলোচনায় বসবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, এ কমিশনের গঠন প্রক্রিয়াই ছিল অনৈতিক। যে কারণে শুরু থেকেই আমরা এ কমিশন গঠনের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। শনিবার দুপুরে চীন সফর শেষে দেশে ফিরে আসা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা জানান।
মওদুদ বলেন, আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। তাই আগামী নির্বাচন কোন্ পদ্ধতিতে হবে তা ঠিক করার দায়িত্ব বর্তমান সরকারের। ইতোমধ্যে দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। কিন্তু সরকার জনগণের দাবি অবজ্ঞা করে তাদের অনুগত কমিশনের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। অবশ্য সরকার আগেই ইচ্ছেমতো তাদের অনুগত লোক দিয়ে এ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। দেশের জনগণ বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন মেনে নেবে না।

No comments

Powered by Blogger.