ভাষাসৈনিক অলি আহাদ আর নেই- শহীদ মিনারে সকল স্তরের মানুষের শ্রদ্ধা, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

চিরসংগ্রামী ভাষাসৈনিক অলি আহাদ আর নেই। দীর্ঘদিন রোগশোকে ভুগে শনিবার সকালে তিনি এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। তিনি ছিলেন একাধারে ভাষাসৈনিক, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও লেখক।


‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে জীবনবাজি রেখে যাঁরা লড়াই করেছেন তাঁদের সামনের কাতারে ছিলেন অলি আহাদ। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের জন্য সর্বপ্রথম তিনিই গ্রেফতার হয়েছিলেন। আজীবন তাঁর লড়াই ছিল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে। শত দমন-নিপীড়নও তাঁকে কেউ আদর্শ থেকে টলাতে পারেনি। আজীবন রাজনীতিতে যুক্ত থাকা এই রাজনৈতিক গুণীব্যক্তি সর্বশেষ ডেমোক্র্যাটিক লীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অলি আহাদ দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার সকাল ৯টায় রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। মৃত্যুর আগের কয়েকদিন তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছিল। শনিবার সকালে চিকিৎসকরা তাঁর মৃত্যু ঘোষণা করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত জটিলতা ছাড়াও ফুসফুস ও মূত্রনালীতে সংক্রমণ সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি এক মেয়ে ও স্ত্রীসহ বহু আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৪ সালে তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অলি আহাদের জন্ম ১৯২৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের ইসলামপুর গ্রামে। তাঁর একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার নমিন ফারহানা হাইকোর্টের আইনজীবী। তাঁর তিন বোন ও পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিন বোন ও এক ভাই মারা গেছেন।
গত ১৪ অক্টোবর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অলি আহাদকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগছিলেন। গত মার্চ থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। এর মধ্যে মার্চ থেকে এপ্রিল টানা দুই মাস তিনি হাসপাতালে ছিলেন। মাঝে অবস্থার উন্নতি হলে তাঁকে বাসায় নেয়া হয়। পরে আবার অবনতি ঘটলে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁকে ইতোমধ্যে দু’বার আইসিইউতে নেয়া হয়। বুধবার থেকে তাঁকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
হাসপাতাল ও পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, তিনি গত রবিবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শমরিতায় ভর্তি হন। এছাড়া তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। শমরিতার চিকিৎসক প্রফেসর কাজী দীন মোহাম্মদ, প্রফেসর আলি হোসেন, প্রফেসর আফজাল কায়সার, প্রফেসর এমএ আলম, প্রফেসর আবদুর রহমানের সমন্বয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড তাঁর চিকিৎসার দেখভাল করছিলেন। শমরিতার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. হারুন উর রশিদ জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর থেকে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছিল।
মৃত্যুর পর দুপুর একটার দিকে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ শমরিতা হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় তাঁর মরদেহ। বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ এই বর্ষীয়ান নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন ও রওশন আরাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা। বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিন খসরু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন কফিনে ফুল দিয়ে ভাষাসৈনিকের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় সহযোদ্ধা হারানোর প্রতিক্রিয়ায় আব্দুল মতিন বলেন, ‘অলি আহাদ ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি আমাদের সবাইকে ভাষা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। শুধু ভাষা আন্দোলন নয়, দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।’
ভাষাসৈনিক রওশন আরা বলেন, ‘অলি আহাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েই জীবনের মায়া ত্যাগ করে আমরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম।’
মতিন খসরু বলেন, ‘দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর মতো ব্যক্তির চলে যাওয়াটা অপূরণীয় ক্ষতি।’
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমাদের মাঝে তাঁর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এখন আর নেই। তরুণ সমাজকে এই ব্যক্তিত্বের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে।’
প্রয়াত ভাষাসৈনিক অলি আহাদের প্রথম নামাজে জানাজা বাদ জোহর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বিএনপির সিনিয়র নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, বরকত উল্লাহ বুলু, খায়রুল কবীর খোকন, চিকিৎসক নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন, চাষী নজরুল ইসলাম, রাজনীতিক শফিউল আলম প্রধান ও শওকত হোসেন নীলু।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জানাজা শেষে তাঁর লাশ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। বাদ আছর বায়তুল মোকাররম মসজিদে তাঁর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জানাজায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির সিনিয়র নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, খায়রুল কবীর খোকন, মোশাররফ হোসেন এমপি, মুসলিম লীগের সভাপতি নূরুল হক মজুমদার অংশ নেন।
দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাঁর লাশ দাফনের জন্য বনানী কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা হয়েছে। দাফনে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ। গার্ড অব অনার জানানোর সময় সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের।
কবরস্থানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক লীগের নেতাকর্মীসহ পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেত্রীর শোক
বিশিষ্ট রাজনীতিক অলি আহাদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া, স্পীকার এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদসহ বিশিষ্টজনরা শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া শমরিতা হাসপাতালে গিয়েও অলি আহাদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
চীন সফর শেষে শনিবার দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তিনি শমরিতা হাসপাতালে যান। সেখানে বিরোধীদলীয় নেতা অলি আহাদের কফিনে শেষ শ্রদ্ধা জানান। অলি আহাদের পরিবারের সদস্যদেরও সান্ত¡না দেন খালেদা জিয়া।
এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, মোসাদ্দেক আলী ফালু, বরকত উল্লাহ বুলু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ও ডেমোক্র্যাটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, অলি আহাদের দল ডেমোক্র্যাটিক লীগ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক।
অলি আহাদ শুধু ভাষাসৈনিকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন প্রথাবিরোধী রাজনীতিক। পেছনে তাকালে ফুটে ওঠে তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা অগ্রগণ্য। ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে ১৯৪৮ সালের ২৯ মার্চ তৎকালীন সরকার তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ বছরের জন্য বহিষ্কার করে। দীর্ঘ ৫৮ বছর পর ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। এছাড়া ১৯৪৭-১৯৭৫ সময়কালে জাতীয় রাজনীতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনের শেষ ভাগে তিনি ডেমোক্র্যাটিক লীগ নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এছাড়া রাজনীতিতে তাঁর অভিজ্ঞতা সংবলিত গ্রন্থ ‘জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-১৯৭৫’-এর প্রণেতা তিনি।

ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা
বায়ান্নর ভাষা সংগ্রামে জীবনবাজি রেখে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন, ভাষাসৈনিক অলি আহাদ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার মাধ্যমে তিনি থেমে ছিলেন না, পরবর্তী স্বাধিকার আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে তাঁকেই প্রথম কারাগারে যেতে হয়।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বেই আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শহীদুল্লাহ্ পাল্টা বাংলা ভাষার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলা ভাষার স্থান না হওয়ায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ প্রতিবাদসভা, সাধারণ ধর্মঘট ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ওই দিন পুলিশ ছাত্রদের বাধা দেয় এবং বহু ছাত্রকে গ্রেফতার করে। বন্দী নেতাদের মধ্যে ছিলেন অলি আহাদ, শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, শওকত আলি ও কাজী গোলাম মাহবুব। মার্চ মাসের ২৪ তারিখে রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল জিন্নাহ্র সঙ্গে সাক্ষাত করে ও বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করে। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন অলি আহাদ।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা ছিল উত্তাল। এ আন্দোলন ছড়িয়ে গিয়েছিল সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, অফিস-আদালতে এবং রাজপথে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সারাদেশে আন্দোলনের প্রস্তুতি দিবস। ওই দিন সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিমনেশিয়াম মাঠের পাশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত) গেটের পাশে ছাত্রছাত্রীদের জমায়েত শুরু হতে থাকে। সকাল ১১টায় অলি আহাদ, আব্দুল মতিন, গাজীউল হক প্রমুখের উপস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশ শুরু হয়।
আগের দিন ২০ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকার ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতিকে তছনছ করে দেয়ার জন্য ঢাকায় সমাবেশ, মিছিল-মিটিংয়ের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করে। ঐদিন সকালের দিকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ব্যাপারে ছাত্র-রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. এসএম হোসেইনের নেতৃত্বে কয়েক শিক্ষক সমাবেশস্থলে যান এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার জন্য ছাত্রদের অনুরোধ করেন।
অলি আহাদ ছিলেন প্রথম ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার অগ্রবর্তী সৈনিক। ২০ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় ধরে উপস্থিত ছাত্রনেতাদের মধ্যে আব্দুল মতিন এবং গাজীউল হক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত দিলেও বৈঠক থেকে নেতারা এ ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় বাংলার দামাল ছেলেরা দমনমূলক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১১৪ ধারা ভঙ্গ করতে বদ্ধপরিকর ছিল। সংগ্রাম পরিষদের সভায় গাজীউল হক, আবদুল মতিন, অলি আহাদ ও গোলাম মওলা ১১৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে ভোট দেন।

No comments

Powered by Blogger.