যুদ্ধাপরাধের বিচার জাতীয় সমঝোতার পথ উন্মুক্ত করবেঃ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে ইতিহাসের একটি অপ্রিয় অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং জাতীয় সমঝোতার পথ উন্মুক্ত করবে।

’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিদেশী বন্ধুদের ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মননা’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইতিহাসের একটি অপ্রিয় অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। জাতীয় সমঝোতার পথ উন্মুক্ত করবে।”

শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬১ জন বিদেশী বন্ধু বা তাদের প্রতিনিধিদের হাতে এ সস্মাননা তুলে দেন।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রনালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপুমনি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী জোয়ান এ ডাইন সম্মাননাপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে বক্তৃতা করেন।

সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল ও নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গিরিজা প্রসাদ কৈরালাকে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার অনার’ এবং বাকি ৫৭ জন ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান করা হয়।

ভারতীয় হাই কমিশনার পংকজ সরণ আইকে গুজরালের পক্ষে ও গিরিজা প্রসাদ কৈরালার পক্ষে তার কন্যা সুজাতা কৈরালা সম্মাননা গ্রহণ করেন।

মন্ত্রীপরিষদ সচিব এম মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এবং সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত প্রশংসাপত্র পাঠ করেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সেক্টর কমান্ডারবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, কূটনীতিক, বিচারপতি, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীসহ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম বিদেশী বন্ধু ও তাদের প্রতিনিধিদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশী বন্ধুরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং চিরঋণী।’’

তিনি বলেন, ‘‘আজ থেকে ৪১ বছর আগে বাঙালি জাতি যখন গণহত্যার শিকার হয়েছিল, তখন আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আপনাদের সেই সমর্থন প্রমাণ করেছিল যে আমাদের সংগ্রাম ছিল ন্যায্য। ন্যায়বিচার, মর্যাদা এবং সম্মান রক্ষার আর্তি আপনাদের কাছে পৌঁছেছিল।’’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা অতীতের সেই নীতির প্রতি আমাদের অবিচল আস্থা পুনর্ব্যক্ত করছি। সমতা, গণতন্ত্র, সুষম উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন হচ্ছে আমাদের আদর্শ এবং নীতি।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সংবিধান প্রণয়নের সময়ও এসব আদর্শকে আমরা সমুন্নত রেখেছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব আদর্শের উপর ভিত্তি করেই গড়ে তুলেছি। অতীতে অপরাধ করে শাস্তি না পাওয়ার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, আমরা তার অবসান ঘটিয়েছি। যে কোনো অপকর্মের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছি।’’ সূত্র: বাসস।

No comments

Powered by Blogger.