আবারো আমার দেশ বন্ধের চক্রান্তঃ মাহমুদুর রহমান

“সোয়া ‍দুই বছর আগের দায়ের করা একটি মামলায় জামিনপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের স্থায়ী ঠিকানা জানার জন্য রিমান্ড চাওয়া নজিরবিহীন ঘটনা। এর মাধ্যমে মূলত সরকারের সংবাদপত্র দলন নীতি ও আমার দেশ পত্রিকা আবারো বন্ধের চক্রান্ত হিসেবে এই রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছ” বলে মনে করেন দৈনিক আমার দেশ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

২০১০ সালের ২ জুন দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের সময় পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে ওই দিনই একটি মামলা দায়ের করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। ওই মামলার আসিমারা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। কিন্তু রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অপূর্ব হাসান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এজাহারভুক্ত সকল সাংবাদিক ও কর্মচারীদের রিমান্ডের আবেদন জানান।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রোববার আমার দেশ কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, “মামলাটি আড়াই বছরের পুরনো। ওই মামলায় এজহার নামীয় প্রত্যেক আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। সিএমএম আদালত থেকেও জামিন নিয়েছেন।  প্রতিমাসে নির্ধারিত হাজিরার তারিখে সিএমএম কোর্টে সশরীরে প্রত্যেক সাংবাদিক হাজিরা দিয়েছেন। এরকম একটি মামলায় শুধু স্থায়ী ঠিকানা জানার জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “মামলায় প্রত্যেকের অফিসের ঠিকানা দেয়া রয়েছে। তারা সবাই প্রথিতযশা সাংবাদিক ও এদের মধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকও রয়েছেন। তারা নিয়মিত অফিস করছেন। নাম জানার জন্য এভাবে রিমান্ডের আবেদন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন।”

তিনি আরো বলেন, “রিমান্ড যেন এখন ডালভাতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি একটি জিডির ভিত্তিতে রিমান্ডের আবেদনের ঘটনার পর এখন নাম জানার জন্য একটি পত্রিকার এতো সাংবাদিকের নামে রিমান্ড আবেদন জাননো হয়েছে। ইতিহাসেও এর নজির  পাওয়া যাবে না। বর্তমান মহাজোট সরকার মিডিয়া দলনের যে পথ বেছে নিয়েছে, সর্বশেষ ঘটনা তার আরেকটি বড় প্রমাণ।”

মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমি মনে করি সরকারের সংবাদপত্র দলন নীতি ও আমার দেশ পত্রিকা আবারো বন্ধের চক্রান্ত হিসেবে এই রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে। এর আগে আমাকে গ্রেফতার করে ১৪ দিন রিমান্ডে নিয়ে  নির্যাতন করা হয়েছে। এবার সকল সাংবাদিককে ভীত সন্ত্রস্ত করার জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যাতে সাংবাদিকরা সরকারের অপকর্মের সংবাদ তুলে ধরতে ভয় পান।”

তিনি আরও বলেন, সরকার ইতোমধ্যে টকশো নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনও হয়নি। এক জজ মিয়ার জায়গায় ৭ জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছে।”

তিনি বলেন, “সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। আমার দেশকে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বহু আগে থেকেই ডাকা হয় না। সর্বশেষ আমার দেশ সাংবাদিকদের রিমান্ডের আবেদন বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জন্য আরেকটি অশনি সংকেত হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।”

মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, “২০১০ সালের ১ জুন আমি গ্রেফতারের আশঙ্কা প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। ওইদিন রাতেই শতশত পুলিশ সাদা পোশাকে ও রণসাজে সজ্জিত হয়ে আমার দেশ কার্যালয় থেকে আমাকে গ্রেফতার করে। আমাকে গ্রেফতারের সময় পুলিশের কতর্ব্যকাজে বাঁধা দেয়া হয়েছে অভিযোগ এনে পরদিন ২ জুন তেজগাঁও থানায়  আমার দেশ এর সিনিয়র সাংবাদিকদের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০০ জনকে আসামি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। উল্লেখ্য ঐ মামলার নম্বর- ২ তারিখ ২/৬/২০১০ ইং। মামলার ধারা দণ্ডবিধির ১৪৩/ ১৪২/ ৩৩২/ ৩৫৩/ ১৮৬/ ৫০৬/ ১১৪।
তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) অপূর্ব হাসানের করা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সুপারিশকৃত রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, ‘এজাহার নামীয় আসামি (১) সহকারী সম্পাদক সঞ্জীব চৌধুরী (৬০), পিতা, সুশীল দাস চৌধুরী, সাং বিএসইসি ভবন (১১তলা) ১০২, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, থানা তেজগাঁও, ঢাকা, (২) ক্রামই রিপোর্টার আলাউদ্দিন আরিফ (৩৮), পিতা মৌলভী আরিফুর রহমান, (৩) নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ (৪৮) পিতা মৃত সৈয়দ শায়েস্তা মিয়া, (৪) সিটি এডিটর জাহিদ চৌধুরী পিতা মৃত আব্দুর নূর চৌধুরী (৫) অফিস পিয়ন সাইফুল (৩০) পিতা মৃত আব্দুল খায়ের সরকার গং বিজ্ঞ আদালতে উল্লিখিত কর্মস্থলের ঠিকানা উল্লেখ করে আত্মসর্মণ করেছেন। মামলার সুষ্ঠু তন্তের স্বার্থে আসামিদের স্থায়ী ঠিকানা আবশ্যক। এমতাবস্থায় আসামিদের তাদের সঠিক ও পূর্ণ নাম ঠিকানার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জামিন বাতিল পূর্বক এক দিনের পুলিশ রিমান্ড আবশ্যক। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদেরকে তাদের সঠিক ও পূর্ণ নাম-ঠিকানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের জামিন বাতিল পূর্বক এক দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করতে মর্জি হয়।’

স্থায়ী জামিনে থাকা প্রায় আড়াই বছরের পুরনো মামলায় জামিন আবেদন বাতিল করে রিমান্ড চাওয়ার ঘটনায় আইনজীবী ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ মানুষও  বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.