গুম হত্যাকাণ্ড থেকেও ভয়ঙ্কর, তিন বছরে ৭২ জন- অধিকারের আলোচনাসভা

গত তিন বছরে দেশে ৭২ নাগরিক গুম হওয়ার দাবি করেছে চট্টগ্রামের মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এঁদের অধিকাংশ গুম হন। এ গুম হত্যাকা- থেকেও ভয়ঙ্কর। গুম হওয়ার পেছনে নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অস্ত্রধারীরাই দায়ী বলে সংগঠনের উদ্যোক্তারা মনে করেন। যা সাধারণ নাগরিকের অধিকারকে ভুলুণ্ঠিত করেছে।


রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গুম এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ প্রথা থেকে মুক্তি পেয়ে নাগরিকের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে, গড়ে তুলতে হবে গণসচেতনতা। সরকার বা শাসক গোষ্ঠী যদি ভেবে থাকে আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর না করে তারা পার পেয়ে যাবে, সেটা ভুল। শনিবার চট্টগ্রামে অধিকারের আলোচনাসভায় বক্তারা এসব দাবি করেছেন। অধিকারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় গত তিন বছরে দেশে ৭২ নাগরিক গুম হয়েছেন। প্রতিটি ঘটনার সঙ্গেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী অভিযুক্ত হয়েছে। সংগঠনটির হিসাবে ২০১০ সালে ১৮ জন, ২০১১ সালে ৩০ জন এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৪ জন গুম হয়েছেন।
স্থানীয় একটি হোটেলে অধিকার পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সাজ্জাদ হোসাইন স্বাধীন। আলোচনায় অংশ নেন- নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানু, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, আইনজীবী সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, উপ-সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম, চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক আবু হানিফ, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা বেলায়েত হোসেন প্রমুখ।
সরকারের সদিচ্ছাই গুমের প্রতিকার উল্লেখ করে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশ-জাতি ধ্বংস হয় ভাল মানুষের নির্লিপ্ততায়, অসৎ রাজনীতিকদের কারণে নয়।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক কাজী এনামুল হক দানু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে গুম শুরু হয়েছে। একাত্তরের চৌদ্দই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের গুম করে হত্যা করা হয়েছিল। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে সন্তু লারমার বোন অনিমা চাকমা ও বাবুল চাকমাকে গুম করা হয়েছিল। তিনি বলেন, গুম হচ্ছে একটি অদৃশ্য বিষয়, যে বা যিনি গুম হয়েছেন তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না। আমাদের মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে রিমান্ডের নামে কথা আদায়ের যে অমানবিক প্রক্রিয়া তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান বলেন, গুম নিজের দল করলে ভাল, প্রতিপক্ষ দল করলে খারাপ, এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। খারাপ সব সময়ের জন্যই খারাপ। ইলিয়াস আলীর মতো অনেকে গুম হয়েছেন। আমরা চাই আইনের শাসন, যার যার মর্যাদা, অধিকার নিয়ে আমরা বাঁচতে চাই। চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোজাফফর আহমদ চৌধুরী বলেন, গুমের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে রাজনৈতিক অবক্ষয়ই দায়ী। স¤পত্তি ও স্বাধীনতা রক্ষায় রাষ্ট্রের সৃষ্টি। রাষ্ট্র পরিচালনা করেন রাজনীতিবিদরা। আজকের রাজনীতি হচ্ছে একধরনের ব্যবসা।
অধিকারের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে কনভেনশন এ্যাগেইনস্ট টর্চার অনুস্বাক্ষর করেছে, কিন্তু এখনও গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুমোদন করেনি। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ২০১২ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৯১টি দেশ গুম হওয়া বিরোধী সনদে স্বাক্ষর করেছে এবং ৩৪টি দেশ এ আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থন করেছে। কনভেনশনের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২০টি দেশ এ চুক্তির পক্ষরাষ্ট্র হওয়ার ৩০ দিন পর ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর এটি কার্যকর হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.