বিতর্ক আছে, সমাধান নেই by আসিফ আহমদ

জাতীয় সংসদে ৯ জুন পেশ করা বাজেট নিয়ে সরকারদলীয় সদস্যরা আলোচনা করেছেন। বিরোধী বিএনপিদলীয় সদস্যরা অধিবেশনে অনুপস্থিত। তারা বাজেট পেশের প্রায় তিন সপ্তাহ পর সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন : এ বাজেট ভুল ও বিভ্রান্তির দলিল এবং আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য নয়। সংসদে বিএনপির সদস্যসংখ্যা ত্রিশ জনের মতো।


তারা সংসদে হাজির হয়ে ক্ষীণ কণ্ঠেও যদি বক্তব্য রাখতেন, তো অধিবেশন জমজমাট হতো। কিন্তু সেটা হওয়ার নয়। তারা সমালোচনার জন্য সমালোচনা করছেন, কিন্তু কিছু আদায় করতে চাইছেন বলে তো মনে হয় না। ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্রে যাত্রা শুরুর পর থেকেই বিরোধীদলীয় সদস্যরা টানা বয়কটের যে রেওয়াজ চালু করেছে 'সেই ট্রাডিশন সমানে চলিতেছে'। এর কবে শেষ হবে, কেউ জানে না।
সংসদে সরকারদলীয় সদস্যদের কেউ কেউ শেয়ারবাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। মন্ত্রীদের দু'একজনও ছিলেন এ ইস্যুতে সমালোচনামুখর। সংসদের বাইরেও এ ইস্যুটি হট এজেন্ডায়। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক এ বাজারে অতিলাভের আশায় প্রবেশ করে নিজের এবং পরিবারের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। সরকারকে তারা দায়ী করতেই পারে। কারণ, 'অতি মূল্যায়িত' বাজারের লাগাম সরকার টেনে ধরতে পারেনি। গুজব ছড়ানো হয়েছে, কিন্তু তা থামানো হয়নি। স্বাভাবিক নিয়মে বাজারে ধস নেমেছে। যারা প্রচুর টাকা খুইয়েছে, তারা ক্ষুব্ধ। যারা আরও টাকা কামানোর কথা ভেবেছিল এবং পরিকল্পনা করে রেখেছিল, তারাও ক্ষুব্ধ। এখন কিছু লোক দাবি করছে, শেয়ারবাজারে কালো টাকা খাটানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ সংবাদ সম্মেলন করে এ ইস্যুতে উচ্চকিত হয়েছে। তাদের মতে, কালো টাকায় বাজার ফের চাঙ্গা হবে। বাজার থেকে মুখ পুড়ে সরে যাওয়া বিনিয়োগকারীরা ফের হাজির হবে ব্রোকার হাউসগুলোতে।
কিন্তু আবার যদি বাজার 'অতি মূল্যায়িত' হয়ে যায়? অতিলাভের প্রলোভনে ফের যদি অনেক লোক ধরা খায়?
আমাদের সমাজে এখন বিতর্কের ইস্যু অনেক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো আছেই। সংবিধানের সংশোধন প্রক্রিয়া চলছে। রাষ্ট্রধর্ম থাকা উচিত কি-না, সেটাও হট এজেন্ডা। সংখ্যালঘুরা নিজেদের বঞ্চিত মনে করছে। আওয়ামী লীগকে একচেটিয়া ভোট দেয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। সামরিক শাসনামলে সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে এইচএম এরশাদ তাদের বঞ্চিত করেছিলেন। জিয়াউর রহমানও করেছিলেন একই অপরাধ। এখন আওয়ামী লীগও সেটা করছে। রাষ্ট্রধর্ম বাদ দিলে ভোটে জেতা কঠিন হবে_ এটাই সহজ হিসাব। এক ধরনের ব্ল্যাকমেইলিংও রয়েছে মনে হয়। বলার চেষ্টা হয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে না থাকা মানে হচ্ছে ফের ২০০১ সালের অক্টোবরকে ডেকে আনা। সে সময় 'পূর্ণিমার মতো অনেকে' লাঞ্ছিত হয়েছেন এবং সরকার বলেছে, 'এমন একটু-আধটু' হয়েই থাকে।
বিতর্কের তালিকায় বাজেট তেমন গুরুত্ব হিসেবে আসেনি। বিরোধী দলের কাছেও এটা তেমন বড় ইস্যু নয়। তারা নামকাওয়াস্তে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তবে বিএনপির এক নেতা গার্মেন্ট শিল্পের মালিক এক সভায় বলেছেন, রফতানি আয়ের ওপর যে কর বাড়ানো হয়েছে সেটা কমানো না হলে কারখানা বন্ধ করে দেবেন। যে সমাবেশে তিনি কথা বলেছেন সেখানে তিনি তুমুল তালি পেয়েছেন। সত্যিই কারখানা বন্ধ করে দেবেন নাকি? কে জানে? শোনা যায়, রফতানি খাত এবারে বেশ চাঙ্গা। বছরের ৯ মাসেই এক বছরের রফতানি টার্গেট পূরণ হয়ে গেছে। এর অর্থ হচ্ছে, এ খাতে যুক্তরা ভালোই লাভ করেছেন। তাহলে সরকারকে কিছু বাড়তি কর দিতে সমস্যা কোথায়?
১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে। এদিনটি কি আমজনতার জন্য বিশেষ কিছু হবে? অর্থমন্ত্রী কী বলেন?
 

No comments

Powered by Blogger.