ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আমলে নিন-চাঁদাবাজি

রমজান মাসে ও ঈদের সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো ছিল—এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা যে অভিযোগ করেছেন, তাকে গুরুত্বের সঙ্গেই নিতে হচ্ছে। নতুন মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে মতবিনিময়ে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, সন্ত্রাসীদের হুমকি ও চাঁদাবাজিতে তাঁরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।


বোঝা যাচ্ছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই। দৃশ্যত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতার মধ্যেও রয়ে গেছে বড় ফারাক।
ব্যবসায়ীদের এক প্রতিনিধি বলেছেন, টেলিফোনে সন্ত্রাসীদের হুমকি ও চাঁদাবাজিতে ব্যবসায়ীরা ভীতির মধ্যে রয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী গোপনে চাঁদার টাকা পরিশোধ করেছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। বোঝা যাচ্ছে, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানার বাইরেও অনেক ঘটনা গোপনে ঘটে চলেছে, যার কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। যেমন, ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া অনেকেই থানায় গিয়ে আর বাড়তি ঝামেলায় পড়তে চান না। ফলে দিনে কত ছিনতাই বা এ ধরনের অপরাধ ঘটে, তার প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায় না। মামলার সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে আগের তুলনায় ছিনতাই কমেছে বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে—এ ধরনের সিদ্ধান্তে আসতে হচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ডিএমপির কমিশনার চাঁদাবাজি ও টেলিফোন-সন্ত্রাসের বিষয়টি ব্যবসায়ীদের লুকিয়ে না রেখে পুলিশকে জানাতে ও অভিযোগ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। যথার্থ পরামর্শ, কিন্তু কেন ব্যবসায়ীরা গোপনে চাঁদা দিয়ে দেন বা ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে মামলা করতে থানায় যান না, সে বিষয়টিও পুলিশকে বিবেচনায় নিতে হবে। পুলিশের কাছে অভিযোগ করে কেউ প্রতিকার পাবে বা ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে থানায় মামলা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হবে না—এ বিষয়গুলো পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা যেসব অভিযোগ করেছেন, তার মধ্যে মহাসড়কে পুলিশের সহযোগিতায় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার বিষয়টিও রয়েছে। এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এলে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এর সঙ্গে পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তির বিষয়টি জড়িত। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা কমে আসবে। কিছু সদস্যের অপকর্মের কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হোক, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ব্যবসায়ীরা মতবিনিময় সভায় তাঁদের বিভিন্ন সমস্যা ও অভিযোগের কথা জানিয়েছেন। এ সমস্যাগুলোর সঙ্গে শুধু ব্যবসায়ী নন, সাধারণ মানুষেরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমরা আশা করব, ব্যবসায়ীদের অভিযোগগুলো বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ টেলিফোন-সন্ত্রাসের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, মহাসড়কে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজি বন্ধে পৃথক সেল করার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। আইজিপি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতি তিন মাস পর এ ধরনের একটি বৈঠক করার কথা জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, নিয়মিত এ ধরনের বৈঠক হলে পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও অবস্থার উন্নতি-অবনতির বিষয়টি মূল্যায়ন করা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.