পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্যের ব্যবহারে ব্যাপক প্রচারণা জরুরি-পণ্যের মোড়ক

সম্প্রতি বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের দ্বারা পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কার সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপদান করতে প্রয়োজন পাট নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা, সবার নতুন উদ্যমে এগিয়ে আসা।


গত সোমবারের প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, খাদ্যপণ্য (চাল, গম, চিনি), সার ও বীজের মোড়ক হিসেবে পাটের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সংসদের চলতি অধিবেশনে বিল উত্থাপন করা হচ্ছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে খাদ্যশস্য ও চিনি মোড়কজাত করার কাজে ১৯৮৭ সাল থেকে বাধ্যতামূলকভাবে পাটজাত দ্রব্য ব্যবহারের বিধান চালু আছে, যা সে দেশের পাটশিল্পের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। আমাদের দেশেও এমন একটি আইন পাটশিল্পের হারানো সুদিন ফিরে পাওয়ার অগ্রযাত্রায় সহায়ক হবে নিঃসন্দেহে।
পাটশিল্পের অর্থকরী সুফল সুদূরপ্রসারী। শ্রমঘন শিল্প হিসেবে পাটশিল্পে যেমন বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়, তেমনি এ শিল্পের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত আছে লাখ লাখ পাটচাষির ভাগ্য। পাটশিল্পের অগ্রযাত্রার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধাভোগী হয় দেশের জনগণের বড় অংশ। কৃষিপ্রধান এ দেশের শিল্পভিত্তি জোরালো করতে পাটশিল্প বড় ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে বর্তমানে সারা দুনিয়ার মানুষ পরিবেশবান্ধব পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। মোড়ক হিসেবে পলিব্যাগ যেখানে পরিবেশদূষণ ঘটায়, তার বিপরীতে পাটজাত দ্রব্য অনেক পরিবেশবান্ধব। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে পাট আমাদের সামনে জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধির যে সম্ভাবনা হাজির করে এবং পাটজাত দ্রব্যের যে পরিবেশগত প্রভাব আছে, সেসব বিবেচনায় এনে শিল্পমালিক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের পাটজাত পণ্য ব্যবহারে সচেতন প্রয়াস নেওয়া প্রয়োজন।
আইন করে পাটশিল্পের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা যায়, কিন্তু আমরা তখনই উৎকর্ষের শিখরে এ শিল্পকে পৌঁছে দিতে পারব, যখন জনগণ সচেতনভাবে পাটের ব্যবহারে উৎসাহী হবে—পলিব্যাগ ব্যবহারের অভ্যাস পাল্টে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করবে। তাই পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্য ব্যবহারের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে পাটশিল্প যাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালামালের সরবরাহ দিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.