বিটিসিএলের বকেয়া-বাকির অপর নাম ফাঁকি!

অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লেখা থাকে 'আজ নগদ কাল বাকি' কিংবা কেউ লেখে, 'বাকির অপর নাম ফাঁকি'। তবে সব ব্যবসা নগদে হয় না। বাকি দিতেই হয়। এ জন্য অপরিহার্য একটি শর্ত হচ্ছে_ বাকি বা পাওনা আদায়ের বিষয়ে গ্যারান্টি। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা এসব প্রবাদ জানেন না, এমন ভাবা কঠিন।


রোববার সমকালে 'পাওনা আদায়ের নামে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ!' প্রতিবেদন পাঠ করে মনে হয় অনুমান সঠিক, অর্থাৎ তারা সবই জানেন এবং বোঝেন। বিদেশ থেকে বৈধ পথে বাংলাদেশে টেলিফোন কল পাঠানোর কাজ করে যেসব আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার তাদের কাছে বাংলাদেশের সরকারি ল্যান্ডফোন কোম্পানি বিটিসিএলের বকেয়া এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। টেলিফোন কল পাঠানোর নিয়ম অনুসারে প্রতি মিনিটের জন্য সরকারের আয় হয় তিন মার্কিন সেন্ট। কিন্তু সবাই এ অর্থ পরিশোধ করে না। এ ধরনের ৫৮ কোম্পানির কাছেই পাওনার পরিমাণ সাড়ে ছয়শ' কোটি টাকার বেশি। তাদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। খেলাপি কোম্পানিগুলো বড় অঙ্কের অর্থ বকেয়া রেখে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়_ তাদের এ কৌশল নাকি বিটিসিএল ধরে ফেলেছে। দারুণ আবিষ্কার বৈকি! দুর্নীতিবাজ যে কেবল বাংলাদেশে নয়_ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, সিঙ্গাপুরসহ আরও অনেক দেশে রয়েছে, সেটি বুঝতে তাদের অনেক সময় কেন লাগল, সে প্রশ্ন স্বাভাবিক। তবে সমকালের প্রতিবেদনে একটি গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে_ বিটিসিএলের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার পরামর্শেই ক্যারিয়ারগুলো এভাবে বিপুল অর্থ বাকি রেখে ফাঁকি দেওয়ার কৌশল গ্রহণ করে। এ নিয়ে তদন্ত করার মতো উদ্যোগ দেখতে পাওয়ার প্রত্যাশা করাই সঙ্গত। যেসব কোম্পানি বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করছে না তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ নিশ্চয়ই থাকার কথা। আর যদি বিটিসিএলের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ এমন চুক্তি করে থাকেন, যাতে ফাঁকফোকর যথেষ্ট, তাহলে এর সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধেই মামলা করা উচিত। আশা করব, এক হাজার কোটি টাকা আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বকেয়া আদায়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে দোষের কিছু নেই। কিন্তু পরিণতি যদি এমন হয় যে, বকেয়া অর্থ তো আদায় হলোই না, মাঝে আরও কিছু সরকারি অর্থ খরচা হয়ে গেল_ তাহলে?
 

No comments

Powered by Blogger.