এবার বিচারককে মারধর-আবার পুলিশ!

পুলিশের অসাধ্য কিছু নেই। ওরা সাংবাদিক পেটায়, আইনজীবী পেটায়, রোববার বিচারক পিটিয়ে সাম্প্রতিক কালে পেটানোর প্রতিযোগিতায় ‘হ্যাটট্রিক’ করল। নরসিংদী জজ আদালতের মূল ফটকে পুলিশ সদস্যরা জেলা যুগ্ম দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারিক হাকিমকে প্রথমে হেলমেট ও লাঠি দিয়ে পেটায়, তারপর কিল-ঘুষি মারে।


বিচারক বারবার তাঁর পরিচয় দিলেও তা শোনার ধৈর্য পুলিশ সদস্যদের ছিল না। একটি হত্যা মামলার শুনানি ছিল বলে নিরাপত্তার জন্য সেদিন আদালত চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। তাঁরা সবাইকে তল্লাশি করে আদালতে ঢুকতে দিচ্ছিলেন। বিচারকও সেই গৎবাঁধা তল্লাশির খপ্পরে পড়ে শেষ পর্যন্ত নির্মম মারধরের শিকার হন।
বিচারকাজের পরিবেশ নিরাপদ রাখার জন্য বিচারককে মারধর করা পুলিশের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে কি না, এ প্রশ্নটি কে জিজ্ঞেস করবে? পুলিশের ওপর কি কেউ নেই? রোববারের ঘটনার সাফাই গেয়ে ওসি দাবি করেছেন, পুলিশ নাকি খারাপ আচরণ করেনি, শুধু বিচারকের খারাপ আচরণের উত্তর দেয় পুলিশ! সবার কাজেরই একটা সীমা থাকে। সীমা লঙ্ঘন করলে জবাবদিহি করতে হয়। পুলিশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে জবাবদিহি শব্দটাই সম্ভবত বিলুপ্ত হয়ে গেছে। না হলে ওরা এমন বেপরোয়া হয়ে উঠল কেন? যখন ওরা টের পায় যে খেয়ালখুশিমতো কাজ করলেও তাদের কিছু হবে না, তখনই তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
২ জুন প্রথম আলোর উদ্যোগে ‘সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ও পুলিশের জবাবদিহি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে একজন সাবেক আইজি বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থ হাসিলের কাজে পুলিশকে ব্যবহার করবে, তত দিন পুলিশের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যাবে না।’ সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘পুলিশ অন্যায় করলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পুলিশের নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।’ আমরা আশা করব, সরকার এসব বিষয়ে মনোযোগী হবে।
বিচারককে মারধরের অভিযোগে দায়ী পুলিশ সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়। যথাযথ তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এ ধরনের অন্যায় অরাজকতা আরও জোরেশোরে চলতে থাকবে। কোনো সরকারের জন্যই এটা স্বস্তিজনক নয়।

No comments

Powered by Blogger.