চরাচর-চুয়াডাঙ্গার আট কবর by ফখরে আলম

বৃত্তাকারে পাশাপাশি আটটি কবর। সূর্যের মতো। আর কবরের ওপর ফুটে রয়েছে নয়নতারা। কালো টাইলসে নির্মিত এই আট কবরে প্রতিদিনই শত শত মানুষ ছুটে আসে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। চুয়াডাঙ্গাবাসীর অহংকার এই আট কবর।


যে কারণে ৪ আগস্ট চুয়াডাঙ্গাবাসী শহীদ দিবস পালন করে ওই আট সূর্যসৈনিককে স্মরণ করে। একাত্তরের এই দিন হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে দেশের জন্য এই আটজন প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের 'আট শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ' এলাকাবাসীর কাছে 'আট কবর' নামেই পরিচিত। জায়গাটির নামও এখন আট কবর। এখানে ঘুমিয়ে আছেন গোকুলখালীর হাসান জামান, কুষ্টিয়ার খালেদ সাইফুদ্দিন তারেক, আলমডাঙ্গার রওশন আলম, কিয়ামুদ্দিন, চুয়াডাঙ্গার আলাউদ্দিন ইসলাম, আবুল কাশেম, মোমিনপুরের রবিউল ইসলাম এবং চন্দ্রবাসের আফাজ উদ্দিন। ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট গেরিলা গ্রুপ কমান্ডার হাফিজুর রহমান জোয়াদ্দারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা জপুর গ্রামে অবস্থান নেন। ৪ আগস্ট পাকিস্তানিদের দালাল কুবাত খানকে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পে ধরে আনেন। ৫ আগস্ট কুবাদের সহচররা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এসে মিথ্যা খবর দেয়, রাজাকাররা গ্রামে হামলা চালিয়ে পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বাগোয়ান গ্রামের মাঠে ছুটে যান। কিন্তু আগে থেকে হানাদাররা ওই মাঠে অবস্থান নিয়েছিল। তারা পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালায়। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। আড়াই ঘণ্টার ওই যুদ্ধে অনেক পাকিস্তানি সেনা মারা যায়। আর শহীদ হন এই আট মুক্তিযোদ্ধা। পরে জগন্নাথপুর গ্রামবাসী দুটি গর্ত করে এ আটজনকে সমাহিত করে। ১৯৯৮ সালে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মুক্তিযোদ্ধা কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ৬৬ শতক জমির ওপর ওই স্থানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। এই স্মৃতিসৌধটিই এখন চুয়াডাঙ্গাবাসীর অহংকার, গৌরবের স্থান। এই স্মৃতিসৌধের পাশে ওই শহীদদের স্মরণে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়াদ্দার সেলুন ৩৭ শতক জমির ওপর একটি কমপ্লেঙ্ নির্মাণ করছেন। এই স্থাপনাগুলোই হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ। এখন নতুন প্রজন্মের সন্তানরা এই স্মৃতিসৌধের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে আর মার্বেল পাথরে লেখা ৪ আগস্টের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ করে আবেগতাড়িত হয়। তারা জানার চেষ্টা করে, সত্যিই এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ওই শহীদরাই বাংলার স্বাধীনতা এনেছেন।
ফখরে আলম

No comments

Powered by Blogger.