বঙ্গে এত রঙ্গ by ফসিহ বণিক

সদরঘাট এলাকায় লাঠিধারী একদল লোককে বীরদর্পে এদিক-সেদিক দাপাদাপি করতে দেখে যে কোনো মানুষের আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার দশা হওয়ার কথা। লাঠি, বন্দুক এসব তো পুলিশের কাছে থাকে। তারা তো পুলিশের লোক নয়! তাহলে তাদের পরনে পুলিশের পোশাক থাকত।
অবশেষে জানা গেল, তারা ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার বাহিনী। পুলিশেরও বাপ! ওরে বাপরে বাপ...। এর ওপর কর্মব্যস্ততার দিনেও রাস্তাকে প্রায় সুনসান করে দেওয়া, বিরোধী নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করার কৌশল প্রয়োগ তো আছেই। আসলে ঠেঙাড়ে বাহিনী দিয়ে বিরোধী দল, এমনকি মানুষকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার তরিকাটা অনেক পুরনো ও বহুচর্চিত। কিন্তু যাদের দিন ফুরোয় তাদের কি এসব নানা রঙের বাহিনী রক্ষা করতে পারে? আবার যাদের সুসময় এখনও ফুরোয়নি, বিরাট জমায়েত-বিক্ষোভ করেও তাদের হেলানো পর্যন্ত যায় না। বর্তমান সরকারের অন্তিম সময় কি উপস্থিত? সংশয়বাদীরা হয়তো এ নিয়ে নিত্য চায়ের টেবিলে ঝড় তোলেন। কিন্তু তারা যা-ই বলুন না কেন, এই অধমের দৃষ্টিতে সরকারকে পাঁচ বছর মেয়াদের আগে সরিয়ে দেয় কার সাধ্যি! মানুষ তাদের জলদি সরিয়ে দিতে মোটেই ইচ্ছুক নয়। তারা সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে; কিন্তু নিদান চায় না। তারপরও সরকার প্রাইভেট বাহিনী দিয়ে বিরোধীদের বিক্ষোভকে ভয় দেখাতে চায় কেন? এতে সরকারের কি কোনো লাভ হচ্ছে? উত্তর :সরাসরি কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং মানুষ, বিশেষ করে আম-আদমি এ জন্য সরকারের ওপর বিরক্ত। আমার এক বন্ধু পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলেন এদিন। বড় কর্তার রুমে বসে তিনি বললেন, আজ রাস্তা একদম ফাঁকা, সবসময় যদি ঢাকার রাস্তা এরকম থাকত...। তার কথা শেষ হতে না হতেই পাশ থেকে একজন বলে উঠলেন, আপনাদের যাদের গাড়ি আছে তাদের জন্য সুবিধা। আমার মতো যাদের গাড়ি নেই তাদের যে কী কষ্ট পোহাতে হয় তা কী করে আপনারা বুঝবেন। এরপর ভদ্রলোক তার কষ্টের সংক্ষিপ্ত বয়ান দিলেন। রাজধানীতে গণপরিবহন প্রায় উধাও। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর কোনো বাস না পেয়ে ওই ভদ্রলোককে অনেক দূর থেকে হেঁটে পাসপোর্ট অফিসে আসতে হয়েছে। এভাবে অনেককেই গতকাল নানা কসরত করে গন্তব্যে পেঁৗছতে হয়েছে। সরকারের দায়িত্ব নাগরিকদের জীবনযাত্রাকে স্বচ্ছন্দ করা, কষ্ট বাড়ানো নয়। দেখা যাচ্ছে, বিরোধীরা হরতাল ডেকে গাড়ি পুড়িয়ে যেমন মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে কর্মসূচি সফল হয়েছে ভেবে আনন্দে আটখানা হন, তেমনি সরকারও এখন পাল্লা দিয়ে মানুষের দুর্ভোগের মধ্যেই নিজেদের লাভ খুঁজছে। এসব কারণে সরকার ও বিরোধী দলের ওপর মানুষ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিক হারে বীতশ্রদ্ধ। মার্চে করা এক জরিপে দেখা যায়, মানুষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে তাদের নিরঙ্কুশ রায় প্রদান করলেও প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দেয়নি। জরিপে বরং ৩৯ শতাংশ মানুষ প্রধান দুই দলের বাইরে বিকল্প সন্ধান করছে দেখানো হয়েছে। গতকালের কার্যকলাপে তাদের প্রতি কি মানুষের আরও ক্ষোভ জমবে না! গতকাল শুধু রাজধানী নয়, দেশের প্রায় সব এলাকার সঙ্গেই আকস্মিকভাবে গণপরিবহন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সড়ক পরিবহন হোক আর নৌপরিবহন হোক-তাদের রাস্তায় চলতে, পানিতে গা ভাসাতেও মানা। কেন? বিরোধী দলের লোক জমায়েত ঠেকানোর জন্য! গণতন্ত্রে সমাবেশ করা বা বিক্ষোভ করার অধিকার প্রকারান্তরে হরণ করার কৌশল প্রয়োগ করাটা মোটেই সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকাশ নয়। এতে ক্ষতি সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল ও জোটের বেশি। আসলে বঙ্গ তো রঙ্গে ভরা। হয়তো এটা মানুষের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরাগ-রসের রঙ্গ!

No comments

Powered by Blogger.