একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ-পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে আইন

পরিবারের ভেতরে নারীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আমাদের সমাজের অনেক পুরোনো একটি সমস্যা। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানের কথা ভাবা দূরের থাক, এর অস্তিত্ব স্বীকারেই যেন সমাজের অনীহা। স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের হাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার নারীরা যেন এর কোনো প্রতিকার খুঁজে পান না।


তাঁরা প্রথমত আইনের আশ্রয় নিতে চান না; শেষ পর্যন্ত নিতে বাধ্য হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা সমস্যাটিকে ‘পারিবারিক’ বলে এড়িয়ে যেতে চান, অথবা নিজেদেরই মিটমাট করে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এইভাবে চলে আসছে আমাদের নারীদের জীবন, যুগের পর যুগ ধরে।
এই প্রেক্ষাপটে পারিবারিক সহিংসতা রোধের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগের খবর নিশ্চয়ই বড় সুসংবাদ। কারণ এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত হলো, আমাদের নারীরা পরিবারের ভেতরে আপনজনদের হাতেও শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, যার আইনানুগ প্রতিকার প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে নারীর ব্যক্তিগত সুরক্ষার আরও একটি আইনি হাতিয়ার পাওয়া যাবে। ‘পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০’ শিরোনামে এমন একটি আইনের খসড়া প্রণীত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেল। আইনটিতে নারীর সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার হয়ে নারী তাঁর শিশুসহ বাসস্থান থেকে বিতাড়িত হবেন—এমনটি আর হচ্ছে না। বরং প্রয়োজনে নির্যাতনকারীকেই বাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিতে পারবেন আদালত। নির্যাতনের শিকার নারী নির্যাতনকারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন, এমন বাধ্যবাধকতাও রয়েছে আইনটির খসড়ায়।
তবে, আইন প্রণয়ন এবং তা পাস হলেই রাতারাতি পারিবারিক সহিংসতা বন্ধ হয়ে যাবে, এমন আশা করা যায় না। আইনটির যথাযথ প্রয়োগের ওপরই নির্ভর করবে এর সুফল কতটা পাওয়া যাবে। পরিবারের ভেতরে নারী সহিংসতার শিকার হন অতি আপনজনের দ্বারা; আইনটি যদি অপরাধ সংঘটনের প্রবণতা হ্রাসে ভূমিকা রাখে, তবেই মঙ্গল। তাই আইনটি প্রয়োগের কিছু সাফল্যজনক দৃষ্টান্ত প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন; সামাজিক ও পারিবারিক পর্যায়ে এ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিরও উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.