ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

আজ থেকে শুরু হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। দেশের ১১টি জেলার ২৪টি উপজেলার ১৯০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যপদের নির্বাচনে আজ ভোট নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের উপকূলীয় ১২ জেলার ৭২ উপজেলার ৫৯৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল।


কিন্তু নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে ৫৮৬টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে। এসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গত ৫ মার্চ। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ ৬ ও ৭ মার্চ। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ১৩ থেকে ১৮ মার্চ। দ্বিতীয় পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে শুরু হয়ে জুন মাসজুড়ে চলবে। প্রথম দিন আজ ২৯ মার্চ নির্বাচন হবে বরিশাল জেলার বানারীপাড়ার আটটি, উজিরপুরের সাতটি, গৌরনদীর সাতটি ও আগৈলঝাড়ার পাঁচটি; পটুয়াখালী জেলার বাউফলের ১৫টি; পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদের ১০টি; বরগুনা জেলার পাথরঘাটার চারটি ও বামনার চারটি; ভোলা সদর উপজেলার ১০টি, দৌলতখানের ৯টি; ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের ছয়টি, কাঁঠালিয়ার ছয়টি; খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সাতটি, কয়রার সাতটি, পাইকগাছার ১০টি, দাকোপের ৯টি, দীঘলিয়ার ছয়টি; সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৪টি, দেবহাটার পাঁচটি, আশাশুনির ১১টি; বাগেরহাট জেলার রামপালের ১০টি, মংলার ছয়টি; নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার সাতটি এবং কঙ্বাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে।
এটা দেশের অষ্টম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথমবার এ নির্বাচন হয়। সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পৌর নির্বাচনের মতো এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও নির্দলীয় রাখতে চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দলীয় প্রভাব পুরোপুরি থাকছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচন যতই নির্দলীয়ভাবে করার কথা বলা হোক না কেন, সেখানে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ যে থাকবে_এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পৌর নির্বাচনের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দলীয় আশীর্বাদপ্রাপ্তরাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এবারের বাস্তবতা বোধ হয় এটাই। অন্যদিকে দলীয় প্রভাব বিস্তারেরও অভিযোগ উঠেছে। কয়েক স্থানে সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে।
বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে ইউনিয়ন পরিষদ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। ইউনিয়ন পরিষদে নারীর জন্য রয়েছে সংরক্ষিত আসন। এখানে নারী তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নিজের প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগ পান। তৃণমূল পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নের প্রথম ধাপ হচ্ছে এই ইউনিয়ন পরিষদ। এই পরিষদকে শক্তিশালী করা দরকার। তৃণমূল পর্যায়ের সব উন্নয়ন কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু করতে হবে ইউনিয়ন পরিষদকে। দীর্ঘদিন ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে নির্বাচন না হওয়ার কারণে এক ধরনের স্থবিরতাও দেখা দিয়েছিল বলে ধারণা করা যেতে পারে। আজ থেকে যে নির্বাচন শুরু হচ্ছে, সে নির্বাচনের ভেতর দিয়ে সেই স্থবিরতা কেটে যাবে বলে আশা করা যায়। বারবারই বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করতে হবে। স্থানীয় উন্নয়নের কেন্দ্র করতে হবে ইউনিয়ন পরিষদকে। একে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।
আজ যেসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে, সেগুলো দলীয় প্রভাবমুক্ত হোক_সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। পাশাপাশি এই নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে যেন কোনো সহিংসতা না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.