উদ্বেগের কারণ দ্রব্যমূল্য-নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রতিবছরের মতো এবারও রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া ছুটতে পারে- আশঙ্কা সে রকমই। রোজার মাস এলেই বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে দিশাহারা হতে হয় সাধারণ মানুষকে। তৈরি করা হয় কৃত্রিম সংকট।


একটি অসৎ চক্র বাজার অস্থিতিশীল করে অধিক মুনাফা লুটে নেয়। প্রতিবছর রমজানে এ চিত্রই দেখা যায়।
এমনিতেই বাংলাদেশের বাজারে একবার কোনো জিনিসের দাম বেড়ে গেলে আর কমে না। ক্ষেত্রবিশেষে কোনো জিনিসের দাম বেড়ে একটি পর্যায়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার পর অনেক সময় সেটাকেই স্থিতিশীল বলা হয়। বাংলাদেশের বাজার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, উৎসব-পার্বণের সময় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়। নানা উপলক্ষ সামনে রেখে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। শবেবরাত, রোজা, ঈদ ইত্যাদি যখনই আসে তখনই জিনিসপত্র অগি্নমূল্য হয়ে যায়। প্রতিবছরই রোজা শুরুর আগেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। আর একবার কোনো জিনিসের দাম বেড়ে গেলে তা যে কমবে না, সেটাই যেন এখন নিয়তি হয়ে দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এবারও রোজার মাসে বাজারে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া থাকবে, এমন আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। সম্প্রতি সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি বাজার পর্যালোচনা করতে গিয়ে মূল্যবৃদ্ধির কয়েকটি যৌক্তিক কারণও খুঁজে পেয়েছে। রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, সরবরাহ, মজুদ, মূল্য পরিস্থিতি ও বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা পর্যালোচনা সংক্রান্ত বৈঠকের মূল্যায়নে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং ব্যাংকের উচ্চ সুদের হারকে দায়ী করা হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে বাড়তে যেখানে গিয়ে স্থিতিশীল হয়েছে, সেটাই এখন সাধারণের আয়ত্তের বাইরে। এরপর রোজার মাসে নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটলে ভোক্তাদের ভোগান্তি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। প্রতিবছর রোজা আসার আগেই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। মূল্যবৃদ্ধির এ প্রবণতা কখনো কোনোভাবেই রোধ করা যায়নি। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, রমজানে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু বাজারে গিয়ে হতাশ হতে হয় ভোক্তাদের।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, এ বছর রমজানে ভোজ্য তেলের সংকট দেখিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করা হতে পারে। গত রমজানে যেমনটি করা হয়েছে চিনির ক্ষেত্রে। বাজারে এখন গত রমজান মাসের তুলনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্যের দাম অনেক বেশি। গত রমজানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ছিল ১০৯ থেকে ১১০ টাকা। এখন ১১৮ থেকে ১২০ টাকা। আর গত রমজানের তুলনায় পাম অয়েলের দামও বেড়েছে। রমজানে আরেক অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছোলার বর্তমান দাম ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি।
দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার কথা সব সময় বলা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে কিছু পূর্বশর্ত পূরণ করতে হয়। তা পূরণ হচ্ছে কি না, সেটাই মূল বিবেচ্য বিষয়। এখনো সময় আছে। সরকার ইচ্ছা করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। তা ছাড়া সরকারের হাতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনও রয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে। এখনই লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সাধারণ মানুষ সংকটেই থাকবে। নিশ্চয়ই সরকার সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.