হরতালের ফাঁদে দেশ! বিরোধীদলের ফাঁদে সরকার! by ফজলুল বারী

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মূল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে গত নির্বাচনে ভোট নিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রতিপক্ষ বিএনপি ভোট করেছে এর বিপক্ষে। এসব নিয়ে পরবর্তী নানা ঘটনা, ট্রাইবুন্যাল নিরপেক্ষ কিনা, আন্তর্জাতিক মানের কিনা এসব একশ’ বিতর্কে জনসমক্ষে ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেখে বিএনপি এতে কৌশলের আশ্রয় নেয়।

এ কারণে গোলাম আযমের গ্রেফতার নিয়ে তারা কোনো বিবৃতিও দেয়নি। দলের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধাপরাধী নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গ্রেফতার নিয়ে হরতাল না করলেও ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হবার ঘটনা নিয়ে একের পর এক হরতাল দিতে শুরু করেছে!
সরকারের নানা ব্যর্থতায় যুদ্ধাপরাধের বিচারের ঐতিহাসিক বিষয়টিও পরিকল্পনা মাফিক এর মাঝে সেকেন্ডারি ইস্যু করে দিতে সক্ষম হয়েছে বিএনপি! মোট কথা, আওয়ামী লীগের মতো ঝানু কথিত দলটিও পড়ে গেছে বিএনপির রাজনৈতিক ফাঁদে! ইলিয়াস আলীর জীবন অবশ্যই মূল্যবান। কিন্তু হরতালকে কেন্দ্র করে এর মাঝে যে দুটি নিরীহ শ্রমজীবী মানুষের প্রাণ গেছে, তাদের জীবন কি মূল্যহীন? এমন খুনের ঘটনা যারাই ঘটাক, তাতে কেন দেশের সরকারি অথবা বিরোধীদলের প্রাণ কেন কাঁদে না? এ কোন দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র হতে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ?

বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো দেখার সুযোগ আমার নেই। দেশ থেকে একজন জানালেন, হরতাল হয়নি, জনজীবনে হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি, এমন চিরাচরিত অসত্য কোরাস গেয়েই চলেছে জনগণের টাকায় পরিচালিত বিটিভি! বিএনপি-জামায়াত সমর্থক অথবা পেইড বুদ্ধিজীবী যাদের মাঝে মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পক্ষে এক-দু’লাইন না বললে-লিখলে সুশীল নাগরিকের মর্যাদা থাকে না, তারাও মুখোশ খুলে রেখে এখন সাহসী বলা শুরু করেছেন, এই সরকারের নেতৃ্ত্বে দেশ গেলো দেশ গেলো! এই সরকারের পর তাদের পেয়ারের যারা ক্ষমতায় আসবেন, তাদের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কি হবে তা কিন্তু এই জ্ঞানপাপীরা বলেন না!

বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসা এ সরকারের একের পর এক ভুল নিয়ে বিরতিহীনভাবে লিখেই চলেছি। কিন্তু কে কার কথা শোনে! নতুন এক ডিজিটাল স্বপ্নের নিয়তে ভোট নিয়ে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা প্রথম শুরু করেন অমুককে সাইজ তমুককে শিক্ষা দেবার কর্মসূচি! একটি গতিশীল সরকার পরিচালনায় মেধা-যোগ্যতা-অভিজ্ঞতার বিষয়টি শুরুতেই তার এ ধরনের প্রতিহিংসামূলক মনোবৃত্তির নিচে ধামাচাপা পড়ে যায়! উপদেষ্টা পরিষদ আর একদল অজানা-অচেনা অনুগত নতুনদের নিয়ে তার সরকার পরিচালনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা গত তিন বছরে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। দুনিয়ার সভ্য-গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে কোথাও কোনো ভুল ধরা পড়লে তা স্বীকার করে নতুন যাত্রার নিয়ম চালু আছে। কিন্তু আমাদের দেশে একবার ক্ষমতায় চলে যেতে পারলে কেউ কোনো ভুল করেন না! অথবা ভুল স্বীকার করেন না! সে কারণে গত তিন বছরে যে আওয়ামী লীগ যে চেনা পথঘাট সব হারিয়ে ঘরে ঢুকে গেছে ক্ষমতার মধ্যে! থানা আর ইউএনও, জেলা প্রশাসকের অফিসের মধ্যে! এসবের প্রমাণ দেশের ইউপি, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে মিললেও এ দল যে এরই মাঝে ব্যর্থ-অনুজ্জ্বল তা এর নেত্রী শেখ হাসিনা কখনো স্বীকার করেননি! কোথাও কোনো ভুল-ব্যর্থতা স্বীকার করলেতো সেখান থেকে নতুন পথ খুঁজে নেবার সুযোগ থাকে! কিন্তু আওয়ামী লীগ নেত্রী তা কখনো স্বীকার না করাতে পথ হারানো এ দল আর নতুন পথের দিশা খুঁজে পায়নি অথবা খুঁজে নিতে পারেনি। এরপরও বিরামহীন চলে আসছে টেন্ডারসহ নানা দুর্নীতি-সন্ত্রাস!

শেয়ারবাজার লুটপাটকারীদের বিচারে অনীহার কারণে এ সরকার শুরুতেই  দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নৈতিক অবস্থান হারিয়েছে। নতুন বিপুল বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও কুইক রেন্টাল বিদ্যুতসহ নানা বাড়তি ব্যয়ের সমালোচনার জবাব দিতে পারেনি। এতে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রশংসাও তাই খেয়ে ফেলেছে সমলোচনার পিঁপড়েরা! পায়ের নিচের মাটি ঠিক না থাকলে কি হবে সমুদ্র জয়ে? 
এর আগে মণিপুর স্কুলে এমপি কামাল মজুমদারের ভর্তি বাণিজ্য ধরা পড়ার পর স্পষ্ট হয় দলীয় এসব দুর্বৃত্ত লোকজনের কাছে শিক্ষামন্ত্রী কতো অসহায়! সুরঞ্জিত কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পর প্রকাশ্য হয় কোটি কোটি বেকারের দেশে এখনও কি মহাসমারোহে চলছে,  নির্দয়-নিষ্ঠুর নিয়োগ বাণিজ্য! বছরের পর বছর ধরে সরকারের পর সরকার ধরে অভাগা দেশটায় নিয়োগ বাণিজ্যের নামে এ দুর্বৃত্তপনা চলে আসছে! যেখানে যোগ্যতা-মেধা নয়, টাকা ছাড়া কোন চাকরি হয় না। চট্টগ্রাম থেকে লোকজন ঢাকা এসে অর্ধ শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের নেতাকে জানিয়েও তার মোহমুক্তি ঘটাতে পারেননি!

গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিয়োগ বাণিজ্য নামের এই দুর্বৃত্তপনার অবসান, প্রতি পরিবারের একজনকে চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ যে তার প্রতিশ্রুতিতে অটল-সৎ থাকেনি, তা উৎকট প্রমাণ বেরিয়েছে, সুরঞ্জিতের ঘটনায়। কিন্তু এরপর দেখা গেল টাকা এপিএসের না সুরঞ্জিতের সে বিতর্কে সবাই ব্যস্ত হয়ে গেলেন! নিয়োগ বাণিজ্য-দুর্বৃত্তপনার বিষয়টি চাপা দিয়ে গেলেন সবাই! অতঃপর জনমত আর মিডিয়ার চাপে দায় নিয়ে সুরঞ্জিতকে পদত্যাগ করানো হলেও দফতরবিহীন মন্ত্রী নিয়োগের মাধ্যমে আবার দু্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতির পথ হারিয়েছে আওয়ামী লীগ! কারণ, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন মন্ত্রীর দুর্নীতির বিচার হয় না। অতএব, সুরঞ্জিতের ঘটনারও বিচার হবে না। আইওয়াশের চেষ্টা চলতে পারে। চট্টগ্রামের রেলে আজান দিয়ে যত নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে, মন্ত্রী হিসাবে এসবের দায়-দায়িত্ব অবশ্যই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের।

ইলিয়াস আলীর ঘটনার পটভূমি দেশে একদিনে সৃষ্টি হয়নি। রক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজনীতি করা বিএনপি দেশে র্যাব নামের নতুন এলিট ফোর্স সৃষ্টি করে গেছে। এরও আগে ডিজিএফআই, এনএসআই এসবকে কাজ লাগিয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হয়রানির জিয়া-এরশাদীয় ধারা বিএনপি-আওয়ামী লীগ যখন যে ক্ষমতায় এসেছে তারা তা অনুসরণ, কাজে লাগিয়েছে। সর্বশেষ ১/১১’এ উভয়দল এর শিকার হলেও প্রক্রিয়াটি কিন্তু এখনও বহাল! যেমন আওয়ামী লীগের চালু করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিরুদ্ধে দলগুলো বিরোধীদলে গেলেই শুধু বলে। সরকারে গেলে তা বেমালুম ভুলে চলে! গত বিএনপি-জামায়াত আমলে অপারেশন ক্লিনহার্ট, র্যাবকে দিয়ে ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার এমন নানা নামে বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের আরেক বিধবংসী সংস্কৃতি চালু করা হয়। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা তখন ফতোয়া দিয়ে বলেছেন, এসব ক্রসফায়ার-এনকাউন্টারে যারা মারা যাচ্ছেন, তারা সবাই সন্ত্রাসী। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার দুর্নীতির কারণে এদের গ্রেফতার করলে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায়। তাই এদের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ার-এনকাউন্টার এসব ঠিক আছে। আবার আন্তর্জাতিক ফোরাম, দেশের মিডিয়ার এসব নিয়ে বরাবর মিথ্যা বলে সরকার। এসব ঘটনার তদন্তের নামে মিথ্যা রিপোর্ট দেয়। এই র্যাব আর বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে থাকতে কি বলতো আর এখন এরা কি বলে এসবের কোনো সৎ জবাব এ দলটির নেতাকর্মীদের কাছে আছে কি? আজ র্যাবের তৎপরতার বিরুদ্ধে মুখর বিএনপি লিমন ইস্যুতে টু শব্দটিও করেছে কি? আগামীতে আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে গেলে যখন এর নেতাকর্মীদের লিমনের মতো পা কাটা যাবে, তখন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনদের বক্তব্য কি হবে?

র্যাবের চলমান ক্রসফায়ার-এনকাউন্টারের পাশাপাশি এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একেকটি জ্বলজ্যান্ত মানুষ নিখোঁজ গুমের নতুন এক ভয়াল সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে। এই গুমের তালিকায় বিএনপির চৌধুরী আলমের মতো আওয়ামী যুবলীগের এককালীন পাণ্ডা লিয়াকত হোসেনও আছেন। এক খবরে দেখলাম, চট্টগ্রামে গত তিন বছরে যত লোক গুম হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের। এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিধারা জানি বলেই বলছি, আগামীতে আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে গেলেও এই গুম চলবে। কিন্তু এখন এই গুম নিয়ে আজকের সরকারি নেতারা অবিরাম অসত্য বলে চলেছেন! চাপে পড়লে বলছেন, তারা এসব জানেন না, এসবের সঙ্গে জড়িত না, বিরোধীদল নাটক সাজাচ্ছে, বিএনপি আমলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন গুম-অপহরণ হয়েছেন, এসব কোরাস গেয়েই চলেছেন।

ক্ষমতায় উনারা, কিন্তু একের পর এক মানুষ নিখোঁজ-গুম হচ্ছেন, তা তারা জানেন না, সাগর-রুনি খুন হলে জানেন না, সৌদি কূটনীতিক খুন হলে জানেন না, এসব শুধু বললেই ভোটার জনগণ তা মানবে কেন? তা আগামীতে বিরোধীদলে গেলে যে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে এসব গুম-খুন বিপুল বিক্রমে চলবে, তখন এসব নিয়ে কি বলবেন এই নেতারা? যেমন ক্ষমতায় থাকতে হরেক দুর্বৃত্ত শাসন চালানো বিএনপি এখন আবার ক্ষমতায় গেলে এই করবো সেই করবো এমন হাজার কিছু বললেও কোথাওতো বলছে না যে, তখন ইলিয়াস আলীকে তুলে নেওয়া র্যাব ভেঙ্গে দেওয়া হবে, তখন আর কেউ গুম হবে না, ইত্যাদি!

যেমন, এখন সারাক্ষণ হরতালের বিরুদ্ধে বললেও আওয়ামী লীগ কোথাও বলছে না যে তারা আগামীতে বিরোধীদলে গেলে আর হরতাল করবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন একবার এমন একটি কথা বললেও, এর পরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল তা সংশোধন করে বলেছেন, এটি তাদের দলীয় বক্তব্য না!

অতএব আগামীতেও হরতাল-গুম সবকিছুই মহাসমারোহ চলবে! এমন একটি নৈরাজ্যের শপথের দেশে কে আর বিনিয়োগ করতে যাবে?

ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হবার পর খালেদা জিয়া বললেন, র্যাব তাকে তুলে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে তাদের কাছে প্রমাণ আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, এটা ঠিক না। র্যাবকে খালেদা জিয়া মানুষ মারা শিখিয়েছেন, আর তিনি শেখাচ্ছেন মানবাধিকার! খালেদা জিয়ার নির্দেশে ইস্যু সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইলিয়াস আলী লুকিয়ে থাকতে পারেন, এমন কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী! তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, সেইসঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রীও, তার কাছেইতো দেশের সবচেয়ে বেশি তথ্য থাকার কথা। খালেদা জিয়ার নির্দেশে লুকিয়ে থাকলে গত ৬ দিনেও তার সমগ্র বাহিনী তাকে খুঁজে বের করতে পারে না কেন? না চৌধুরী আলমের মতো ভাগ্যবরণ হয়ে গেছে ইলিয়াস আলীরও? এখন যে দেশে আবার একের পর এক হরতাল শুরু হয়েছে। এর মাঝে প্রাণ হারিয়েছেন দু’জন নিরীহ শ্রমজীবী মানুষ, এইচএসসি’র মতো গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা পিছিয়েছে-ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এসব নিয়ে দেশের প্রধান বিরোধীদলের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। অতএব, দায়িত্বের পুরোটাইতো এখন সরকারের কাঁধে!

এ অবস্থায় দেশের মানুষকে আশাবাদী করার মতো কিছু করতে পারছে কি সরকার? বারবার একই কথা লিখি, এ সরকারের কাছ সবচেয়ে বড় আশা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। কারণ, এ বিচার এ সরকারের আমলে যা হবে, আর কোনোদিন তা হবে না। আবার রক্তাক্ত জাতীয় পতাকা উঁচিয়ে দাপিয়ে বেড়াবে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর দল! বিএনপি-জামায়াতের এসব বুদ্ধিজীবী, অথবা কাদের সিদ্দিকী-আ স ম রবের পাশে টকশোতে বসে আমাদের জ্ঞান দেবে! পণ্ড হয়ে যাবে স্বজন হত্যার বিচারের অপেক্ষার চল্লিশ বছরের সব আয়োজন!

সুরঞ্জিত কেলেঙ্কারি, ইলিয়াস আলী নিখোঁজ এসব ঘটনা যে যেভাবে ঘটাক, সরকারতো এসব ইস্যুতে জনগণের সামনে সত্যনিষ্ঠ থাকতে পারেনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভণ্ডুলের বিএনপির পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে! এখন একের পর হরতাল দিতে পারছে বিএনপি! সংসদ ভবন এলাকার সাব-জেলে পাশাপাশি থাকতে খালেদা জিয়ার জন্য রান্না করা খাবার পাঠাতেন শেখ হাসিনা। আর এখন তিনি একের পর এক আন্দোলনের ইস্যু খালেদার হাতে তুলে দিচ্ছেন! অথবা এসব কি তাকে দিয়ে করাচ্ছেন তার সরকার-এজেন্সির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা খালেদা জিয়ার লোকজন?

পুরনো যুদ্ধাপরাধী, ফতোয়াজবাজের পাশাপাশি আরও কিছু  কুড়িয়ে পাওয়া রটেন (পচাগলা) লোককে নিয়ে তিনি হরতাল দিয়ে শুরু করেছেন নতুন এক রাজনৈতিক যাত্রা। এখন বিদেশি মুরব্বিরা এগিয়ে এসে আলোচনার চাপ বাড়াবে। শুনলাম, আগামীতে শুধু পেছানো হবে তারেকের মামলার তারিখ!

এখন আগামীর আলোচনায় কেউ যাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুটিকে শর্তের মধ্যে ঢোকাতে না পারে সে পাহারা দিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা বিভক্ত, এ ইস্যুতে শহীদ পরিবারের সদস্য, নতুন প্রজন্ম, প্রগতিশীল রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতাকর্মী, ব্লগারদের সুদৃঢ় ঐক্য চাই। এক সময় মিডিয়ার লোকজনের ৯৯ শতাংশ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছিলেন। বিপক্ষের লোকজন লুকিয়ে আড়ালে-আবডালে কথা বলতেন। এখন তারা অবস্থা পালটে ফেলেছে! জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে গেছে যুদ্ধাপরাধীদের নিরাপদ অভয়াশ্রম! ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতেও তাদের শক্ত অবস্থান দাঁড়িয়ে গেছে। সারা দেশের মিডিয়ার অবস্থাও এখন এমন কম-বেশি এক! এসব নতুন পরিস্থিতি মাথায় রেখে পাহারা চালিয়ে যেতে হবে।

জনপ্রিয় এক পত্রিকার ওয়েবপেইজে যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ নানা ইস্যুতে তরুণ পাঠকদের নানা মন্তব্য পড়ে মনে হবে, দেশের বেশিরভাগ তরুণ এখন যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিপক্ষে অথবা বেছে বেছে তাদের বক্তব্যগুলো প্রচার করা হচ্ছে অথবা পত্রিকাটিই তাদের হয়ে গেছে? এ বক্তব্যটিকে কেউ যেন ব্যক্তিগতভাবে না নেন। আমি আমার পর্যবেক্ষণ বললাম মাত্র, আমার এ ধারণা যেন সত্য না হয়।

ফজলুল বারী : সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.