ঈশ্বর গুপ্তের ঢাকা-মানুষ মশার উৎপাত থেকে বাঁচতে চায়

রেতে মশা দিনে মাছি/এই নিয়ে কোলকেতায় আছি'- কবি ঈশ্বর গুপ্তের ব্যঙ্গাত্মক রচনার কথা বহুল শ্রুত। কলকাতা মহানগরীর দুরবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে তা কটাক্ষ করে লিখেছিলেন। যাঁরা রাজধানী শহর এই ঢাকায় বসবাস করেন, তাঁদের অবস্থাটা কী কিংবা জনবিড়ম্বনার তালিকা কত দীর্ঘ- এ এক অন্তহীন প্রশ্ন বটে।


ঘর থেকে দুই পা ফেলে বের হওয়ামাত্র নানাবিধ বিড়ম্বনার প্রাচীর মানুষের সামনে ভেসে ওঠে। ঘরে থাকার সময়ও বিপত্তির শেষ নেই। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সংকটের পাশাপাশি মশার সীমাহীন উৎপাত ঘরের জীবনকেও অতিষ্ঠ করে রেখেছে। গতকাল ২২ এপ্রিল সহযোগী একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে এ চিত্রই ফুটে উঠেছে।
এ মহানগরীতে মশার উৎপাত নতুন কিছু নয় বটে, কিন্তু দিন দিন যে হারে উৎপাত বাড়ছে, যন্ত্রণার মাত্রাও সে হারেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রাজধানীতে মশা নিধনের পেছনে খরচ ক্রমে বাড়লেও উৎপাত কমছে না। মহানগরীর কোথাও ঠিকমতো ছিটানো হচ্ছে না মশার ওষুধ। ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর কার্যক্রম একেবারেই এলোমেলো হয়ে গেছে। মশা নিয়ন্ত্রণে বছরে যে বাজেট ডিসিসির থাকে, এর যথাযথ ব্যবহার নিয়ে অভিযোগের খতিয়ান ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। আরো অভিযোগ আছে, ওষুধে ভেজাল আর এর পাশাপাশি যে পরিমাণ ওষুধ কেনা হয়, ছিটানো হয় এর যৎসামান্য। এ ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে যেসব বক্তব্য পাওয়া যায়, এর সঙ্গে বাস্তবতার অমিল বড় বেশি। মশা বিধন ও তৎসংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রমই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের টাকা মশক নিধন কার্যক্রমে ব্যয় হলেও এর বিপরীতে ফল শূন্য। মশার উৎপাতে এই মহানগরবাসীর জীবন অতিষ্ঠ। ঘিঞ্জি পাড়া-মহল্লা থেকে অভিজাত এলাকার বাসাবাড়ি, স্কুল-কলেজ, দোকানপাট সর্বত্রই মশার দাপট। এও অভিযোগ আছে, রাজধানীতে ময়লা অপসারণের কাজ ঠিকমতো হয় না। ডোবা-নালা এবং ড্রেনগুলো অপরিচ্ছন্ন। এ সবই হচ্ছে মশার আশ্রয়স্থল ও বংশবিস্তারের ক্ষেত্র। বর্ষা মৌসুম আসন্ন। বর্ষা পরবর্তী সময়ে মশার উৎপাত আরো বাড়ে, অতীত অভিজ্ঞতা এরই সাক্ষ্যবহ। এর মধ্যে এডিস মশার উপদ্রবে প্রায় প্রতিবছরই দেখা দিচ্ছে ডেঙ্গু। রাজধানীতে এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে মশার উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ঠ নয়। মানুষ করের বিনিময়ে যেন লাভ করেছে দুর্বিষহ জীবন। এ মৌসুমে কিউলেক্স উপদ্রব বাড়ে। এর পরও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। এমতাবস্থায় প্রশ্ন হচ্ছে, কিউলেক্স মশা কি ওষুধ-প্রুফ হয়ে জন্ম নিচ্ছে, নাকি ব্যবহৃত ওষুধের নিধন ক্ষমতাই নেই?
মশক নিধন অভিযান প্রকৃতই কতটা কার্যকর এবং প্রয়োজনীয় জনবল ও মেশিনসহ নিধন কার্যক্রমে সহায়ক উপকরণের অপ্রতুলতা কতটা, এসব খতিয়ে দেখে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দায়দায়িত্ব যাদের, তাদের জবাবদিহিতা-দায়বদ্ধতার বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন মহলের পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে, এমন আশ্বাস-প্রতিশ্রুতিতে মানুষ আর আস্থা রাখতে পারছে না। বিভক্ত ডিসিসির দায়িত্বশীলরা নাগরিক সেবা যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন কেন, এ প্রশ্নেরও সুরাহা হওয়া দরকার। নগরবাসী স্বস্তি চায় আর তা নিশ্চিত করার দায় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট মহলের।

No comments

Powered by Blogger.