বাজার পর্যবেক্ষণ-অসাধুদের সাধু সাজার সুযোগ!

ঘটা করে আজ চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৭টি বাজার পর্যবেক্ষণ শুরু করার কথা রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচটি পর্যবেক্ষণ কমিটি লাগাতার তিন দিন বাজার পর্যবেক্ষণ করবে। তবে ১২ জুলাই পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন এবং তাদের বাজার মনিটরিংয়ে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই তা জানাজানি হয়ে যায়। এতে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের সাধু প্রমাণ করার সুযোগ পেলেন।


বাজার পর্যবেক্ষণের বিষয়টি গোপন থাকার কথা এবং এটা যে জেলা প্রশাসন জানে না তাও নয়। এরপরও প্রশাসন এ কাজটি করল কেন? তদুপরি, বাজার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করে এভাবে হঠাৎ হঠাৎ পর্যবেক্ষণ করে সুফল পাওয়াটা দুষ্কর। বাজার পর্যবেক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হলো পাকা রসিদ ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী পণ্য বেচাকেনা করছেন কি-না, ওজনে কম দেওয়া হচ্ছে কি-না, ভেজাল পণ্য বিক্রি হচ্ছে কি-না, নির্ধারিত দামের বাইরে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে কি-না ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণ করে অপরাধীদের শাস্তি বিধান, ভোক্তাসাধারণের স্বার্থ রক্ষা করা এবং এর মাধ্যমে বাজারকে স্থিতিশীল রাখা। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করে এবং জানান দিয়ে অনিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করার নীতি নেওয়ায় গোটা ব্যবস্থার আসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হতে বসেছে। এতে বিভিন্ন সময়ে যথেচ্ছভাবে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে কিছু অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ী বাজারকে অস্থিতিশীল করে রাখতে পারছে। আর এদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়ায় অন্য ব্যবসায়ীরাও পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, ভেজাল পণ্য বিক্রিসহ অনৈতিকভাবে অতিমুনাফা লাভের পথ ধরে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এতে পণ্যমূল্য যেমন ক্রেতাসাধারণের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে, তেমনি মানসম্পন্ন পণ্য ক্রয়ের সুযোগ থেকে ক্রেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা চট্টগ্রামে বাজার পর্যবেক্ষণের জন্য গৃহীত পদক্ষেপকে নানা সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও স্বাগত জানাই। তবে পর্যবেক্ষণ টিমের কার্যক্রম প্রশাসনের পক্ষ থেকেই আগাম জানান দেওয়ার ঘটনাকে আমরা অনভিপ্রেত ও নিন্দনীয় বলে মনে করি। বাজার পর্যবেক্ষণ যাতে নিয়মিত হয় সে ব্যবস্থা করার দায়িত্ব প্রশাসনের। এ জন্য নাগরিক সমাজেরও সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।
 

No comments

Powered by Blogger.