বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি-মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা

সরকার একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, অন্যদিকে পিডিবির প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বিদ্যুতের এই মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়বে।


কারণ, শিল্প উত্পাদন ও পরিবহনে ব্যয় বাড়বে। আর সাধারণ মানুষের ওপর চাপ পড়বে। মাস শেষে অতিরিক্ত বিদ্যুত্ বিল দিতে গিয়ে আয়-ব্যয়ের টানাপোড়েনে অনেক পরিবারের জীবন দুর্বিষহ হবে। এ যে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা!
পিডিবি দাম বাড়াতে চায়, কারণ গ্যাস-সংকটের কারণে এখন তাদের ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলে বিদ্যুত্ উত্পাদন করতে হচ্ছে। যেখানে গ্যাসে ব্যয় হতো দুই টাকা, সেখানে এখন জ্বালানি তেলের পেছনে ব্যয় হয় আট থেকে ১৫ টাকা। তাই ব্যয় পোষানোর জন্য পিডিবি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। প্রশ্ন ওঠে, এত দিন কেন গ্যাস অনুসন্ধানে যথেষ্ট বিনিয়োগ করা হয়নি? নতুন গ্যাসকূপ খনন ও উত্তোলনে এখন বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি দেশের কয়লা ব্যবহার করেও কম উত্পাদন-ব্যয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা সম্ভব। এদিকে নজর দিতে হবে।
বিদ্যুতের দাম বাড়ার আগে হিসাব করে দেখা দরকার, অপচয় ও দুর্নীতি রোধে পিডিবি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে কি না। বিদ্যুতে পদ্ধতিগত লোকসান (সিস্টেম লস) এখনো প্রায় ১৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী এই লোকসানের হার সাত-আট শতাংশের বেশি হওয়ার কথা নয়। বিদ্যুত্ উত্পাদনের যন্ত্রপাতি ও বিতরণ লাইনের জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে আমাদের দেশে পদ্ধতিগত লোকসান ১২ শতাংশের বেশি হতে পারে না। তাহলে বাকি ছয়-সাত শতাংশ বিদ্যুত্ স্রেফ চুরি হয়ে যাচ্ছে। তার ওপর আছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা। এগুলো যদি কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হয়তো এইু মুহূর্তে হতো না।
তার পরও যুক্তি দেওয়া হতে পারে যে পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল প্রভৃতি দেশে বিদ্যুতের দাম যেহেতু আমাদের চেয়ে বেশি, তাই কিছু দাম বাড়াতে দোষ নেই। কিন্তু ওই সব দেশে তো এমন ঘন ঘন বিদ্যুত্ চলে যায় না। সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দাম বাড়ালে বলার কিছু থাকত না। কিন্তু সে রকম কোনো সম্ভাবনা এখনো সুদূর পরাহতই মনে হয়।
সরকার বলছে বটে যে সামনে সুদিন আসছে, বিদ্যুতে দেশ নাকি ছেয়ে যাবে। কিন্তু প্রতিবারই সেই সুদিনের সম্ভাব্য আগমন কয়েক মাস করে পেছানো হয়। এখন বলা হচ্ছে, এ বছরের শেষ নাগাদ বিদ্যুত্-পরিস্থিতিতে একটা স্থিতিশীলতা আসতে পারে। তার মানে, এই বছরটাও লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে কাটাতে হবে। বিদ্যুতের বেশি দাম দিয়ে কি মানুষ কষ্ট কিনবে?
দাম বাড়াতে হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা দরকার। বেশি দামে খারাপ বিদ্যুেসবা কিনতে বাধ্য করা একটি অন্যায়। এই অন্যায় দূর করার প্রতি সরকারকে মনোযোগী হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.