ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র অভিঘাত by এরিক এস মারগোলিস

ভারত তার প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় দূরবেধী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। এর ফলে পরমাণু ওয়ার হেড বহনে সক্ষম ভারতের ৫ হাজার কিলোমিটারের এই অগি্ন-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মধ্যে চীনের বেইজিং ও সাংহাইয়ের মতো শহরগুলো এসে গেল। ভারতের ইতিপূর্বেকার সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটারের অগি্ন-৩ ক্ষেপণাস্ত্র চীনের উপকূলীয় শহরগুলোতেই আঘাত হানার ক্ষমতা ধরত।


তবে অগি্ন-৫ ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ভুলভাবে আন্তঃমহাদেশীয় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। গত ১৫ এপ্রিল উত্তর কোরিয়ার যে ক্ষেপণাস্ত্রটির পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে সেটিও দূরপাল্লার ছিল না। কিছু মিডিয়া অতিরঞ্জিতভাবে এটিকে আন্তঃমহাদেশীয় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম বলে প্রচার করে। প্রকৃত আইসিবিএমের পাল্লা হওয়ার কথা কমপক্ষে ৮ হাজার কিলোমিটার এবং সম্ভবত ১২ হাজার কিলোমিটার। ভারত ও উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এদিক থেকে বিচার করতে গেলে মাঝারিপাল্লার দূরবেধী ক্ষেপণাস্ত্র (এমআরবিএম)। এই দুই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনা করাটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মাঝারি পাল্লারটি যুদ্ধস্থলের অস্ত্র আর দূরপাল্লারটি সমগ্র বিশ্বকেই হুমকির মধ্যে রাখতে সক্ষম। ভারত তার অগি্ন-৫ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সাফল্যে গর্বিত। একজন বিজ্ঞানী তো দাবি করে ফেলেছেন যে, এই ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্র শক্তিতে পরিণত করেছে। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী চীন কিন্তু ভারতের অগি্ন-৫ উৎক্ষেপণকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে ছাড়েনি।
আমি বিভিন্ন সময়ে আমার লেখায় ভারত যে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তি হয়ে উঠতে যাচ্ছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেছি। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত আমার লেখা 'ওয়ার অ্যাট দি টপ অব দি ওয়ার্ল্ড' নামক পুস্তকে ভারতের ক্রমবর্ধমান সমরসজ্জা বিশ্লেষণ করে এক সময় ভারত ও চীন তাদের অমীমাংসিত সীমান্ত নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। আজ ভারত বিশ্বের প্রধান অস্ত্র আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনীতে মাঝারিপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ তিনটি বিমানবাহী রণতরী ও পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ সংযুক্ত করছে, তাদের রয়েছে একটি শক্তিশালী বিমান বাহিনী ও ১৩ লাখের মতো বিশাল এক সামরিক বাহিনী। ভারতের রয়েছে দীর্ঘ স্থল ও জল সীমান্ত। এর জন্য প্রয়োজন তার সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী।
ভারতের মতো একটি দারিদ্র্যপীড়িত দেশের নিউইয়র্ক, প্যারিসে পেঁৗছাতে পারে এবং পারমাণবিক ওয়ার হেড বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োজন, সেটা এখনও রহস্যঘেরা। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে মর্যাদা বৃদ্ধি এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ অর্জন। এটাও তো ঠিক যে, এই ক্ষমতা অর্জনের ফলে একটা সময় মধ্যপ্রাচ্যে জ্বালানি তেল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এবং মধ্য এশিয়াকে নিয়ে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ভারত সংঘাতে লিপ্ত হতে পারে। ভারতের নিক্ষেপণযোগ্য পারমাণবিক অস্ত্র অন্যান্য দেশের মতো, জাতীয় জীবন বীমা পলিসির মতো কৌশলগত নিরোধক ক্ষমতা হিসেবে কাজ করবে। নয়াদিলি্ল তার মহাকাশ কর্মসূচির আড়ালে আইসিবিএম উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এখন অবশ্য ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কাছ থেকে পারমাণবিক প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়ে থাকে। ভারতের অনুচ্চারিত আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের নাম 'সূর্য'। এটির পরিকল্পিত পাল্লা ১২ হাজার কিলোমিটার বলে ধারণা করা হয়। পিএসএলভি মহাকাশ উৎক্ষেপক ও অগি্ন-৫ সমন্বিত করেই আইসিবিএম তৈরির কাজ চলছে। তবে এর সব বিষয়ই গোপনীয়তার সঙ্গে সম্পন্ন হচ্ছে। ভারতের নৌ-পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পারমাণবিক হামলার প্রত্যুত্তরে সক্ষম। এটা সমুদ্র থেকে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের রাজধানীতে হামলা চালানোর সামর্থ্যও দিয়েছে ভারতকে।

এরিক এস মারগোলিস :মার্কিন প্রখ্যাত সাংবাদিক। খালিজ টাইমস থেকে ভাষান্তরিত

No comments

Powered by Blogger.