বন কর্মকর্তাদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা-সংরক্ষিত বনে রাস্তা

চোরাচালানি বা পাচারকারীরা সাধারণত কাজ করে গোপনে। তবে এসব গোপন আর অবৈধ কাজ যাদের ঠেকানোর কথা, তাদের সঙ্গে যদি চোরাকারবারিদের ‘সুসম্পর্ক’ থাকে, তবে লুকোছাপার আর প্রয়োজন পড়ার কথা নয়। কক্সবাজারের রামু উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রাস্তা তৈরির বিষয়টিও সে কারণে লুকানো কোনো বিষয় নয়।
বনের মধ্য দিয়ে পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে রাস্তা, যে রাস্তা দিয়ে ট্রাক, ভ্যান সবই চলে। বন বিভাগের লোকজনও জানেন। প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে সে ছবি। কেন এই রাস্তা? বন বিভাগের লোকজন যে ব্যাখ্যাই দেওয়ার চেষ্টা করুন না কেন, রাস্তাটি তৈরির মূল কারণ হচ্ছে সহজে কাঠ পাচার করা।
দেশের ‘সংরক্ষিত’ বা ‘অসংরক্ষিত’ সব বন থেকেই কমবেশি কাঠ পাচার হয়, গাছ কাটা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বন বিভাগের লোকজনের সহযোগিতাতেই এই অপকর্মগুলো হয়ে থাকে। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের খুশি করে নানা কায়দা ও কসরত করে চোরাচালানিদের বন থেকে কাঠ বের করতে হয়। কিন্তু রামু উপজেলার বনাঞ্চল থেকে যারা গাছ কেটে পাচার করতে চায়, তারা কোনো ঝামেলায় যায়নি। সহজে কাঠ পাচারের জন্য তারা রাস্তাই বানিয়ে নিয়েছে!
নিয়ম অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনের মধ্যে কোনো সড়ক থাকতে পারে না। কিন্তু রামু উপজেলার রাজারকুল বন বিভাগের আপাররেজু বিটের সংরক্ষিত বন দিয়ে যে রাস্তা তৈরি হয়েছে, তা শুধু স্থানীয় জনগণের হাঁটাচলা নয়, বরং ট্রাক চলাচলের উপযোগী করে তৈরি। এই রাস্তার পক্ষে বন বিভাগের দুই কর্মকর্তার সাফাই ধরনের মন্তব্যের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, তা অনুমান করতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। এক কর্মকর্তা বলেছেন, জনগণের চলাচলের সুবিধার জন্য রাস্তাটি বন্ধ করা হচ্ছে না। আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, বনের কাছাকাছি কিছু ঘরবাড়ি থাকায় এবং তাঁদের চলাচলের বিকল্প রাস্তা না থাকায় এটি খোলা রাখা হয়েছে। ‘জনদরদি’ বন কর্মকর্তা বটে!
জনগণের দোহাই দিয়ে এই রাস্তা আসলে কী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা সবারই জানা। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ভাষায়, প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে আপাররেজু সংরক্ষিত বন থেকে জ্বালানি কাঠ কাটা ও সোনাইছড়ি থেকে পাথর ওঠানোর ‘মহোৎসব’ শুরু হয়। সংরক্ষিত বনে যেহেতু রাস্তা থাকতে পারে না, তাই এই রাস্তাটি বন্ধ করার বিকল্প নেই। পাশাপাশি এটাও জোরালোভাবে তদন্ত করে দেখা উচিত, রাস্তা বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে দুই বন কর্মকর্তা কেন এত ‘জনদরদি’র ভূমিকায় নামলেন!

No comments

Powered by Blogger.