পবিত্র কোরআনের আলো-জ্ঞানীরা সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে

১৯০. ইন্না ফী খালকি্বচ্ছামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্বি ওয়াখতিলা-ফিল্লাইলি ওয়ান্নাহা-রি লাআ-ইয়াতিল্ লিঊলিল আলবা-ব। ১৯১. আল্লাযীনা ইয়ায্কুরূনাল্লা-হা কি্বইয়া-মাঁও ওয়া ক্বুঊদাওঁ ওয়াআ'লা জুনূবিহিম ওয়া ইয়াতাফাক্কারূনা ফিল খালকি্বচ্ছামা-ওয়াতি ওয়ালআরদ্বি; রাব্বা-না মা-খালাক্বতা হা-যা বা-তি্বলা; ছুবহা-নাকা ফাকি্বনা আ'যা-বা ন্না-র।


১৯২. রাব্বা-না ইন্নাকা মান তুদখিলিন্না-রা ফাক্বাদ আখ্যাইতাহূ; ওয়ামা লিয্য্বা-লিমীনা মিন আনসা-র। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০-১৯২]
অনুবাদ : ১৯০. নিঃসন্দেহে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর অনুপম সৃষ্টি এবং দিবা-রাত্রির আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানবান মানুষের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।
১৯১. এসব জ্ঞানবান মানুষ হচ্ছে তারা, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর অনুপম সৃষ্টি নৈপুণ্য সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে। তারা বলে, হে প্রভু, তুমি এই সৃষ্টি জগতের কিছুই অযথা সৃষ্টি করোনি। তুমি পবিত্র; অতএব তুমি আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি দাও।
১৯২. (তারা বলে) হে প্রভু, যাকে তুমি জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাবে, তাকে অবশ্যই অপমানিত করবে, আর জালেমদের জন্য কোনো রকম সাহায্যকারীই থাকবে না।
ব্যাখ্যা : ১৯০ নম্বর আয়াতটির শানে নুজুুল এ রকম_মক্কার কোরাইশদের কিছু লোক রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বলে, আপনি আমাদের মোজেজা দেখান; আপনি সাফা পাহাড়কে সোনার পাহাড়ে পরিণত করে দিন। তাহলে আমরা আপনার ওপর ইমান আনব, আপনি যে নবী সে কথা স্বীকার করব। এর জবাবে এই আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতে আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টিজগৎ যে অনুপম নৈপুণ্যে ভরপুর এবং রহস্যময় এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং মোজেজার কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কোনো একটি অলৌকিক মোজেজার চেয়ে আল্লাহর সৃষ্টিজগতের অনুপম রহস্য ও নৈপুণ্য যে অধিক জ্ঞান-গম্ভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ এটাই এখানে ব্যক্ত করা হয়েছে। পরবর্তী ১৯১ ও ১৯২ নম্বর আয়াতে সৃষ্টিজগতের এই জ্ঞান-গাম্ভীর্য ও নৈপুণ্য যারা অনুসন্ধান ও গবেষণা করে তাদের ব্যাপারে আরো বিস্তারিত বলা হয়েছে। এসব জ্ঞানবান মানুষ হচ্ছে তারা, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে অর্থাৎ সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আল্লাহর সৃষ্টিজগতের রহস্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে। বলা বাহুল্য; আজকের যুগে পৃথিবীতে জ্ঞানবিজ্ঞানের যে উন্নতি সাধিত হয়েছে সেটা আল্লাহর সৃষ্টিরহস্য উন্মোচন করারই ফসল। আল্লাহর সৃষ্টিজগতের সব রহস্য মানুষ আবিষ্কার করতে পারেনি, সব রহস্য কোনো দিনও মানুষের হাতের মুঠোয় আসবে না। তবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় মানুষ যা কিছু আবিষ্কার করেছে এ সব কিছুই আল্লাহর সৃষ্টিজগতের রহস্য। এসব রহস্য যাঁরা আবিষ্কার করেছেন তাঁদের আল্লাহ প্রশংসা করে 'উলুল আলবাব' বা 'জ্ঞানবান সম্প্রদায়' বলেছেন। তবে বিশ্বজগতের প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে মানুষ যেন আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্য খোঁজে এবং আল্লাহর মহানত্ব অনুধাবন করার মাধ্যমে তাঁর আনুগত্যে অবনত হয় এটাই আল্লাহতায়ালা দেখতে চান। আল্লাহর এই সৃষ্টিজগৎ খামখেয়ালি নয়; বরং অর্থপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে মানুষের জন্য শিক্ষা।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.