মহাস্থানগড়ে খোঁড়াখুঁড়ি-হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করার শাস্তি হোক

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনস্থল ও প্রত্নসম্পদের গুরুতর ক্ষতিসাধন করেছে মহাস্থান মাজার উন্নয়ন কমিটি। গুপ্ত ও পাল যুগের বেলেপাথর ও কালোপাথরের প্রত্ননিদর্শন খোয়া যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে বটে, কিন্তু ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে প্রাচীন যুগের অবকাঠামো।


বিস্ময়ের কথা, মহাস্থান মাজার উন্নয়ন কমিটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে খোঁড়াখুঁড়ি করেছে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে। তারা মাজার উন্নয়নের নামে বিদ্যমান মাজারের পাশে সম্প্রতি একটি অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করলে সংবাদমাধ্যমে সে খবর প্রকাশিত হয়। তখন হাইকোর্ট খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করার আদেশ দেন। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করেই খোঁড়াখুঁড়ি চলতে থাকলে হাইকোর্ট খননকারীদের আদালতে তলব করেন। তখনকার মতো খোঁড়াখুুঁড়ি বন্ধ হয়। কিন্তু মাস খানেক পর গত রবি ও সোমবার রাতের আঁধারে আবারও খনন চলে। অর্থাত্, মাজার উন্নয়ন কমিটির লোকেরা সেখানে নতুন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে তারা আদালতের নির্দেশও অমান্য করে চলেছে।
ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের মূল্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে এসব মানুষের যে কোনো উপলব্ধি নেই, তা বুঝতে কষ্ট হয় না। রবি ও সোমবার রাতে খননের সময় গুপ্ত ও পাল যুগের বেলেপাথর ও কালোপাথরের কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তারা পেয়েছে, সেগুলো লুকিয়ে রেখেছিল পাশের একটি গর্তে। মহাস্থান জাদুঘরের জিম্মাদার নাহিদ সুলতানা জানিয়েছেন, ওই খননের সময় প্রাচীন অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। গর্তে লুকিয়ে রাখা প্রত্নসামগ্রী প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উদ্ধার করে নিয়ে গেছেন, কিন্তু খননের ফলে প্রাচীন অবকাঠামোর যে ক্ষতি হয়ে গেছে, তা তো অপূরণীয়।
প্রাচীন পুণ্ড্রনগরের ইতিহাসসমৃদ্ধ মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক বিবেচনায় শুধু দক্ষিণ এশিয়ার নয়, সারা পৃথিবীর এক অমূল্য সম্পদ। এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। মহাস্থান মাজার উন্নয়ন কমিটির তত্পরতা সেই সুরক্ষার প্রতি এক বিরাট হুমকি। উন্নয়ন মানেই নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, আর সে জন্য খোঁড়াখুঁড়ি। কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার প্রয়োজন ছাড়া আর কোনো কারণেই খননকাজ চালানো যাবে না—এটা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। মাজার উন্নয়ন কমিটি হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে আবারও খননকাজ করেছে—এই অপরাধে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.