এবার ৯ টুকরো লাশ!

রাজশাহীর নিখোঁজ ব্যবসায়ীর খোঁজ মিলেছে। তবে জীবন্ত নয়, মৃত অবস্থায়। সেই মৃতদেহ আবার ৯টি টুকরো করা। নিখোঁজ হওয়ার পর ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছিল মুক্তিপণের টাকা। কিন্তু টাকা পাওয়ার পরও মুক্তি মেলেনি ব্যবসায়ীর। তাঁকে হত্যা করে মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তার আগেই মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক ব্যবসায়ী ও তাঁর কর্মচারীকে।


প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নিহত আমিনুল হোটেল ব্যবসা করতেন। এ ব্যবসার জন্য একটি জমি কিনেছিলেন তিনি। সেই জমিতে গড়ে তুলেছিলেন হোটেল। গ্রেপ্তারকৃত ব্যবসায়ী সারোয়ারের পরিবারের কাছ থেকে কেনা এই জমির দালালি বাবদ চার লাখ টাকা সারোয়ারকে দেওয়ার কথা ছিল। সেই টাকা সুদে-আসলে বেড়ে ২২ লাখে দাঁড়ায় বলে সারোয়ারের দাবি। সেই টাকার কিছু অংশ সরোয়ারকে দিতে গেলে আমিনুলকে বেঁধে রেখে বাকি টাকা দেওয়ার জন্য তাঁর পরিবারকে চাপ দেওয়া হয়। আমিনুল তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে ২০ লাখ টাকা সারোয়ারের কর্মচারী হাকিমকে দিতে বলেন। হাকিম সেই টাকা নিয়ে যাওয়ার পর আমিনুলকে হত্যা করা হয়। সেই টাকার কিছু অংশ দিয়ে স্ত্রীকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয় সারোয়ার। আমিনুলের মৃতদেহ নদীতে ফেলে দিতে পারলে ঘাতককেও হয়তো খুঁজে পাওয়া যেত না। আমিনুলের পরিবারের দাবি, কেউ তাদের কাছে কোনো ঠাকা পেত না। টাকা প্রাপ্তি ও আমিনুলকে খুন করার ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সারোয়ার ও তার কর্মচারী হাকিম।
রাজশাহীর এই ঘটনাটির ভেতর দিয়ে সমাজের একটি কদর্য চিত্রই যেন ফুটে ওঠে। টাকার জন্য মানুষ কতটা নৃশংস হতে পারে, সেটাই যেন নতুন করে আবার প্রকাশ পেল। হয়তো সারোয়ার টাকা পেত আমিনুলের কাছে। হয়তো এটাও সত্য যে আমিনুল পাওনা টাকা দিতে গড়িমসি করেছেন। তাই আমিনুলের স্ত্রী সেই ২০ লাখ টাকা দিয়েছেনও। কিন্তু টাকা পাওয়ার পরও কেন এই হত্যাকাণ্ড?
আমাদের সামাজিক অবস্থাটা এমন এক পর্যায়ে গেছে যে এখানে নৃশংসতা যেন অপরাধীদের নিত্যকর্মে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম নিয়েও অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। কয়েক দিন আগে বংশালে র‌্যাবের নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দুই পার্সেল ডেলিভারিম্যানকে অপহরণের ঘটনা ঘটে। র‌্যাবের নামে অপহরণ করে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় গাজীপুরের জঙ্গলে। সেখানে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি এখন তদন্তাধীন। র‌্যাব ও পুলিশের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারাও স্বীকার করে নিয়েছেন যে পুলিশ ও র‌্যাবের মধ্যে একটি দুষ্টচক্র থাকতে পারে। সেই দুষ্টচক্র এমন কাজ করলেও করতে পারে। রাজশাহীর ৯ টুকরো লাশ উদ্ধার ও ঢাকার বংশালে র‌্যাবের নামে অপহরণের ঘটনা থেকে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, সমাজের নানা স্তরে পচন ধরেছে। এই পচন দূর করতে না পারলে এ সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
আমরা চাই, রাজশাহীর এ হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার হোক। তা না হলে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। পাশাপাশি সমাজকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। সমাজের হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধগুলো পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সব মোহ থেকে মুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.