বইয়ের মেলা প্রাণের মেলা-আজ নামবে জনতার ঢল by মাসুম আলী

সোমবার সন্ধ্যার পর থেকেই সেই পথে আঁকা শুরু হয়েছিল নানা রঙের সুদৃশ্য নকশা। যে বীর সন্তানেরা বুকের তাজা রক্তে রাঙিয়ে দিয়েছিলেন রাজপথ, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আজ ভোরের আলো ফোটার আগেই অগণিত মানব-মানবী যাবেন শহীদ মিনারে। ভোরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়ে মানুষের স্রোত বাংলা একাডেমীর দিকে ফিরবে।
আজ মেলাও খুলবে অনেক আগে, সকাল আটটায়। বন্ধও হবে দেরিতে, রাত ১০টায়। সবার সব পথ এসে আজ মিলে যাবে শেষে শহীদ মিনার সোপানে।
ভাষা আন্দোলনের যে মহান চেতনাকে ধারণ করে এ মেলা, তার আগের দিন তো মেলায় একুশের আবহ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীর পোশাক থেকে শুরু করে বই কেনার তালিকা, চিবুকে বাহুতে আঁকা নকশা, মেলা মাঠের সাজসজ্জা—সবখানেই ছিল একুশের ছাপ।
অনেকে সোমবার মেলায় আসেন বিভিন্ন বুটিক হাউসের ‘অ আ ক খ’সহ বাংলা বর্ণমালাখচিত পোশাক পরে। কারও কারও কপালে বাঁধা ছিল দেশের মানচিত্র। আবার কেউ বা নিজের চিবুককে চিত্রপটে রূপান্তর করে আঁকিয়ে নিয়েছেন জাতীয় পতাকা বা শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি। আবার কারও টি-শার্টে ছিল ভাষাশহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের প্রতিকৃতি।
শোক, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে ছিল ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর: ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শক্তিশালী রাষ্ট্রগঠনের শর্ত: জঙ্গিবাদ দমন ও যুদ্ধাপরাধের বিচার’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহরিয়ার কবির। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল হারুন-অর-রশিদ বীর প্রতীক, মো. আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান এবং কবি শামীম আজাদ। সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে সদ্য প্রয়াত বরেণ্য সাংবাদিক, ছড়াকার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফয়েজ আহ্মদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র এবং সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফরিদা পারভীন, আকরামুল ইসলাম ও দেবেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।
সাংবাদিক ও সাহিত্যিক ফয়েজ আহ্মদের মৃত্যুর সংবাদে বইমেলায় ছিল শোকের আবহ। অনেকেই কথা বলছিলেন এই গুণী ব্যক্তিকে নিয়ে। তাঁর সঙ্গে সময় কাটানোর স্মৃতিচারণা করছিলেন। গতকালই মেলায় এসেছে ফয়েজ আহ্মদের বেশ কিছু নতুন বই।
শিল্পীর চোখে ঢাকা ১৭৮৯-১৯৪৭
গতকাল বিকেল থেকে নজরুল মঞ্চ ছিল জমজমাট। এখানে প্রথমা প্রকাশন থেকে আসা নতুন বই শিল্পীর চোখে ঢাকা ১৭৮৯-১৯৪৭-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। স্থপতি শামীম আমিনুর রহমানের এই বইটি প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলো ও গ্রামীণফোনের উদ্যোগে। লেখক ছাড়াও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, লেখক-সাংবাদিক আনিসুল হক, গ্রামীণফোনের করপোরেট কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান সৈয়দ তাহামিদ আজিজুল হক, প্রথম আলো বন্ধুসভা পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান, প্রথমা প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী জাফর আহমদ প্রমুখ।
এ ছাড়া গতকাল এখানে উন্মোচিত হয়েছে নতুন ২৬টি বইয়ের মোড়ক। এর মধ্যে কবি আল মাহমুদ বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিমিটেডের ১৫টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন উন্মোচন করেন দুটি নতুন বইয়ের মোড়ক।
তথ্যকেন্দ্রে নতুন ১০৭টি বইয়ের নাম জমা পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফয়েজ আহ্মদের আমার সাম্প্রতিক লেখা এনেছে সূচীপত্র, সময় এনেছে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের স্বপ্নের সমান বড় এবং অন্তরঙ্গ আলাপ, রাবেয়া খাতুনের ভ্রমণসমগ্র-৩ ও দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় প্রেম প্রথম খেলার আগে, সেলিম আল দীনের রচনাসমগ্র-৭ এনেছে মাওলা ব্রাদার্স, অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাময় নয় প্রতিরোধ এনেছে কলি প্রকাশনী, তানজিম আল ইসলামের আইনের সহজ পাঠ এনেছে ভাষাচিত্র, বুলবুল সিন্হার উরুবাম্বা নদীর তীরে এনেছে অন্যপ্রকাশ, জাগৃতি প্রকাশনী এনেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের আরো প্রশ্ন আরো উত্তর, শামীম আজাদের প্রিয়ংবদা, পাঠসূত্র এনেছে তুষার কণা খোন্দকারের সুখের কাছে বসবাস, শামসুদ্দোহা চৌধুরীর অমানিশার ছায়াবাজি, জাকির তালুকদারের কবি ও কামিনী এবং মির্জা ইমতিয়াজ শাওনের সৌন্দর্যের স্বর্গভূমি চট্টগ্রাম, জুয়েল মাজহারের কবিতার ট্রান্সট্রোমার এনেছে শুদ্ধস্বর, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে ইসলাম এনেছে অক্ষর প্রকাশনী, গোলাম আবু জাকারিয়ার বাংলাদেশে বিজ্ঞান চর্চা এনেছে গণপ্রকাশনী, ঈশিতা ভাদুড়ীর পাউন্ড লিরা ক্রোনারের দেশে এনেছে শোভা প্রকাশ, সৈয়দ শামসুল হকের বাল্য প্রেম কথা এনেছে পাঠক সমাবেশ, একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে জয়নাল আবেদীন খানের বিক্রমপুরের প্রাচীন পুকুর দীঘি, নূহ-উল-আলম লেনিনের অস্থির সময় অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এনেছে জোনাকী প্রকাশনী, শুদ্ধস্বর এনেছে সৈয়দ শামসুল হকের ফেরি জাহাজের অপেক্ষায় ও শামসুজ্জামান খানের রাশিয়া ও জাপান ভ্রমণ নিয়ে দূরে দূরান্তরে।

No comments

Powered by Blogger.