নিজের হাতেই বইয়ের মলাট by নাঈমা আমিন

বছরের শুরুতে পাওয়া বইগুলো শিশুরা বেশ আগ্রহ নিয়েই পড়ে। তবে কিছুদিনেই যখন বইখাতা হয়ে পড়ে মলিন, তখন তা আর শিশুদের আকৃষ্ট করতে পারে না। এ জন্য নতুন বইয়ে মলাট দিয়ে সুন্দরভাবে তাতে নাম, রোল নম্বর ইত্যাদি লিখে ফেলতে হবে। আজকাল অনেক বইয়ের দোকানে বইয়ে মলাট করে দেওয়া হয়। তবে এ কাজটা যদি শিশু নিজেই করে, তবে বইখাতার যত্নের প্রতি সে সচেতন হয়ে উঠবে।


সাভার বিপিএটিসি স্কুল অ্যান্ড কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষিকা (বাংলা) মির্জা সুরাইয়া আফরোজ বলেন, ‘নতুন বইখাতা হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি তাতে মলাট দেওয়া হয়ে থাকে, তবে বইয়ের স্থায়িত্ব বাড়ে, বই সুন্দর, টেকসই থাকে। মলাট দেওয়ার জন্য ক্যালেন্ডারের পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার সাধারণ ব্রাউন পেপারও ব্যবহার করতে পারেন। অনেক সময় শিশুরা বই হারিয়ে ফেলে কিংবা একজনেরটা আরেকজন নিয়ে যায়। এ জন্য মলাটের ওপর এবং বইয়ের প্রথম পাতায় শিশুর নাম ও ঠিকানা লেখা থাকলে কেউ বই বদলাতে পারে না। বাচ্চারা অনেক সময় বইয়ের ওপর আঁকাআঁকি করে, এর ফলে বইয়ের সৌন্দর্যহানি হয়। সে ক্ষেত্রে ছয় মাস পর আবার নতুন মলাট দেওয়া যেতে পারে।’

বইয়ের বাঁধাই
অনেক সময় পুরোনো বই, অভিধান ছিঁড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে এসব বই বাঁধাই করলে এর স্থায়িত্ব বাড়ে।
ঢাকার শাহ্ জব্বার বুক বাইন্ডিংয়ের প্রোপ্রাইটর আমিনুল হক বেপারী জানান, ‘বাইন্ডিংয়ে নানা ধরন আছে। নরমাল বাইন্ডিং, হার্ড বাইন্ডিং, কোয়ালিটি বাইন্ডিং প্রভৃতি। বইয়ের পৃষ্ঠাসংখ্যা, কতটা ছিঁড়েছে—এসব বিষয় লক্ষ রেখে বাইন্ডিং করা হয়।’
নরমাল বাইন্ডিং করতে হলে প্রথমে বইয়ের পাতাগুলো সব আছে কি না, দেখে নিয়ে আর্ট পেপারসহ তা সেলাই করে নিন। এরপর বিভিন্ন রঙের রেক্সিনে আঠা বা টেপ দিয়ে বইয়ের পাশে লাগানো যেতে পারে। বাচ্চাদের বই, গল্পের বইয়ে সাধারণত ফর্মা বাইন্ডিং করা যেতে পারে।
সাধারণত স্কুলের বইগুলোতে বইসংলগ্ন যে স্ক্রিন প্রিন্টের মলাট থাকে, তার ওপর নরমাল বাইন্ডিং করা যায়। সে ক্ষেত্রে বইয়ের পাতাগুলো ফর্মা পদ্ধতিতে ভাঁজ করে সেলাই করে কভার দেওয়া যেতে পারে।
রেক্সিন বাইন্ডিং করতে হলে আর্ট কার্ড আর রেক্সিন দিয়ে বই বাঁধাই করা যেতে পারে। স্কুলের বই, গল্পের বই, অভিধানে রেক্সিনের এ ধরনের বাইন্ডিং করা হয়। এই বাইন্ডিংয়ের ওপর আবার নামও লিখে রাখা যেতে পারে।
বইয়ে হার্ড বাইন্ডিং করতে হলে প্রথমে সেলাই করে তার ওপর কাপড় দিয়ে কোনা লাগিয়ে মার্বেল কাগজ দিয়ে বাইন্ডিং করা যেতে পারে। হার্ড বাইন্ডিং সাধারণত মার্বেল কাগজে আর রেক্সিন পেপারে করা হয়ে থাকে। হার্ড বাইন্ডিংয়ের ওপর অনেকে সোনালি রঙের নাম লেখাতে পছন্দ করে। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের রঙিন কাগজে টাইপ দিয়ে সিল দিয়ে নাম লেখা যেতে পারে।
লেজার বাইন্ডিং করতে হলে প্রথমে পাটে পাটে বইয়ের পাতা সাজিয়ে মজবুত সেলাই করতে হবে। বাইরের দিকে পাতা কেটে সমান করে তারপর সেই পাতার ওপরের দিকে নম্বর দিতে হবে। পাতায় বোর্ড কভার দিতে হবে। পরে বইয়ের ওপরের খোলটা আঠা দিয়ে লাগাতে হবে। এরপর ছোট ছোট টুকরা করে কেটে বইয়ের কোনার দিকে আলাদা করে চামড়া লাগিয়ে দিতে হবে। আর বইয়ের ওপরের ডালায় রেক্সিন দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.