পাটের দামে নিম্নগতি-সম্ভাবনায় বিপত্তি কাম্য নয়

বিশ্বে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ও কদর বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের এক সময়ের প্রধান রফতানি খাতটি পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়াবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। বাংলাদেশের উৎপাদক কৃষকরাও এতে উৎসাহী হন। আমাদের বিজ্ঞানীরা পাটের জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে এর ওপর আমাদের ষোলোআনা স্বত্ব দাবি করে বসেন।


এভাবেই পাট পুনরায় যখন বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ও শিল্প খাতে নতুন প্রণোদনা জোগানোর হাতিয়ার হয়ে উঠছে, তখন গত বৃহস্পতিবার সমকালের লোকালয় পাতায় 'কুড়িগ্রামে পাটের দাম আরও কমেছে : কৃষক দিশেহারা' শিরোনামে একটি সংবাদ পাঠ করে এ দেশে যে কারও মনের মধ্যেই হতাশা সৃষ্টি হতে পারে। রিপোর্টে দেখা যায়, এবার বাম্পার ফলন হওয়ায় বাজারে পাটের আমদানি হয় বেশি। কৃষকরা সোনালি আঁশে সুখের মুখ দেখার আশায় বেশি পরিমাণ জমিতে পাট চাষ করে বসেন। একই সময়ে ফড়িয়া ও মহাজনদের পাট ক্রয়ের জন্য প্রাপ্ত অর্থেও টান পড়ে। পাট রফতানিকারকরাও এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কম দামে পাট পেতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। এসবের কুপ্রভাব পড়তে শুরু করেছে উৎপাদক কৃষকের ওপর। তারা তাদের উৎপাদন খরচ তুলতেই এখন হিমশিম খাচ্ছেন, লাভ তো দূরের কথা। অথচ আমাদের কৃষি দফতর এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সচেতন ও সক্রিয় থাকলে মাত্রাতিরিক্ত জমিতে কৃষকরা যাতে পাট উৎপাদন না করেন, সেটা অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। তাছাড়া বাজারে পাট বেশি উঠলেও এই বাড়তি পাট কৃষকদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য দামে ক্রয় করার ব্যবস্থা করা যায়। ফড়িয়া ও মহাজনদের এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিয়ে পাট ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে এই সংকট অনেকটা উতরানো যায়। বাজারের নিয়মকে মেনেই পাটের বাজারমূল্যকে কৃষক ও ভবিষ্যৎ উৎপাদনের স্বার্থে গ্রহণযোগ্য মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা যায়। তবে এ জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী অর্থনৈতিক প্রণোদনাসহ নানামুখী উদ্যোগ। শুধু কৃষকের স্বার্থই নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থেও পাটের বাজারকে নিম্নগামিতার হাত থেকে উদ্ধার করা দরকার। বিশেষত কুড়িগ্রামসহ পাটের এলাকাগুলোতে এ জন্য তফসিলি ব্যাংক ও পাট অধিদফতরকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসতে হবে। ফড়িয়া ও মহাজনরা যাতে পাট ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান পান তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.