সর্বত্র ভুল বানানের ছড়াছড়ি by ইসমাইল হোসেন

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে উর্দুওয়ালা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল অকুতোভয় বাঙালিরা।

বাঙলার দুর্দমনীয় দামাল সন্তানদের মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার দুর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করে  ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। এদিন বর্বর পাকিস্তানি শাসকদের পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ অনেকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলা স্বীকৃতি পায় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে।

মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জীবন উৎসর্গের অনন্য সাধারণ নজির সৃষ্টির জন্য দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে।

কিন্তু ভাষা আন্দোলনের সাফল্যের ৬০ বছর আর স্বাধীন বাংলাদেশের ৪০ বছর পেরিয়ে আসার পর বাংলা বানানের ব্যাপারে চরম অবহেলা বেশ দৃষ্টিকটু হয়ে ধরা পড়ছে পাবলিক প্লেসসহ বিভিন্ন স্থানে। রাস্তার পাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারে অহরহ ভুল বানান চোখে পড়ছে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও চলছে এরই ধারাবাহিকতা। প্রতিনিয়ত এসব ভুল বানান দেখে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। বিশেষ করে ছোট শিশুদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব মারাত্মক।

কানাডা প্রবাসী কয়েকজন বাঙালির উদ্যোগ ও প্রস্তাবে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সহায়তায় জাতিসংঘের শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর এই দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

মহান একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তস্নাত গৌরবের আবেগঘন উত্তাপ বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মানুষের প্রাণে অনুরণিত হচ্ছে। সারাবিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

বিশ্বের ২৫ কোটি মানুষের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাবি উত্থাপন করেছেন।

কিন্তু পাবলিক প্লেসে বাংলা বানান নিয়ে নানান বিভ্রাট বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে মানুষের মাঝে।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের পাশে দেখা গেছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও দোকানের সাইন বোর্ড, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডে ভুল বানান রয়েছে। এছাড়া যানবাহনে বিভিন্ন উপদেশমূলক লেখনীতেও ভুল বানান ব্যবহার করা হচ্ছে।

মিরপুর দশ নম্বর থেকে বেগম রোকেয়া সরণী বানানটি বিভিন্ন স্থানে বিভিনন্নভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এরমধ্যে ভুল ভাবে লেখা হচ্ছে স্বরণি ও সরনী বা সরনি। এমনটি লক্ষ্য করা গেছে প্রগতি সরণী এলাকায় সরনী বানানটি এভাবে ভুল ব্যবহার হচ্ছে।

‘রেস্টুরেন্ট’ শব্দটি রেষ্টুরেন্ট, ‘ফটোস্ট্যাট’ শব্দটি ফটোষ্টাট, ‘স্টুডিও‘ শব্দটি ষ্টুডিও হিসেবে লেখা হচ্ছে। যা বিদেশি শব্দের বানান রীতিকে অনুসরণ করছে না।

এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যানার-পোস্টারে জনগণ শব্দটি জনগন বা জণগন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

পাবলিক পরিবহনে ব্যবহৃত বানান নিয়েও হোঁচট খেতে হয় প্রতিনিয়ত। যেমন জ্ঞান শব্দটি গ্যান, প্রবেশ শব্দ লেখা হয় প্রবেস হিসেবে।

এভাবে বানান বিভ্রাট চলছে অহরহ। আর এসব ভুল বানান দেখে সাধারণ মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। কিন্তু বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। তারা ভুল বানান দেখে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।

পাবলিক প্লেসে এসব ভুল বানান সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। এভাবে ভুল বানান ব্যবহার মাতৃভাষার প্রতি অবমাননাকর বলেও মনে করেন তারা।

No comments

Powered by Blogger.