সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে নৌমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ-কার বৈঠকে কে নির্দেশ দেন!

রোববার সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক ডেকেছিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। কিন্তু বৈঠকে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের বের হয়ে যেতে বললেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তাঁর পদ-পদবি যা-ই হোক না কেন, তিনিও একজন আমন্ত্রিত, সাংবাদিকেরাও ছিলেন তা-ই।


এমনকি সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবেও তিনি সাংবাদিকদের বৈঠকস্থল ত্যাগ করতে বলতে পারেন না। পরিষদের বৈঠকে বরাবর সাংবাদিকেরা উপস্থিত থাকলেও এবার তাঁদের বাইরে রাখার কী যুক্তি থাকতে পারে? যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি ভুল বলে অভিহিত করেন। আসলে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো নয়, তাঁদের বের করে দেওয়াই ছিল ‘ভুল’। আর এই কাজটি আমন্ত্রণকারীর ইচ্ছায় হয়নি, হয়েছে নৌপরিবহনমন্ত্রীর ইচ্ছায়। এই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।
সড়ক পরিবহনের বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন না হলেও নৌপরিবহনমন্ত্রীর এই হস্তক্ষেপের কারণ অজানা নয়। তিনি পরীক্ষা ছাড়া ২৮ হাজার লোককে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। যোগাযোগমন্ত্রীও সেই খবরের সত্যতা অস্বীকার করেননি, বরং একই কাজ সাংবাদিকেরাও করেছেন বলে দাবি করেছেন। মন্ত্রী মহোদয় বিনা পরীক্ষায় ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার সুপারিশকারী সাংবাদিকদের নাম কেন প্রকাশ করলেন না?
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে মন্ত্রীরা যতটা না ভাবিত, তার চেয়ে বেশি সচেষ্ট ছিলেন সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতে। জনগণের বিপুল রায় পাওয়া মন্ত্রীরা কেন এই লুকোচুরির আশ্রয় নিচ্ছেন, তা বোধগম্য নয়। নৌপরিবহনমন্ত্রী বৈঠকটি যে পল্টনের জনসভা নয়, সেই কথাটি সাংবাদিকদের স্মরণ করিয়ে দিলেন। আরেকজন প্রতিমন্ত্রী বললেন, ‘আমরা জনগণের জন্য কাজ করি।’ এসব অসার কথার কী অর্থ? মন্ত্রীরা কি মনে করেন, ‘সাংবাদিকেরা জনগণের বিপক্ষে কাজ করেন?’
রোববার বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে যোগাযোগমন্ত্রী যা জানালেন, তা পর্বতের মূষিক প্রসব ছাড়া কিছু নয়। সড়কের নিরাপত্তায় আগের সভাগুলোর সিদ্ধান্তই তিনি নবায়ন করেছেন। তিন মাস পর পর সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও এবারে হয়েছে এক বছর পর। আরেক বছর পর একই কথা ঘুরেফিরে আসবে না, তারই বা নিশ্চয়তা কী? পরীক্ষা ছাড়া কাউকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে না—মন্ত্রী এই ওয়াদা রাখতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। অতীতেও অনেকে এ রকম নিশ্চয়তা দিলেও লাইসেন্স প্রদানে হস্তক্ষেপ বন্ধ করা যায়নি।
জনগণের দাবি নিরাপদ সড়ক। যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তা। সেটি নিশ্চিত করুন। রাস্তাঘাটগুলো ঠিকমতো মেরামত করুন। কারও অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে যোগ্য লোককে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিন। তাহলে সড়ক পরিবহন নিয়ে মানুষকে যেমন উদ্বিগ্ন হতে হবে না, তেমনি আমন্ত্রণ জানিয়েও বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার রহিত করতে হবে না।

No comments

Powered by Blogger.