পবিত্র কোরআনের আলো-যারা নবী-রাসুলদের শিক্ষা গ্রহণ করেনি তারা নিজেদের ক্ষতি সাধন করেছে

৯. ওয়া লাও জাআ'লনা-হু মালাকাল্ লাজাআ'লনা-হু রাজুলাই ওয়া লালাবাছনা আ'লাইহিম্ মা ইয়ালবিছূন। ১০. ওয়া লাক্বাদি ছ্তুহ্যিইয়া বিরুছুলিম্ মিন ক্বাবলিকা ফাহা-ক্বা বিল্লাযীনা ছাখিরূ মিনহুম্ মা কা-নূ বিহি ইয়াছতাহ্যিঊন।
১১. ক্বুল ছীরূ ফিল আরদ্বি ছুম্মান্যুরূ কাইফা কা-না আ'কি্ববাতুল মুকায্যিবীন।


১২. ক্বুল লিমাম্ মা ফিচ্ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি; ক্বুল লিল্লাহি কাতাবা আ'লা নাফ্ছিহির্ রাহমাহ; লাইয়াজমাআ'ন্নাকুম ইলা ইয়াওমিল কি্বয়া-মাতি লা রাইবা ফীহিল্লাযীনা খাছিরূ আনফুছাহুম ফাহুম লা ইউ'মিনূন।
[সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৯-১২]
অনুবাদ : ৯. আমি যদি ফেরেশতাকে নবী বানিয়ে পাঠাতাম, তাহলে তাকেও তো মানুষ বানিয়েই পাঠাতাম। তখনো তারা আজকের মতোই সন্দেহে নিমজ্জিত থাকত।
১০. (হে রাসুল) আপনার আগেও বহু নবী-রাসুলকে এভাবে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছিল। যারা তাদের সঙ্গে বিদ্রূপ করেছিল সেই পরিহাসই তাদের পরিবেষ্টন করে রেখেছে।
১১. অতএব আপনি মানুষকে বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো, দেখো যারা নবী-রাসুলদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল তাদের কী ভয়াবহ পরিণতি হয়েছিল।
১২. (হে নবী) আপনি তাদের জিজ্ঞেস করুন, আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, এসবের মালিকানা কার? আপনি বলে দিন, এ সবকিছু আল্লাহর। মানুষকে দয়া করাটা তাঁর নিজের প্রকৃতি। কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদের সবাইকে অবশ্যই জড়ো করবেন, এতে কোনো সন্দেহ সেই। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করেছে, তারা বিশ্বাসী নয়।
ব্যাখ্যা : কাফেররা এমন যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করত যে আল্লাহতায়ালা যদি চাইতেন, তাহলে তো ফেরেশতাদের মধ্য থেকে রাসুল বানিয়ে পাঠাতে পারতেন। তাদের যুক্তিটা ছিল এ রকম যে কোনো ফেরেশতাকে যদি নবী বানিয়ে পাঠানো হতো, তাহলে তো আর নবীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে লোকে বিতর্ক করত না। কিন্তু তাদের এই যুক্তিটা খুব ঠুনকো এবং অবাস্তব। কোনো ফেরেশতাকে নবী বানিয়ে পাঠাতে হলেও তো তাকে মানুষের আকৃতিতেই পাঠাতে হতো। কারণ ফেরেশতা তো বিমূর্ত, তাকে তো মানুষ দেখতে পেত না। সুতরাং ফেরেশতাদের নবী বানিয়ে পাঠালেও কাফেররা বিতর্ক তুলতেই পারত। এ আয়াতগুলোতে এ কথাটাই স্পষ্ট করে তোলা হয়েছে যে ফেরেশতাকে নবী বানিয়ে পাঠানো সমস্যার কোনো সমাধান নয়, বরং মানুষকে হেদায়েত করার ব্যবস্থা মানুষের মাধ্যমেই হতে হবে। ফেরেশতাদের দিয়ে মানুষকে হেদায়েত করার পরামর্শ একেবারেই দায়িত্বহীন যুক্তি ও অবান্তর পরামর্শ।
১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা সেই বিতর্ক উত্থাপনকারী ও কুপরামর্শ দানকারীদের পরিপ্রেক্ষিতেই বলছেন, ইতিহাসে এমন বহু প্রমাণ আছে যে অবাধ্য লোকরা নবী-রাসুলদের এভাবে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছিল। তাদের পাপ তাদের পরিবেষ্টন করে রেখেছে, তারা নিষ্কৃতি পাবে না। এদেরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাঁর রাসুলকে বলছেন, আপনি এসব লোকদের বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, যারা আল্লাহর নবী-রাসুলদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছিল, তাদের কী ভয়াবহ পরিণতি হয়েছে।
এরপর ১২ নম্বর আয়াতে উপসংহারমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। খুব স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, এই বিশ্বজাহানের সব কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ। আর তিনি মানুষের ওপর দয়াশীল এটাই তাঁর প্রকৃতি। তবে উচ্চমর্যাদার অধিকারী হওয়ার ফলেই মানুষকে আল্লাহর কাছে সব কিছুর ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। মানুষের কল্যাণের জন্যই আল্লাহতায়ালা জগদ্বাসীর কাছে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যারা নবী-রাসুলদের শিক্ষা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করেছে। যারা এ ধরনের হতভাগা, তারা মুমিন হতে পারেনি।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.