অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি বাঞ্ছনীয়-অনিশ্চিত পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে যা হচ্ছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর মহাজোট সরকার এ প্রকল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিল। বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিও আদায় করতে পেরেছিল। নিঃসন্দেহে এসব সরকারের সাফল্য। তাই বলে ২০১৩ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার কথা বলে এখনো মূল সেতুর কাজ শুরু করতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা ও অদক্ষতারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।


সরকারের দেওয়া জবাবে বিশ্বব্যাংক যে সন্তুষ্ট হয়নি, তা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যেই স্পষ্ট। শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের জবাব সরকারের অনুকূলে নয় বা তার উল্টো নয়।’ রাতারাতি সমস্যার সমাধান হবে না বলেও ইঙ্গিত দেন অর্থমন্ত্রী। বিশ্বব্যাংক আগেই জানিয়ে দিয়েছে, ‘জালিয়াতি’ ও ‘দুর্নীতির’ অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পে তারা অর্থ দেবে না। অর্থমন্ত্রী সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বিষয়টি মীমাংসার জন্য গেলেও সফল হননি। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর সিংহভাগ অর্থের জোগানদাতা ও সমন্বয়কারী। তাদের অনুসরণে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাইকাও অর্থায়ন স্থগিত রেখেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
সরকার স্বীকার করুক আর না করুক, পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রধান বাধা যোগাযোগমন্ত্রীই। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ, তাঁর মালিকানাধীন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিনিধি সম্ভাব্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ধরনা দিয়ে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছেন। যদিও সরকারের বক্তব্য হলো, যেখানে সেতুর কাজই শুরু হয়নি, সেখানে দুর্নীতিরও প্রশ্ন আসে না। এ ব্যাপারে সরকার প্রেসনোট দিয়ে তার অবস্থানও ব্যাখ্যা করেছে।
কেবল বিশ্বব্যাংক নয়, দেশবাসীও আশা করে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকবে। যেহেতু যোগাযোগমন্ত্রীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, সেহেতু তাঁরই উচিত ছিল স্বেচ্ছায় এই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে স্বচ্ছতা প্রমাণ করা। সরকারি সূত্রে একাধিক বিকল্প প্রস্তাবের কথাও শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ চিঠিতেও বলা হয়েছে, এ ধরনের বড় প্রকল্পে কোনো রকম দুর্নীতির প্রশ্রয় তারা দেবে না। এ অবস্থায় সমস্যার মূলে না গিয়ে সরকার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কৌশল নিলে পদ্মা সেতু প্রকল্পই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
দেশবাসী চায়, সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাক। আর সে জন্য বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের অর্থায়নও নিশ্চিত করা জরুরি। প্রকল্পের মাঝপথে এসে অর্থায়নের বিকল্প চিন্তা কিংবা দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নিয়ে তোড়জোর কোনোভাবেই সমীচীন নয়। তা ছাড়া একটি প্রকল্পে দাতাদের সহায়তা স্থগিত থাকলে তার বিরূপ প্রভাব যে তাদের অর্থায়নে পরিচালিত অন্যান্য প্রকল্পে পড়বে না তার নিশ্চয়তা কী?
অতএব, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন চাইলে প্রধানমন্ত্রীকে এখনই উদ্যোগী হয়ে এর কাজে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের উত্থাপিত অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তিই বাঞ্ছনীয়।

No comments

Powered by Blogger.