ঘরে ফেরার বিড়ম্বনা-নির্বিঘ্ন হোক ঈদ উদ্‌যাপন

নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা শুরু হয়ে গেছে। নিকটজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেই মানুষ ঘরমুখো। ঈদের ছুটি কার্যত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই শুরু হয়ে গেছে। প্রথম দিনই বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। মাঝখানে এক দিন ছুটি নিলে এবারের ঈদের ছুটি দাঁড়াচ্ছে টানা ৯ দিন।


স্বাভাবিকভাবেই এবার ঘরমুখো মানুষের ভিড় একটু বেশি হবে। তা ছাড়া প্রতিবছর রাজধানী ঢাকায় লোকসংখ্যা বাড়ছে। ঈদ-পার্বণেও বাড়ছে ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা।
ঈদের অনেক আগে থেকেই ঘরে ফেরা নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়। ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের প্রথম বিড়ম্বনা টিকিট। বরাবরের মতো এবারও বাস, ট্রেন ও লঞ্চের টিকিট ছিল সোনার হরিণ। একটি টিকিটের জন্য মানুষকে কম হয়রানি পোহাতে হয়নি। টিকিটপ্রাপ্তির বিড়ম্বনা, যাত্রাপথে দীর্ঘ সময়ের যানজট, গাড়ির সারি, ফেরিঘাটে যানজট, লঞ্চ টার্মিনালে নির্দিষ্ট সময়ে লঞ্চ না পাওয়া, ট্রেনে আসনসংখ্যার অতিরিক্ত মানুষের ভিড়; তার পরও ঈদের আনন্দ নিকটজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে হবে। সে জন্যই ঘরে ফেরা।
এবার সড়কপথে ঘরে ফেরার ভোগান্তি পোহাতে হবে যাত্রীদের। এমনিতেই সড়কগুলো বেহাল। সরকারের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় শেষ সময়ে এসে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ঈদ এসে যাওয়ায় এই সময়ে সড়কপথে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ থাকবে। এই অতিরিক্ত গাড়ির চাপ বেহাল সড়কগুলো কতটুকু নিতে পারবে, সেটাই এখন বিবেচ্য বিষয়। ঈদ উপলক্ষে রাস্তায় অতিরিক্ত গাড়ি চলবেই। দূরপাল্লার পরিবহন কম্পানিগুলো ঈদ উপলক্ষে যেমন অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা করেছে, তেমনি বিআরটিসিও বিশেষ সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস-মিনিবাস ভাড়া করেও অনেকে ঘরে ফেরার বিকল্প ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। এই অতিরিক্ত গাড়ি এরই মধ্যে পথে নেমেছে। এই গাড়িগুলো সাধারণ সময়ে মহাসড়কে দেখা যায় না। মহাসড়কের করুণ দশার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তার ওপর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সৃষ্টি হয় যানজট। এমন কোনো ঘটনা যে এবার ঘটবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। ঈদের সময় মহাসড়কগুলোতে যত্রতত্র বাস রেখে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়। এ জন্য অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। ঈদের সময় বিশেষ বাসের পাশাপাশি বিশেষ ট্রেন ও বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ট্রেনের বগির সংখ্যা। কিন্তু তাতেও যাত্রীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। অন্যদিকে লঞ্চ টার্মিনালেও ঘরমুখো মানুষের ভিড়। সবারই আগে ঘরে ফেরার তাড়া। এর পাশাপাশি আরেক বিড়ম্বনা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে কোনো যানবাহন ছেড়ে না যাওয়া। প্রথম দিনই ভেঙে পড়েছে ট্রেনের সময়সূচি। বাস টার্মিনালেও একই অবস্থা। লঞ্চেরও কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই। এই সময়ের সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা হচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি ও লঞ্চ। সড়কপথে যাত্রীর ভিড় দেখে অধিক মুনাফার আশায় অনেকেই পুরনো বাস নতুন করে রং করে যেমন পথে নামিয়েছেন, তেমনি পুরনো লঞ্চও রং করে নামানো হয়েছে নৌপথে। এসব লঞ্চের বেশির ভাগেরই হয়তো ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই, যেমন_ফিটনেসবিহীন অনেক গাড়িও চলবে সড়কপথে।
ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়বে_এটা জানা কথা। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে এবার যদি হাইওয়ে পুলিশ সক্রিয় থাকে, তাহলে হয়তো সড়কপথের বিড়ম্বনা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। টিকিটপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে ঘরে পেঁৗছানো পর্যন্ত পদে পদে বিড়ম্বনা সইতে হবে ঘরমুখো মানুষকে। তার পরও প্রিয়জনের সানি্নধ্যে যেতে পারার আনন্দে পথের বিড়ম্বনার স্মৃতি ও ক্লান্তি মুছে যাবে। পথের ক্লান্তি ভুলে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবে নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষ। মানুষের ঈদ উদ্যাপন নির্বিঘ্ন হোক।

No comments

Powered by Blogger.