অসংক্রামক রোগ বাড়ছে-ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন

অসংক্রামক রোগ, অর্থাৎ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ জটিল রোগ-ব্যাধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, দেশের মোট রোগীর ৬১ শতাংশই অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি জানিয়েছে, দেশে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।


প্রতিবছর ৪ থেকে ৬ শতাংশ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের মতে, জন্মগত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাও উদ্বেগজনক। আরো যেটা অধিক উদ্বেগজনক তা হলো, আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ৫০ শতাংশ জানেই না যে তাদের এ ব্যাধি রয়েছে। অন্যদিকে দেশে দেড় কোটির বেশি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, হাসপাতালগুলোতে যত লোকের মৃত্যু হয়, তার ১২ শতাংশ এই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপজনিত মৃত্যু এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগ অ্যাজমাজনিত নিদারুণ কষ্টের ব্যাধি তো রয়েছেই।
আমরা জানি, একমাত্র বার্ধক্যজনিত কারণ ছাড়া রোগভোগ প্রকৃতি বা ঈশ্বর প্রদত্ত অবধারিত নিয়তি নয়। স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পরিমিত ও পুষ্টিকর আহার সম্পর্কে অসচেতনতাই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ। এ ব্যাপারে ব্যক্তিমানুষের যেমন দায়িত্ব রয়েছে সচেতন বা সতর্ক থাকার, তেমনি সরকারেরও একটি দায়িত্ব রয়েছে জনসাধারণকে সচেতন করে তোলার। সে কাজটি সঠিকভাবে হচ্ছে না। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শুধু দায় সারলেই হবে না, একরকম ঝাঁপিয়ে পড়ে জনগণের মধ্যে আন্দোলন আকারে স্বাস্থ্যসচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে। তার পরও যারা আক্রান্ত হচ্ছে বা হবে, তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্বটি বর্তায় সরকারের ওপরই। বিশেষ করে দরিদ্র মানুষদের সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে যে সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকরা তাঁদের কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করছেন না। কালের কণ্ঠের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে শুক্রবার কোনো চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া যায় না। তাঁরা ছুটির আমেজে বাড়িতে সময় কাটান অত্যন্ত সংকটাপন্ন রোগী হাসপাতালে রেখে। দেশের চিকিৎসাসেবার প্রধান কেন্দ্র খোদ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েও শুক্রবার চিকিৎসকের সন্ধান পাওয়া যায় না। বার্ন ইউনিটের মতো ভয়াবহ জায়গায়, যেখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন, সেখানেও কোনো চিকিৎসক নেই। নিশ্চয়ই চিকিৎসকরাও মানুষ। তাঁদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটানো প্রয়োজন। তবে চিকিৎসকের দায়িত্ব পালনে অগ্রাধিকার দিতেই হবে। বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা এখনো অনেক দরিদ্র হলেও দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে এতটা বাজে অবস্থা নয় যে একজন চিকিৎসক সাপ্তাহিক ছুটিতে থাকলে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা একেবারে বন্ধ হয়ে থাকবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন চিকিৎসকদের সেবার মানসিকতা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। সুতরাং দায়িত্ব পালন বিষয়ে সরকারকে চিকিৎসকদের প্রতি আরো কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.