শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতাবার্ষিকীতে রাজাপক্ষে-সাহসের সঙ্গে বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলার আহ্বান

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে দেশটির জনগণকে দৃঢ়তা এবং সাহসের সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের ৬৪তম বর্ষ উদ্যাপন করছে দেশটি।


শ্রীলঙ্কার উত্তর-মধ্যাঞ্চলীয় শহর অনুরাধাপুরাতে এবার স্বাধীনতা দিবসের রাষ্ট্রীয় আয়োজন করা হয়। শত বছর আগে এ দ্বীপ দেশটির রাজধানী ছিল অনুরাধাপুরা। এটি বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থানও।
মাহিন্দা রাজাপক্ষে বলেন, ‘স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে।’
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বলেন, সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আমরা একবার যেভাবে একত্রিত হয়েছিলাম, ঠিক একইভাবে আবারও একত্রিত হতে হবে। দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
প্রেসিডেন্টের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের এক দিন আগেই শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সুদের হার বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে ঋণের প্রবাহ কমিয়ে দিতে। এর ফলে দেশে আমদানির পরিমাণ কমবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, তেল ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। দেশটির সব ধরনের জ্বালানি চাহিদা আমদানি করে মেটাতে হয়। অর্থনৈতিক সংকটের হাওয়া লেগেছে দেশটির রপ্তানি বাণিজ্যেও।
বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের প্রসঙ্গ টেনে মাহিন্দা বলেন, বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের সজাগ থাকা প্রয়োজন। সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার পাশাপাশি আমাদের সাহস ও শক্তি প্রদর্শন করতে হবে।
২০০৯ সালের মে মাসে তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ জাতিগত সংঘাত অবসানের পর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি করছিল। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ শতাংশ। গত বছরের জুলাইতে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।
কিন্তু এর পরও বিশ্ব-অর্থনৈতিক সংকটের ধকল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ও রপ্তানি বাড়াতে দেশটি তার মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে। গত নভেম্বরে মুদ্রামান ৩ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে।

এক হাজার ৪০০ কারাবন্দীর মুক্তি
এদিকে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত এক হাজার ৪১৪ জন কারাবন্দীকে শনিবার মুক্তি দিয়েছে দেশটির সরকার। শ্রীলঙ্কার একজন কারা কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে লঘু অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত এক হাজার ৪১৪ জন কয়েদিকে ক্ষমা ঘোষণা করেছেন।
তবে এ ক্ষমার আওতায় পড়েননি দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান শরৎ ফনসেকা। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে এখন দেশটির শীর্ষস্থানীয় (হাই প্রোফাইল) কারাবন্দী ভাবা হয়। সেনাবাহিনী ছাড়ার পর ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং মাহিন্দা রাজাপক্ষের কাছে পরাজিত হন। নির্বাচনে হারার মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিনি গ্রেপ্তার হন।
প্রেসিডেন্টের ভাই আত্মসমর্পণকারী তামিল বিদ্রোহীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় ফনসেকাকে। এ মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে সেনাপ্রধান থাকাকালে অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। এ জন্য সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হন তিনি। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৩০ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে।
এর আগে শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমে আভাস দেওয়া হয়েছিল প্রেসিডেন্ট তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে স্বাধীনতা দিবসে কারাগার থেকে মুক্ত করতে পারেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের ক্ষমা লাভের সুযোগ মিলেনি ফনসেকার। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.