সংকট নিরসনে মুক্ত-স্বচ্ছ-পবিত্র বিদ্যুৎ দরকার by ড. এম শামসুল আলম

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে কবে থেকে লিখছি মনে নেই। কেন লিখি? সে জবাব দিতে আজ দ্বিধা হয়। দিন কয়েক আগে কালের কণ্ঠের সম্পাদকীয় বিভাগ থেকে জরুরি ভিত্তিতে লেখা চাইলেন এবং টেলিফোনকারী বললেন, কালের কণ্ঠে আজ অনেক খবর বেরিয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎসংক্রান্ত একটি জরুরি সংবাদ আছে, এ নিয়ে লিখুন। আমি যে লেখার আর আগ্রহ খুঁজে পাই না, তা কী করে বোঝাই! আর তা বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা এ লেখায় করেছি মাত্র।


২. বিদ্যুৎ নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রতিমন্ত্রীকে তুলাধুনা, এমন খবরের শিরোনাম মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পদত্যাগের দাবিতে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে জনগণের বিক্ষোভ ও বিদ্যুৎ অফিস ভাঙচুরের ঘটনা অব্যাহত থাকে। এ ধরনের কার্যকলাপে উদ্বেগ বাড়ে। বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে আশ্বাসের পর আশ্বাস আসা অব্যাহত থাকলেও মানুষের আশাও কি তাতে অব্যাহত থাকে? অব্যাহতভাবে শুনতে হয়, সরকার বিদ্যুৎ সমস্যাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। এ সমস্যার দায় বর্তমান সরকারের নয়, আগের সরকারগুলোর। যখন লোডশেডিং নিয়ে জনগণ সোচ্চার হয়, তখনই শোনা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ। যেমন বলা হয়েছে, গত ২ আগস্ট মঙ্গলবার সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় পাঁচ হাজার ২৬ মেগাওয়াট। এসব কথা মানুষ শুনতে শুনতে এমনই অভ্যস্ত যে সরকার বদল হলেও এসব কথা বদলায় না বলে তোতা পাখির শেখানো বুলির মতো মনে হয়। তাই বলি, যাঁরা দায়িত্বে আছেন, বিদ্যুৎ দিতে না পারার দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করতে না চান ক্ষতি নেই, তবে এ-জাতীয় কথা বলে মানুষের বিরাগভাজন কেন হবেন? প্রিয় হওয়ার মতো কিছু করতে না পারলেও অনুগ্রহ করে অপ্রিয় হবেন না।
৩. গৃহীত বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। পরিকল্পনা কমিশন আয়োজিত গত ২৩ ফেব্রুয়ারির জাতীয় কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা এমন মন্তব্য ও বক্তব্য পেশ করেছেন। তাতে কোনো কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না। আমি লিখিতভাবে এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন পরিকল্পনা কমিশনে পেশ করেছি। সে প্রতিবেদনটি কালের কণ্ঠ দুই দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছে। বর্তমান মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর পার্টিসিপেটরি পারসপেকটিভ প্ল্যান তৈরি করে। এই প্ল্যানের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় বিভিন্ন ব্যক্তিকে। আমাকে দেওয়া হয়েছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক ব্যাকগ্রাউন্ড পেপারটি তৈরির। পারসপেকটিভ প্ল্যানের ভিত্তিতে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি হয়। কিন্তু ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পরিকল্পনা দেখে মনে হয়, বিদ্যুৎ সমস্যা যেমন আগের সরকারের কাছ থেকে পাওয়া, তেমনি এ সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনার কৌশলগত ধারণাও বিগত সরকারগুলোর কাছ থেকেই পাওয়া।
৪. বলা হয়েছিল, ভাবা হয়েছিল, খাদ্য সংকট মোকাবিলার মতো এ সরকার বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায়ও সফল হবে। খাদ্য সংকট মোকাবিলায় আপৎকালীন নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার এর আগে সফল হয়েছিল। বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায়ও তেমন নানামুখী ব্যবস্থা গৃহীত হলেও কাজে আসেনি। কাজে আসত, যদি উপদেষ্টার পরিবর্তে জনদরদী সৎ কোনো রাজনীতিবিদ এ মন্ত্রণালয় চালাতেন। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য বিশেষ বাল্ব সরকার বিনা মূল্যে বিতরণ করলেও ৯০ ওয়াটের সোডিয়াম বাতির পরিবর্তে ২৫০ ওয়াটের হাইপ্রেসার বাতির ব্যবহার হচ্ছে। বাড়তি বিদ্যুতে জনগণকে রাজধানীতে বেশি বেশি আলোকিত রাজপথ উপহার দেওয়ার জন্যই এমন উদ্যোগ! এই বিদ্যুৎ সংকটেও নগরীতে এসির ব্যবহার বৃদ্ধি অব্যাহত। বিইআরসি এসি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়। কিন্তু সে উদ্যোগ কাজে আসেনি। আবাসিক এলাকায় ছয়তলার বেশি ভবন নির্মাণ না করার বিধান রয়েছে। সেসব ভবনে লিফট ব্যবহার যদি নিষিদ্ধ হতো, তাহলে বিদ্যুৎ অনেকটা সাশ্রয় হতো। তা হয়নি। প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ রয়েছে। ঘাটতির কারণে গ্যাস রেশনিং হয়। কিন্তু ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেশনিং হয় না। অভিযোগ রয়েছে, তুলনামূলকভাবে দাম কম হওয়ায় ওই গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত না হয়ে শিল্প-কারখানার উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এই গ্যাস শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হলে নিঃসন্দেহে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলা করা সহজ হতো।
৫. প্রতি একক বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি খরচ ৭০-৮০ শতাংশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাই জ্বালানি তেলের ব্যবহার সর্বত্রই দ্রুত কমিয়ে আনা হচ্ছে। স্বল্পোন্নত দেশে কয়লা-বিদ্যুতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরের হিসাবে দেখা যায়, বিশ্বে কয়লার ব্যবহারে প্রবৃদ্ধি ৩-৪ শতাংশ। আমাদের বেশির ভাগ বিদ্যুৎ গ্যাস থেকে উৎপন্ন হয়। কিন্তু কয়লা-বিদ্যুতের দেখা নেই। বর্তমানে জ্বালানি তেলের ব্যবহার বৃদ্ধিতে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ৮২ শতাংশ। ১০ শতাংশের বেশি জ্বালানি তেল। এই তেলের মূল্য অত্যধিক হওয়ায় বিদ্যুতের মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি খাতের পরিবর্তে দ্রুত বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের অজুহাতে ব্যক্তি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি হচ্ছে এবং সরকারি খাতের তুলনায় অনেক বেশি দামে সে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে একদিকে যেমন বেশি দামি জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়, অন্যদিকে সরকারি খাতে উৎপাদন বন্ধ রেখে ব্যক্তি খাত বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। ব্যক্তি খাতের এই বিদ্যুৎও সরকারি খাতের তুলনায় অনেক বেশি দামে কেনা হচ্ছে। ফলে বিদ্যুতের মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরবরাহে প্রবৃদ্ধি আসছে না। চাহিদা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সে অনুযায়ী সরবরাহ বৃদ্ধি না হওয়ায় ঘাটতি বৃদ্ধির প্রবণতা রোধ করা যায়নি। মানুষ লোডশেডিংয়ের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না, যদি পরিকল্পনার কৌশলগত ধারণায় গুণগত আমূল পরিবর্তন না আসে।
৬. সম্প্রতি আমার ছাত্রছাত্রীদের গবেষণায় দেখা যায়, অনেক উন্নত দেশে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সরবরাহকৃত বিদ্যুতে তার আনুপাতিক পরিমাণ ক্রমাগত কমে আসছে। এ অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, চাহিদাবৃদ্ধি মোকাবিলায় যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি আবশ্যক, সে পরিমাণ উৎপাদন বৃদ্ধি না হওয়ায় ঘাটতি কমেনি। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি, বিবৃতি ও প্রচারণায় জনগণ ভুল বার্তা পাচ্ছে। উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১৯ আগস্ট জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিদগ্ধ সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের খেদোক্তিতে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
৭. এ অবস্থায় ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি বিইআরসির বিবেচনায় আসে। গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানিতে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত তথ্যপ্রমাণে প্রতীয়মান হয় যে আলোচ্য প্রেক্ষাপটে বিদ্যুতের যে সরবরাহ-ব্যয় বৃদ্ধি ঘটেছে, সে ব্যয় মেটানোর জন্য ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি যৌক্তিক, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও ন্যায়সংগত নয়। ফলে এ ব্যয়বৃদ্ধিতে এর আগে ভোক্তা পর্যায়ে যে ৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে, এরপর এর অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি সমীচীন নয়। ফলে বিদ্যমান ঘাটতি পূরণে সরকারকে ভর্তুকি দেওয়ার জন্য বিইআরসি প্রস্তাব করেছে। এ প্রস্তাবে বাল্ক ও খুচরা উভয় পর্যায়ে ভর্তুকির মোট পরিমাণ প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। পল্লী বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রশ্নে এর আগের লেখায় আমি আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেছিলাম, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি ছাড়া বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
৮. এখনো ডুয়েল-ফুয়েল অর্থাৎ তেল বা গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাড়তি গ্যাস সরবরাহের সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। তাহলে ডুয়েল-ফুয়েলভিত্তিক এসব প্লান্টকে তেলেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। তা না হলে উৎপাদন বন্ধ থাকবে। ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়বে অথবা বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলেও এসব প্লান্টের মূল্য যোগ হয়েও তা বৃদ্ধি পাবে। এ ধরনের পরিস্থিতি বড়ই অস্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতি বিদ্যুতের জন্য অন্ধকার না বলে উপায় কী?
৯. কোরিয়ার সরকারি খাতের কয়লা-বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, টনপ্রতি ১২৩ ডলার দামে আমদান করা কয়লায় উৎপাদিত প্রতি একক বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ৩.৩৩ টাকা। তাতে অজ্বালানি ব্যয় ২০ শতাংশ, অর্থাৎ ৬৭ পয়সা। এ তথ্যের আলোকে দেখা যায়, বাংলাদেশে ব্যক্তি খাতের প্রতি একক বাণিজ্যিক ওই কয়লা-বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য সরকারের জন্য ৪.৫১ টাকা নির্ধারিত, তাতে অজ্বালানি ব্যয় ১.৯৭ টাকা। আবার গণশুনানিতে প্রতীয়মান হয়, কোনো কোনো আইপিপির কাছ থেকে প্রতি একক গ্যাস-বিদ্যুৎ কেনা হয় ১.৩৭ টাকায়, তাতে অজ্বালানি ব্যয় ৭৫ পয়সা। অন্যান্য আইপিপি থেকে এ দাম অপেক্ষা অনেক বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনা হয়। সরকারি খাতে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বা ক্রয়মূল্য ১.৪৯ টাকা, তাতে অজ্বালানি ব্যয় ৬৭ পয়সা। অথচ এ বিদ্যুৎ বাণিজ্যিক ব্যক্তি খাত থেকে কেনার জন্য মূল্য ধার্য করা হয়েছে ২.৭৭ টাকা, তার অজ্বালানি ব্যয় ধরা হয়েছে ২.১১ টাকা। ব্যক্তি খাতের ক্ষুদ্র প্লান্টের কেনা গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণ করা হয় বাল্ক-বিদ্যুতের মূল্যহারের ভিত্তিতে। তেল, গ্যাস, কয়লা ও পানি-বিদ্যুৎ মিলিয়ে মোট বিদ্যুতের গড় মূল্যহারই বাল্ক-বিদ্যুতের মূল্যহার। সুতরাং ক্ষুদ্র প্লান্টের ওই গ্যাস বিদ্যুতের বিক্রয় মূল্যহার নির্ধারণ অযৌক্তিক ও জনস্বার্থবিরোধী। ভাড়া প্লান্টের বিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণের বিষয়টি এখানে না-ই বা বললাম। এসব বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি সরবরাহ হয় সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরবরাহকৃত জ্বালানির মূল্যহারে অর্থাৎ ভর্তুকিতে। ভালো-মন্দভেদে চালের দাম কম-বেশি হয়। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে এমন ভালো-মন্দ ভেদাভেদ নেই। তাই বিদ্যুতের মূল্যহারে এমন সব তারতম্য ন্যায়সংগত নয়। স্বচ্ছতা নিশ্চিত হলে এমন হতো না। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ক্রমান্বয়ে দেশি-বিদেশি ব্যক্তি খাতে বন্দি হতে চলেছে। সরকারি খাত পঙ্গু হচ্ছে। অসাধুতা ও অস্বচ্ছতা বাসা বাঁধায় বিদ্যুতের জন্ম এখন অবৈধ ও অপবিত্র। এমন বন্দি, অস্বচ্ছ ও অপবিত্র বিদ্যুতে দেশের বিদ্যমান সংকট সমাধান হয়নি। অথচ দাম বাড়ায় ভর্তুকি বেড়েছে। এই ভর্তুকির দায় কেন ভোক্তারা বহন করবে?
১০. ২০০৫ সালে নির্বাহী আদেশে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির হাতে মূলত বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত হয়। এই কমিটি ব্যক্তিবিশেষের ব্রেনচাইল্ড ভাড়া-বিদ্যুৎকে সংকট নিরসনের মোক্ষম নিয়ামক হিসেবে সামনে আনে। বড় প্লান্ট বাদ দিয়ে ব্যক্তি খাতের ক্ষুদ্র প্লান্টের বিদ্যুতে সংকট সমাধানের তৎপরতা শুরু হয়। এই সংকটের অজুহাতে দফায় দফায় এমন সব প্লান্টের প্রস্তাবিত সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। পরবর্তী সময়ে সংকট সমাধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একই পথ অনুসরণ করে। এসব ঘটনা আজকের সংসদ সদস্যদের অজানা নয়। আমার বড়ই আফসোস হয়, বর্তমান সরকারের আমলেও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ওই ক্ষুদ্র ও ভাড়া-বিদ্যুতের মাধ্যমে সংকট সমাধানে অগ্রসর হয় এবং ওই ব্রেনচাইল্ড লালন-পালনের দায়িত্ব নেয়। কে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় চালায়, তা যেমন সংসদ সদস্যরা আজ জানতে ও বুঝতে পারেন না, তেমনি বিদ্যুৎ কেন বন্দি, অস্বচ্ছ ও অপবিত্র, তা-ও জানতে ও বুঝতে পারেন না। তবে সংকট সমাধানের জন্য মুক্ত, স্বচ্ছ ও পবিত্র বিদ্যুৎ দরকার, তা সমগ্র দেশবাসীর মতো সব সংসদ সদস্যই জানেন ও বোঝেন। তাই জনগণ মুক্ত, স্বচ্ছ ও পবিত্র বিদ্যুৎ চায়। জনগণের এ দাবি নিয়ে সংসদে মুক্ত আলোচনার জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি বিনীত আবেদন জানাই। এ আবেদন যদি কাজে না আসে, তাহলে কি লেখা বা বলার আগ্রহ বেঁচে থাকে?
লেখক : জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ

No comments

Powered by Blogger.