গুড়পুকুর মেলা-সম্প্রীতির প্রতীক অটুট থাকুক

আমরা আনন্দিত যে সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুর মেলা আট বছর পর ফের বসেছে। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে মেলা চলাকালে সিনেমা হল ও সার্কাস প্যান্ডেলে পরিচালিত বোমা হামলায় তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার পর নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে এতদিন এই আয়োজন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।


কেবল গুড়পুকুর মেলা নয়; ওই সময় গোটা দেশেই মেলা, সিনেমা হল, প্রগতিশীল রাজনৈতিক সমাবেশ কিংবা ধর্মীয়ভাবে ভিন্নমতাবলম্বীদের স্থাপনা বোমা ও গ্রেনেড হামলার শিকার হচ্ছিল। তাই বলে মেলা বন্ধ রেখে সমাধান খোঁজা আমাদের কাছে কখনও যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। ঢাকার রমনা বটমূলে বাংলা নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হলেও পরবর্তীকালে আরও বেশি জনসমাগম ও উদ্দীপনা দেখা গেছে। বোমা হামলার অন্যান্য টার্গেটও তাদের পথ থেকে বিচ্যুত হয়নি। আসলে জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষী গোষ্ঠী কোন ধরনের আয়োজন ও স্থাপনাকে তাদের হিংসা ও বিকৃতি চরিতার্থ করার জন্য বেছে নেয়, তার মধ্যেই রয়েছে তাদের প্রতিরোধের দাওয়াই। বাংলাদেশে আবহমানকাল থেকে ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির আলো ছড়িয়ে চলছে বিভিন্ন মেলা ও মাজার। অন্ধকারের বাসিন্দারা এসব আলোকে ভয় পায় এবং সহিংস উপায়ে নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু তারা জানে না, বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের গভীরে যে অসাম্প্রদায়িকতা ও সম্প্রীতির বাতি দেদীপ্যমান, শত বোমা ও গ্রেনেড তা নিভিয়ে দিতে পারে না। আমরা মনে করি, সর্বজনীন আয়োজনগুলোর বিরুদ্ধে জঙ্গি ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর অপতৎপরতার জবাব হচ্ছে আরও বেশি সমারোহে বাঙালি ঐতিহ্য লালন-পালন করা। এটা স্বস্তিকর যে বিলম্বে হলেও গুড়পুকুর মেলা ফের শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন যেভাবে এর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে, তাও সাধুবাদযোগ্য। আমরা জানি, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দেশের অনেক স্থানেই মাজার, মন্দির ও এ ধরনের আয়োজন সুচারুরূপে পরিচালিত হতে পারছে না। দেশকে জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতামুক্ত করতে বদ্ধপরিকর বর্তমান সরকারের উচিত হবে, সেগুলোকে সহায়তা প্রদান। সম্প্রীতির এসব প্রতীক যে কোনো মূল্যে অটুট রাখতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, উপযুক্ত সমর্থন পেলে সম্প্রীতিকামী বাঙালি নিজের অন্তর্নিহিত শক্তি দিয়েই জঙ্গিবাদ রুখে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে।

No comments

Powered by Blogger.