কারাচিত্র সমাজচিত্রেরই অন্য পিঠ-মাদকের মহামারি

চট্টগ্রাম কারাগারের বন্দীদের ৩২ শতাংশই মাদক মামলার আসামি—খবরটি অপরাধ ও অবক্ষয় দুই দিক থেকেই ভয়াবহ। তথ্যটি প্রমাণ করে, বিদ্যমান অপরাধচিত্রের বড় একটা অংশই মাদক-সম্পর্কিত। কারাগারে মাদক-অপরাধী বৃদ্ধি সমাজের মধ্যে মাদকের বিস্তৃতিরই প্রমাণ। যুবপ্রজন্মের মধ্যে অবক্ষয় ও হতাশাই মাদকাসক্তির কারণ। খবরটি সবার টনক নড়ানোর জন্য যথেষ্ট।


প্রথম আলোর ধারাবাহিক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কারাগারে আটক মাদকাসক্তদের ৮৫ ভাগই ১৮ থেকে ৩৫ বছরের তরুণ। তরুণসমাজ কেমন আছে, এটি তারও ইঙ্গিত দেয়। চট্টগ্রাম কারাগারের এই দেড় হাজার মাদকাসক্ত মূলত নিম্ন ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার মানে এই নয় যে মধ্য ও উচ্চবিত্তের সন্তানদের মধ্যে মাদকপ্রীতি নিতান্ত কম। বিত্তের প্রভাব, নিরাপদ সংগ্রহ কৌশল এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ মাদক গ্রহণের জন্যই তাদেরটা ধামাচাপা থাকে। আসক্ত অনেকেই আবার মাদকের খরচ জোগাতে হত্যা-ছিনতাই-চুরি প্রভৃতি অপরাধে লিপ্ত হয়। অনেকে মাদক বিক্রিও শুরু করে। সুতরাং মাদকের বিস্তার মানে সমানতালে অপরাধেরও বিস্তার।
প্রতিবেদনটি আরও জানাচ্ছে, মাদক চোরাচালান ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত পুলিশ, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও মাফিয়ারা। সাধারণত পুলিশ খুচরা বিক্রেতাদের ধরলেও এদের টিকিটি স্পর্শ করে না। যতক্ষণ না এসব ক্ষমতাবানকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মাদকের বিরাট জাল ছিন্ন করা সম্ভব নয়। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসন সুকৌশলে তাদের রক্ষা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তাদের এ ব্যাপারে হুঁশিয়ার হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
অন্যদিকে, সাধারণ মাদকাসক্তরা যতক্ষণ পর্যন্ত অন্যের ক্ষতি করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের আক্ষরিক অর্থে অপরাধী বলা যায় না। নিরাময় ও সংশোধনই হওয়া উচিত তাদের প্রতি পরিবার, পুলিশ বা সরকারের কর্মসূচি। তা না করে কারাগারে আটকে রাখার মধ্যে বিশেষ ফায়দা নেই। সরকারের উচিত একদিকে মাদকের বিস্তার কঠিন হাতে দমন করা, অন্যদিকে দেশে মাদক নিরাময়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো এবং গণমাধ্যমে মাদকবিরোধী প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা।
এই সমস্যার মোকাবিলা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে করা সম্ভব নয় ঠিক, কিন্তু মাদকের বিষবৃক্ষের গোড়া কাটার প্রধান দায়িত্বটা তাদেরই। উপায়টা সরকারের হাতে; পরিবার ও সমাজকর্তাদের দায়িত্বও কম নয়।

No comments

Powered by Blogger.