কারখানার ব্যবস্থাপককে মারধর-থানায় মামলা না নেওয়ায় শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

চাঁদার দাবিতে কারখানার ব্যবস্থাপককে মারধর এবং ওই ঘটনায় পুলিশ মামলা না নেওয়ার প্রতিবাদে রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার কুমকুমারী এলাকার মাটসুকা অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকেরা গতকাল শনিবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
এ সময় সিঅ্যান্ডবি-আশুলিয়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ মামলা নেওয়াসহ দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা শান্ত হন।
মাটসুকা অ্যাপারেলস লিমিটেডের নিরাপত্তাপ্রধান আবুল হাসান জানান, গত শুক্রবার দুপুরে কারখানার ব্যবস্থাপক আবদুল জলিল কারখানার পাশের একটি মসজিদে নামাজ পড়তে যান। নামাজ শেষে কারখানায় ফেরার পথে ওই এলাকার শাকিম, শাকিল, মজিবর রহমান, আবদুর রহিম, ফরহাদ, জহিরুল ইসলাম, রহমত আলীসহ কিছু যুবক তাঁর পথ রোধ করে দাঁড়ান। এরপর তাঁরা এক যুবককে ওই কারখানায় চাকরি দেওয়ার দাবি জানান। সুযোগ সৃষ্টি হলে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিলে ওই যুবকেরা চাকরির পরিবর্তে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাঁরা রড দিয়ে আবদুল জলিলের মাথায় আঘাত করে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ও কারখানার শ্রমিকেরা এগিয়ে গেলে ওই যুবকেরা পালিয়ে যান। পরে গুরুতর আহতাবস্থায় তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আবুল হাসান আরও জানান, ঘটনার পর কারখানার পক্ষ থেকে তিনি বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ নানা অজুহাতে তাঁর অভিযোগটি গ্রহণ না করে বিদায় করে দেয়। গতকাল কারখানার শ্রমিকেরা কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনা শুনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। কাজ বন্ধ করে তাঁরা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।
সড়ক অবরোধ করার পর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা ব্যবস্থাপক আবদুল জলিলকে মারধরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাতে থাকেন। শ্রমিকেরা মামলা না নেওয়ায় আশুলিয়া থানার পুলিশের বিরুদ্ধেও নানা স্লোগান দেন।
দুপুরের দিকে আশুলিয়া থানার পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ মামলা নেওয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর ১২টার দিকে শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নিয়ে কারখানার সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে গিয়েও তাঁরা পুনরায় বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে কর্তৃপক্ষ গতকালের জন্য কারখানাটি ছুটি ঘোষণা করলে বেলা দেড়টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা বাড়ি চলে যান।
কারখানার মানবসম্পদ উন্নয়ন ব্যবস্থাপক আনিসুল হক অভিযোগ করেন, চাঁদা দিতে অস্বীকার করার কারণে স্থানীয় কিছু যুবক শুক্রবার দুপুরে কারখানার ব্যবস্থাপক আবদুল জলিলকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। এর প্রতিবাদে শ্রমিকেরা গতকাল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে পুলিশ বাধ্য হয়ে মামলা নেয়।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় আশুলিয়া ইউনিয়নের সদস্য হোসেন আলী মারধরের কথা স্বীকার করলেও চাঁদা দাবির কথা অস্বীকার করেন।
মারধরে আহত কারখানার ব্যবস্থাপক জানান, শাকিম ও শাকিল দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর কাছে কাজ অথবা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তাঁদের দাবি পূরণ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাঁরা পরিকল্পিতভাবে তাঁর ওপর হামলা চালান।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তফা কামাল মামলা না নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনা অনুযায়ী বিষয়টি নিয়ে একটি নিয়মিত মামলা হয়। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ সাধারণ ডায়েরি করতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। পরে গতকাল ব্যবস্থাপককে মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.