পবিত্র কোরআনের আলো-বিশ্বজগতের চূড়ান্ত ক্ষমতা এককভাবে আল্লাহর হাতে সংরক্ষিত

১১৭. ওয়াইয়্যাঁমছাছকাল্লাহু বিদুর্রিন ফালা-কাশিফা লাহু ইল্লাহু; ওয়াইয়্যাঁমছাছকা বিখাইরিন ফাহুওয়া আ'লা-কুলি্ল শাইয়িন ক্বাদীর।
১১৮. ওয়াহুয়াল ক্বা-হিরু ফাওক্বা ই'বাদিহী; ওয়াহুয়াল হাকিমুল খাবির। ১১৯. ক্বুল আইয়্যু শাইয়িন আকবারু শাহাদাতাহ; ক্বুলিল্লাহু শাহীদুম্ বাইনি ওয়াবাইনাকুম; ওয়াউহিইয়া ইলাইয়্যা হা-যাল ক্বুরআনু লিউনযিরাকুম বিহী ওয়ামাম্ বালাগ; আয়িন্নাকুম লাতাশ্হাদুনা আন্না মাআ'ল্লাহি আ-লিহাতান উখরা-; ক্বুল্ লা- আশহাদ; ক্বুল ইন্নামা হুয়া ইলাহু ওঁয়্যা-হিদুওঁয়্যা ইন্নানী বারীউম্ মিম্মা- তুশরিকুন।

[সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ১৭-১৯]
অনুবাদ : ১৭. যদি আল্লাহতায়ালা তোমাকে কোনো দুঃখ দিতে চান, তাহলে তিনি ছাড়া আর কেউ তা দূর করতে পারবে না। অন্যদিকে তিনি যদি তোমার কোনো উপকার করতে চান, তাহলে তিনি নিশ্চিতভাবে তা পারবেন। তিনি সব কিছুর ওপর একক ক্ষমতাবান।
১৮. তিনি তাঁর সৃষ্টিকুলের ওপর একচ্ছত্র পরাক্রমের অধিকারী। তিনি প্রজ্ঞাবান ও সম্যক ওয়াকিবহাল।
১৯. আপনি তাদের বলুন, সাক্ষী হিসেবে কার সাক্ষ্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বলুন, একমাত্র আল্লাহর, যিনি তোমাদের এবং আমার মধ্যে সর্বোত্তম সাক্ষী হয়ে থাকবেন। এ কোরআন তাঁর কাছ থেকেই আমার কাছে এসেছে, যেন এটা দিয়ে তোমাদের এবং যাদের কাছে এ গ্রন্থ পেঁৗছবে, তাদের সবাইকে আমি মন্দ কাজের শাস্তির ভয় দেখাই। তোমরা কি এমন সাক্ষ্য দিতে পারবে যে আল্লাহর সঙ্গে দ্বিতীয় কোনো ইলাহ রয়েছে? আপনি জানিয়ে দিন, আমি কখনো এমন সাক্ষ্য দিতে পারব না। আপনি বলুন, তিনি একক প্রভু, তোমরা যে শিরক করে যাচ্ছ, তা থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে একত্ববাদকে যুক্তি, বুদ্ধি ও প্রমাণ দিয়ে সাব্যস্ত করা হয়েছে। ১৭ নম্বর আয়াতে একটি হৃদয়গ্রাহী উদাহরণের মাধ্যমে একত্ববাদের ধারণা সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। উদাহরণটা এ রকম : যদি আল্লাহতায়ালা তোমাকে কোনো দুঃখ দিতে চান, তাহলে তিনি ছাড়া আর কেউ তোমাকে এ থেকে বাঁচাতে বা দুঃখ দূর করতে পারবে না। অন্যদিকে তিনি যদি তোমার কোনো উপকার করতে চান, তাহলে তিনি নিশ্চিতভাবে তা পারবেন। কেউ কোনোভাবেই তা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। জগতের প্রকৃত সত্যটা উপলব্ধি করতে পারলে এই যুক্তি অবশ্যই হৃদয়গ্রাহী। প্রকৃত সত্যটা হচ্ছে, এই বিশ্বজগতের সর্বময় ক্ষমতার একক অধিকারী আল্লাহ, যদিও আমরা তা অনেক সময়ই নানা কারণে বুঝে উঠতে পারি না। এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয়টা নানা আঙ্গিকে স্পষ্ট করা হয়েছে।
আমরা যদিও এই জগতের গতি-প্রকৃতি দেখে বুঝতে পারি না যে এই জগতের স্রষ্টা ও পালনকর্তা যা করতে চান, তা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না, আবার তিনি যা চান না তা কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়।
তিনি এককভাবে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সমগ্র জগতের ক্ষমতার কেন্দ্র একটা, আর তিনি আল্লাহ।
১৯ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : মুশরিক কুরাইশ সর্দাররা নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য প্রায়ই তাঁকে ডেকে বলত, 'হে মুহাম্মদ, আমরা তো কোনো শিক্ষিত ও জ্ঞানী লোককেই দেখছি না যে তোমাকে সত্য নবী মনে করে তোমার ধর্ম গ্রহণ করছে! আমরা ইহুদি আলেমদের কাছে জিজ্ঞেস করেছি, তাওরাতে তোমার ব্যাপারে কোনো কিছু উল্লেখ আছে কি না বা তোমার পরিচয় উল্লেখ আছে কি না! তারা তো অস্বীকার করেছে। আসলে তাওরাতেও তোমার ব্যাপারে কোনো কিছু উল্লেখ নেই বলে আমরা জেনেছি। এখন তুমি যদি সত্যিই নবুয়ত দাবি করতে চাও, তাহলে এমন নিদর্শন দেখাও, যার দ্বারা তোমার পয়গম্বরি প্রমাণিত হয়।' এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতে সত্য ও ন্যায়ের সাক্ষী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য সাক্ষী হচ্ছেন আল্লাহতায়ালা। তিনি জগতের সব কিছু দেখেন এবং মানুষের অন্তরের খবরও রাখেন। সুতরাং নবুয়তের সত্যতার ব্যাপারে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাক্ষী তিনিই। আর নবুয়তের সবচেয়ে বড় মুজেজা হচ্ছে এই কোরআন, যে কোরআনের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মন্দ কাজের শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন। আল্লাহ যে একক ক্ষমতার অধিকারী, তার যে কোনো শরিক নেই_এ কথাও এখানে যুক্তি দিয়ে প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আর রাসুল (সা.)-কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাঁর ও মুশরিকদের মধ্যে ব্যবধানের কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.