লিবিয়া পরিস্থিতি-শান্তি আসবে কি অদূর ভবিষ্যতে

লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফির প্রাসাদ বাব-আল আজিজিয়াও শেষ পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে দেশটির বিদ্রোহী বাহিনী। কিন্তু মুয়াম্মার গাদ্দাফির অনুগত বাহিনী এখনো অস্তিত্বহীন হয়ে যায়নি। কিংবা তাঁর এবং তাঁর সন্তানদের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।


যদিও তাঁর দ্বিতীয় সন্তান এবং প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ সাইফ আল ইসলাম সাংবাদিকদের সামনে এসে নিজের মুক্ত জীবন প্রমাণ করেছেন। অডিও বার্তার মাধ্যমে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। ফলে এই মুহূর্তেই বলা যায় না আসলে লিবিয়া শান্ত হয়ে যাচ্ছে কি না। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত গাদ্দাফি বাহিনী সে দেশের বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। বিদ্রোহীরা ন্যাটো বাহিনীর সরাসরি সহযোগিতা পেয়ে আসছে। বলতে গেলে, লড়াইটা হচ্ছে গাদ্দাফি বাহিনীর বিরুদ্ধে ন্যাটো বাহিনীর। সেই সুবাদে বলা যায়, ন্যাটো বাহিনীকে প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত ঠেকিয়ে রেখেছে গাদ্দাফি বাহিনী। প্রাসাদ দখল করার পরও বলা যাচ্ছে না, বিদ্রোহীদের চূড়ান্ত বিজয় হয়ে গেছে_যদিও প্রচারমাধ্যমে বলা হচ্ছে, গাদ্দাফির পতন হয়েছে। শত শত মানুষের প্রাণহানি হয়ে গেছে এরই মধ্যে। এর মধ্যে বাংলাদেশি কারো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন তথ্য এখনো জানা যায়নি।
মুয়াম্মার গাদ্দাফি ৪২ বছর পর্যন্ত লিবিয়ায় ক্ষমতাসীন। তাঁর এই শাসনকালে গণতন্ত্র চর্চা হয়নি সে দেশে। অত্যন্ত শক্ত হাতে তিনি দেশ পরিচালনা করেছেন। নিজ দেশে যেমন গণতন্ত্র দেননি, তেমনি পশ্চিমা বিশ্বকেও তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে কসুর করেননি। নিজের সন্তানসহ আত্মীয়স্বজনকে তিনি একের পর এক বিশেষ সুবিধা প্রদান করে রাষ্ট্রীয় সুযোগ গ্রহণ করেছেন। দীর্ঘ স্বৈরশাসন চালানোর পরও সে দেশের সাধারণ মানুষ তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেনি। কিংবা সেই সুযোগও তাদের আসেনি। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্বের সহযোগিতায় সেই সুযোগ গ্রহণ করেছে সে দেশের সাধারণ মানুষ। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশটির ভবিষ্যৎ কী? এক বছর ধরে একের পর এক আরব ও আফ্রিকান দেশে স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন যেভাবে সংগঠিত হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছিল, এই ধারা প্রতিটি দেশকেই গণতান্ত্রিক রাজনীতি উপহার দেবে। কিন্তু মিসর ও তিউনিসিয়ার মতো দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরে আসেনি কিংবা আমূল কোনো পরিবর্তনের মতো অবস্থাও দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে লিবিয়ায়ও যে আন্দোলন চলছে, সেখানেও একক কোনো নেতৃত্ব নেই। ফলে এখন পর্যন্ত বিদ্রোহীদের নেতা হিসেবে এককভাবে কারো নাম শোনা যায়নি। এ অবস্থা কি বিদ্রোহীদের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রুপের জন্ম দেবে? আবার গাদ্দাফি-অনুগতদের ভিত্তি দেখে এও অনুমান করা যায়, সেখানে মিসরের হোসনি মুবারকের মতো গাদ্দাফির নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটিও নিশ্চিত করে বলা যায় না। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সেই দেশ শাসন করতে গিয়ে গাদ্দাফি তাঁর একটি অনুগত গোষ্ঠী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যারা তাঁর জন্য প্রাণ দিতেও দ্বিধা করে না। এমনতর মানুষের সংখ্যা যতই কম হোক না কেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বেশি মানুষ প্রয়োজন হয় না। এই সূত্র ধরে সহজেই বলা যায়, গাদ্দাফির মৃত্যুও যদি হয়ে যায়, তাহলেও সেখানে লড়াই থামবে কি না সন্দেহ আছে।
আর পশ্চিমা বাহিনী সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নাকি সেখানকার তেলসম্পদকে কুক্ষিগত করার মানসে ঢুকেছে তা-ও বলার সময় আসেনি এত তাড়াতাড়ি। অবস্থা দেখে সন্দেহ থেকেই যায়, লিবিয়া কি আরেকটি আফগানিস্তান হবে? সে রকম কিছু হয়ে গেলে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, গৃহযুদ্ধ দানা বেঁধে উঠবে, আর সেই ক্ষেত্রে পশ্চিমা বাহিনী জনস্বার্থ সংরক্ষণ করার পরিবর্তে অস্থিতিশীল লিবিয়া সৃষ্টিতেই ইন্ধনদাতা হিসেবে চিহ্নিত হবে।


No comments

Powered by Blogger.