পবিত্র কোরআনের আলো-পাপের কারণে অতীতে অনেক জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে

৫. ফাক্বাদ কায্যাবূ বিলহাকি্ব লাম্মা জা-আহুম; ফাছাওফা ইয়া'তীহিম আম্বা-ঊ মা কা-নূ বিহি ইয়াছতাহ্যিঊন।
৬. আলাম ইয়ারাও কাম আহ্লাকনা মিন্ ক্বাবলিহিম্ মিন ক্বারনিম্ মাক্কান্না-হুম ফিল আরদ্বি মা লাম নুমাক্কিল্ লাকুম ওয়া আরছালনাচ্ছামা-আ আ'লাইহিম্ মিদ্রা-রাওঁ ওয়া জাআ'লনাল আনহা-রা তাজরী মিন তাহ্তিহিম ফাআহ্লাকনাহুম বিযুনূবিহিম ওয়া আনশা'না মিম্ বা'দিহিম ক্বারনান আ-খারীন।


৭. ওয়ালাও নায্যালনা আ'লাইকা কিতা-বান ফী কি্বরত্বা-ছিন ফালামাছূহু বিআইদীহিম লাক্বা-লাল্লাযীনা কাফারূ ইন্ হা-যা ইল্লা ছিহ্রুম্ মুবীন।
৮. ওয়া ক্বা-লূ লাওলা উনযিলা আ'লাইহি মালাকুন ওয়ালাও আনযালনা মালাকাল্ লাক্বুদ্বিইয়াল্ আমরু ছুম্মা লা-ইউনযারূন। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৫-৮]

অনুবাদ
৫. তাদের কাছে যতবারই সত্যের বার্তা এসেছে ততবারই তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। অচিরেই তাদের কাছে সে খবরগুলো এসে হাজির হবে, যা নিয়ে তারা বিদ্রূপ করছিল।
৬. তারা কি দেখেনি, তাদের আগে আমি এমন কত জাতিকে বিনাশ করে দিয়েছি, যাদের এমনভাবে প্রতিষ্ঠা দান করেছিলাম, যা তোমাদের করিনি। আকাশ থেকে তাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি আমি বর্ষণ করেছি। আর নদী প্রবাহিত করেছি তাদের আবাসভূমির তলদেশ দিয়ে। অতঃপর পাপের কারণে আমি তাদের চিরতরে ধ্বংস করে দিয়েছি। আর তাদের জায়গায় আমি নতুন জাতির উত্থান ঘটিয়েছি।
৭. (হে নবী!) আমি যদি আপনার কাছে কাগজে লেখা কোনো কিতাব নাজিল করতাম এবং তারা যদি হাত দিয়ে তা স্পর্শও করতে পারত তাহলেও কাফিররা বলত, এটা স্পষ্ট জাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।
৮. তারা বলে, তাঁর (নবী) প্রতি কোনো ফেরেশতা (সশরীরে) নাজিল করা হলো না কেন? যদি আমি কোনো ফেরেশতা পাঠিয়ে দিতাম, তবে ফয়সালা তো চূড়ান্ত হয়েই যেত। এরপর তো আর কোনো অবকাশই তাদের দেওয়া হতো না।
ব্যাখ্যা
এই আয়াতগুলোতে কাফির ও বিভ্রান্ত লোকদের অবাধ্যতা ও হঠকারিতার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এবং ইতিহাসের কিছু রূঢ় বাস্তবতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ অবাধ্য লোকদের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে; এদের কাছে যতবারই আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্যের বার্তা এসেছে, ততবারই তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা যে বিভ্রান্তি ও অজ্ঞতার অন্ধকারে ছিল সেখানেই থাকতে চেয়েছে। মূর্খতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে তারা সত্যকে বিদ্রূপ করেছে। ৫ ও ৬ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাদের হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন, অচিরে তাদের কাছে খবর হবে এসব বিষয়ের, যা নিয়ে তারা বিদ্রূপ করত। অর্থাৎ মৃত্যুও শেষ পরিণতির মাধ্যমে তারা প্রকৃত সত্যটাকে দেখতে পাবে। এটা হচ্ছে শেষ পরিণতির দিন যখন তারা ধরা পড়বে।
আল্লাহ তায়ালা এদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, তিনি অতীতে অনেক অবাধ্য জাতিকে তাদের অবাধ্যতা ও পাপাচারের কারণেই ধ্বংস করে দিয়েছেন। পাপাচারের কারণে এমন সব জাতিকেই তিনি ধ্বংস করেছেন যাদের তিনি একদিন অনেক বিত্তবৈভব ও প্রভাব-প্রতিপত্তি দান করেছিলেন। মানব জাতির প্রাচীন ইতিহাস যদি আমরা দেখি, তবে এটা খুব সহজভাবেই প্রতিভাত হয় যে অনেক সমৃদ্ধ জাতিকে আল্লাহ তায়ালা সামাজিক, রাজনৈতিক বিপর্যয়ে বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং তাদের জায়গায় নতুন সভ্যতার উত্থান ঘটিয়েছেন। উর সুমেরিয়া, ব্যাবিলন, মিসর, গ্রিস, সিন্ধু সভ্যতা, মায়ান সভ্যতা, আদ ও ছামুদ জাতির উত্থান-পতন প্রভৃতি অনেক নিদর্শন পৃথিবীর বুকে দৃশ্যমান।
৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা অবাধ্য কাফিরদের অবাধ্যতার স্তরটা আরো ভালোভাবে স্পষ্ট করেছেন। এখানে বলা হয়েছে, কোরআন যদি লিখিত গ্রন্থ হিসেবে আকাশ থেকে আসত; অর্থাৎ তারা যেমন যুক্তি দেখাচ্ছে বস্তু হিসেবে এটা দেখার। তারা যদি এটা ছুঁয়ে দেখতেও পারত, তবু বলত যে এটা জাদু ছাড়া আর কিছুই নয়। অর্থাৎ দুর্জনের ছলের অভাব হয় না। তারা সত্যের বিপক্ষে অজুহাত একটা দাঁড় করাতই।
৮ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : কাফিররা বলত, পয়গম্বর ফেরেশতা কেন হয় না? আল্লাহ চাইলে তো ফেরেশতাদেরই নবী করে পাঠাতে পারতেন। তিনি যদি সত্যিই নবী পাঠাতেন, তবে আকাশ থেকে ফেরেশতাদের পাঠাতেন। এ প্রসঙ্গেই আয়াতটি নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এ পরিপ্রেক্ষিতে বলছেন ফেরেশতাকেই যদি নবী করে পাঠানো হতো, তবে তো আর মানুষের জগৎটাই এমন থাকত না।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.