ঈদের বাজার-স্থিতিশীল হোক দ্রব্যমূল্য

'ঈদ'-এর আভিধানিক অর্থ আনন্দ বা খুশি। কিন্তু সেই আনন্দ বা খুশি ম্লান হয়ে যায় বাজারে গেলে। ঈদ আমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ঈদের দিন নতুন পোশাক পরা যেমন আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে, তেমনি এদিন ঘরে ভালো মানের খাবারের আয়োজনের সংস্কৃতিও রয়েছে। ঈদের দিন বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব আসেন।


তাঁদের সামনে পরিবেশন করা হয় নানা পদের খাবার। নিকটজনদের জামাকাপড় দেওয়া হয়। ঈদের সঙ্গে আমাদের বাজার অর্থনীতিরও একটি নিকট-সম্পর্ক রয়েছে। অনেকেই এ সময়টার জন্য মুখিয়ে থাকেন। অনেকেরই সারা বছরের ব্যবসা এই সময় হয়। আবার 'সিন্ডিকেট' বলে যে অদৃশ্য শক্তি বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, সেই শক্তিও এই সময়ের অপেক্ষা করে।
আমাদের দেশে বাজারের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। উৎসবের সময় এলে বাজারে সব জিনিসের, বিশেষ করে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। অনেক সময় বাজার থেকে অনেক নিত্যপণ্য উধাও হয়ে যায়। এসব যে বাজারের নিয়ন্ত্রক অদৃশ্য সেই সিন্ডিকেটেরই কারসাজি, সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এই সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা সরকারের পক্ষ থেকে অনেকবারই করা হয়েছে। কিন্তু সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে সিন্ডিকেট। অদৃশ্য এই সিন্ডিকেটকে দুর্বল করতে প্রয়োজন ছিল বিকল্প একটি বাজার বা বিপণনব্যবস্থার। এ ক্ষেত্রে টিসিবি হতে পারত সরকারের প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু সেই টিসিবিকে সময়মতো সক্রিয় করার কোনো চেষ্টা দেখা যায়নি। শেষ সময়ে এসে টিসিবি কিছুটা হলেও বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করেছে। প্রতিষ্ঠানটির আইনকানুন বদলে ফেলে একে সারা বছর কার্যকর রাখলে বাজার সিন্ডিকেট অনেকটাই অকার্যকর করা যেত। অনেক আগে আমাদের দেশে রেশনিং-ব্যবস্থা চালু ছিল। রেশনিং-ব্যবস্থা উঠে যাওয়ায় সুবিধা হয়েছে বাজার সিন্ডিকেটের। আগে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ এই রেশনিং-ব্যবস্থা ও টিসিবির ন্যায্য মূল্যের দোকানের ওপর ভরসা করতে পারত। কিন্তু এখন আর সে সুযোগ নেই। আর বিকল্প বিপণনব্যবস্থা না থাকার এই সুযোগটিই নিচ্ছে কথিত বাজার সিন্ডিকেট। সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে এই সিন্ডিকেটের হাতে। এবারও রোজার আগে আমরা দেখেছি, নিত্যপণ্যের দাম কয়েক দফায় লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। বাজার থেকে তেল-চিনি উধাও হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এবার ঈদ সামনে রেখে বাড়ানো হচ্ছে রান্নায় ব্যবহৃত বিভিন্ন মসলার দাম। ঈদের আগে চিনি নিয়ে হঠাৎ নতুন করে ছিনিমিনি খেলার একটি চক্রান্ত চলছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাজারে কৃত্রিম সংকটও সৃষ্টি করা হতে পারে। এ সবই ওই বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি।
ঈদ একটি উৎসব। এই উৎসবের আনন্দ যেন মাটি হয়ে না যায়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ঈদের সময় বাজার স্থিতিশীল রাখতে হবে। বাজার যেন সাধারণ মানুষের ঈদের আনন্দকে বিষাদময় করে না তোলে।

No comments

Powered by Blogger.