ওষুধ শিল্প-জীবনের প্রয়োজনেই নির্ভেজাল হোক

জীবন রক্ষাকারী ওষুধও মানুষের জীবন নষ্ট করে দিতে পারে। আর সেই কাজটিই চলছে দেশের অভ্যন্তরে; এবং সরকারের অনুমোদন নিয়েই। ওষুধ উৎপাদনকারী বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান সেই কাজের হোতা। দেশের ১৫১টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ২২টি মানসম্মত উপায়ে ওষুধ উৎপাদন করছে। বাকি ১২৯টিই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়।


এর মধ্যে ৬২টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে ক্ষতিকর ওষুধ প্রস্তুতকারী হিসেবে। নিঃসন্দেহে এই ৬২টি প্রতিষ্ঠান গণশত্রু হিসেবেও গণ্য হতে পারে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একটি প্রতিবেদন থেকে অত্যন্ত ভয়ংকর এই চিত্র পাওয়া গেছে। তারা মন্তব্য করেছে, নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ দেশে যেকোনো সময় মারাত্মক দুরবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, যে ৬২টি প্রতিষ্ঠান নিয়মকানুন মেনে চলে না, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি সরকারিভাবে তাদের নাম প্রকাশ করাও জরুরি। তা না হলে মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানের ওষুধ ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে। কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হলে কিছু সময় প্রয়োজন। তেমনি কিছু নিয়মকানুনও পালন করতে হয়। এসব প্রতিষ্ঠান যে কখনো কখনো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়, সেই প্রমাণও আমাদের সামনে আছে। কয়েক বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি ওষুধ কম্পানি ভেজাল লিকুইড প্যারাসিটামল তৈরি করে বাজারে ছাড়ার পর সেই ওষুধ খেয়ে ২৪ শিশুর কিডনি বিকল হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনা যে আমাদের কেমন কাঁপন ধরিয়েছিল, তা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি। বাংলাদেশের ওষুধ বিশ্ববাজারে প্রবেশ করেছে। দেশের সুনামও হয়েছে এই সূত্রে। সুতরাং ওষুধ শিল্পকে ভেজালমুক্ত করার জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হলেও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য তা উপকারই বয়ে আনবে। এতগুলো প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিকর উৎপাদনপ্রক্রিয়া চালিয়ে আসার পরও সরকারি নজরদারির আওতায় আসছে না কেন, সেই দিকটিও তলিয়ে দেখা উচিত। এ ক্ষেত্রে জনবলের অভাবকে দায়ী করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে বলে মনে হয় না। কারণ কৃত অপরাধের জন্য কোনো কারখানারই এ পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ করে দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। তাই স্পষ্টত মনে করার কারণ রয়েছে, ওষুধ প্রশাসন তাদের কাজের ক্ষেত্রে আন্তরিক নয় কিংবা তারা কর্তব্যে অবহেলা করেছে। কারণ নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের অনুমোদন বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। তবে কারণগুলো যা-ই হোক, ক্ষতিকর ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অতি সত্বর বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ নিম্নমানের কিংবা ক্ষতিকর ওষুধ বাজারে আনতে না পারে।

No comments

Powered by Blogger.